কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
কোনও কারণ না দেখিয়ে ছাঁটাই করার পরে কর্মীদের ফেরানো নিয়ে আদালতের নির্দেশে এ বার অস্বস্তিতে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বা এনবিএসটিসি।
ওই মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে নিগম কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলেও সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আবেদনের কোনও যৌক্তিকতা নেই বলে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেওয়ায় রাজ্য সরকারের কাছে নতুন করে আবেদন জানানোর রাস্তা কার্যত বন্ধ।
সর্বোচ্চ আদালতে মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে শ্রমিকরা নিগমের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের রায় উপেক্ষা করার অভিযোগে ফের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কর্মীদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে খবর। যার অর্থ, শ্রমিকেরা শুধু চাকরিই ফেরত পাবেন না, ২০১২ সালে ছাঁটাইয়ের পর থেকে যত বকেয়া টাকা, তাও ফেরত পাবেন। একই সঙ্গে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নিগমের কর্তাদের আদালতে হাজিরা দিয়ে এ সম্পর্কে তথ্য দিতে বলেছে। সূত্রের খবর, বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার হয়ে ওই নিগমে দু’দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছিলেন ৩৫ জন কর্মী। অভিযোগ, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কোনও কারণ না দেখিয়ে ২০১১ সালে ওই কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে শ্রমিকদের পক্ষে রায় দেয় কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম ও বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চ। এর আগে শিল্প ট্রাইব্যুনাল এবং সিঙ্গল বেঞ্চের রায় অপরিবর্তিত রেখে তাঁরা জানিয়েছেন, নিগম ওই শ্রমিকদের দায় এড়াতে পারে না। ঠিকা শ্রমিকদের নিগমের নিযুক্ত কর্মী হিসাবে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল শিল্প ট্রাইব্যুনাল।
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর ১৪টি সংস্থার মাধ্যমে ওই সব কর্মী নিগমের বিভিন্ন ডিপোয় ২০ বছর ধরে কাজ করছিলেন। সরকারি পরিবহণ নিগমের স্থায়ী কর্মীরা যে সব কাজ করেন, তার অনেক কিছুই চুক্তিতে নিযুক্ত কর্মীদের দিয়ে করানো হত। ঠিকা কর্মীদের সচিত্র পরিচয়পত্র দিয়েছিল নিগম। অভিযোগ, নামমাত্র বেতনে ওই সব কর্মীদের কাজ করানো হচ্ছে জেনে ২০১০ সালে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেয় অর্থ দফতর। পরে অনুসন্ধানে দেখা যায় নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থাগুলির বেশির ভাগই অবৈধ।
উল্লেখ্য, রাজ্যে পালাবদলের আগে ২০১১-র জানুয়ারিতে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডি বি লেপচার সভাপতিত্বে বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, সংস্থাকে না জানিয়ে ঠিকাদার সংস্থা কাউকে ছাঁটাই করতে পারবে না। কারও ক্ষেত্রে তেমন ঘটলে সেই কর্মী নিগমের অধীনে থেকে অন্য ঠিকাদার সংস্থার আওতায় না আসা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন। ২০১২-র ১৬ ফেব্রুয়ারি নিগম আচমকা নির্দেশ জারি করে ওই কর্মীদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয়। শিল্প ট্রাইবুনালে মামলা করেন কর্মীরা। অভিযোগ, প্রায় দু’বছর মামলা চলাকালীন বার বার তলব করা সত্ত্বেও নিগমের কেউ হাজিরা দেননি। ২০১৪-র জুলাইয়ে ট্রাইব্যুনাল ওই কর্মীদের পক্ষে রায় দেয়। সেই রায়ের বিরোধিতা করে হাই কোর্টে আবেদন জানায় নিগম। শিল্প ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখে হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। নিগম ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েও হেরে যায়। উচ্চতর আদালতের যাওয়ার নির্ধারিত ৯০ দিন পার করে ২০২ দিন পরে এ নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যায় নিগম। গত, অগস্টে ওই আবেদনই খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
সম্প্রতি শ্রমিকেরা আদালতের রায় অবমাননার দায়ে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হলে নিগম বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের নতুন ভাবে ঠিকাকর্মী হিসাবে নিয়োগের প্রস্তাব দেয়। যার অর্থ ওই কর্মীদের বকেয়া দিতে রাজি হয়নি নিগম। আদালত অবশ্য ওই প্রস্তাব খারিজ করে বলে জানিয়েছেন মামলাকারীদের আইনজীবী বাণীব্রত রায়। নিগমের এক আধিকারিক জানান, আদালতের নির্দেশে পদক্ষেপ করার আগে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে ‘সংগ্রামী শ্রমিক ঐক্য’ ওই ঠিকা শ্রমিকদের পাশে ছিল। ওই সংগঠনের সম্পাদিকা বর্ণালী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই জয় ঐতিহাসিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy