দুর্ভোগ: বৃষ্টিতে জলমগ্ন ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বর। জল পেরিয়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীকে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
জল এখনও নামেনি বহু এলাকায়। তার উপর মঙ্গলবার রাত থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। কোথাও কোথাও নদীবাঁধে ধস নেমেছে। ভেঙেছে কিছু মাটির বাড়ি। ক্ষতির ধাক্কা কী ভাবে সামলে উঠবেন, তা নিয়ে চিন্তিত চাষিরা। ঝড়বৃষ্টিতে দেওয়াল চাপা পড়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। কাঁথিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক তরুণ এবং ভগবানপুরে দেওয়াল চাপা পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার জি প্লটে গোয়াল ভেঙে মারা গিয়েছে ৪টি গরু।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল-সহ জেলা জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতেও। তার জেরে বুধবার সকাল থেকে শিলাবতী নদীর জল ফের বাড়তে শুরু করে। গত কয়েকদিনে ঘাটালে জলমগ্ন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, বুধবার থেকে কোথাও কোথাও ফের জল বাড়তে শুরু করেছে।
সবংয়ে প্রায় ১০টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডেবরা, কেশপুর, মেদিনীপুর গ্রামীণেও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও বহু বাঁধে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে টানা বৃষ্টিতে। জেলা জুড়ে ৭১টি বোট নামানো হয়েছে উদ্ধার এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছনোর কাজে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। কংসাবতী, সুবর্ণরেখা, কেলেঘাই, কপালেশ্বরী নদীর জলস্তর বাড়ছে। খড়্গপুরে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গিয়েছে। স্টেশন চত্বরও জলমগ্ন। জলের তলায় চলে গিয়েছে সাবওয়ে, রেললাইন।
কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, ভগবানপুর, এগরা, চণ্ডীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। সব থেকে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে ভগবানপুর ১ ও ২ ব্লক। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ৭৩.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারী বৃষ্টির জেরে ময়না ব্লকে সাবস্টেশন ফের জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বুধবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে দফতর।
কাঁসাই ও চণ্ডীয়া নদীর জলস্তরও ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁশকুড়া শহরে নামানো হয়েছে নৌকো। শিল্পশহর হলদিয়ায় বেশ কিছু জায়গায় জল জমেছে। দিঘায় ঝোড়ো হাওয়া বইছে সারাদিন। গত ২৪ ঘণ্টায় দিঘায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে কোনও জলোচ্ছ্বাস হয়নি। ভাঙেনি সমুদ্র বাঁধও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, সাগর, পাথরপ্রতিমা, ক্যানিং ১, ২, ভাঙড়-২ সহ জেলার ১০টি ব্লক এবং বারুইপুর, রাজপুর-সোনারপুর দু’টি পুরসভা এলাকায় টানা বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ৪৫,৮২৩ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ১৫৩টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। জেলায় এখনও পর্যন্ত ৯৬টি মাটির বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান জলের তলায়। দেড় লক্ষের বেশি চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রশাসনের দাবি। ক্ষতি হয়েছে আনাজ, মাছ চাষেও।
ডায়মন্ড হারবার-সহ বেশ কিছু এলাকায় নদীবাঁধে ধস নেমেছে। মঙ্গল-বুধবারের বৃষ্টিতে ক্যানিং ২ ব্লকের সারেঙ্গাবাদ, দেউলি ১, ২ ব্লক এলাকায নতুন করে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নদীবাঁধে ভাঙন প্রসঙ্গে সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘টানা বৃষ্টির জেরে ঘোড়ামারা ও মৌসুনির জি প্লটে কয়েকটি স্পটে নদীবাঁধে ধস নেমেছে। বৃষ্টি কমলে সেচ দফতর থেকে তা সারানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘যদি বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ে, সমস্যা তৈরি হতে পারে।’’ বিকেলে ঘোড়ামারায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য টর্নেডোর মতো ঝড় হয়েছে। ভেঙেছে কিছু ঘরবাড়ি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy