অধীর রঞ্জন চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে কাকভোরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোপন বৈঠক ঘিরে জলঘোলা শুরু হল বঙ্গ রাজনীতিতে। ফের বিভ্রান্তি তৈরি হল বাংলায় কংগ্রেসের অন্দরেও। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য ফের স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, এ রাজ্যে তাঁদের কৌশলে কোনও বদল হচ্ছে না। সেই সঙ্গেই লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা অধীরের বক্তব্য, সংসদের স্বাধিকার কমিটির কাছে তিনি কোনও ভাবেই ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেননি।
মুম্বইয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র তৃতীয় বৈঠক শুরু হওয়ার আগের দিন দিল্লিতে রাহুলের কাছে গিয়ে দেখা করে এসেছেন অভিষেক। মুম্বইয়ের বৈঠক চলবে আজ, শুক্রবার পর্যন্ত। আর আজই ধূপগুড়িতে বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের সমর্থনে যৌথ সভা করতে যাচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর। প্রদেশ সভাপতির কথায়, ‘‘বাংলায় আমাদের লড়াই বিজেপি ও তৃণমূল, দু’দলের বিরুদ্ধেই। সেই পথ থেকে সরে আসার কথা কেউ আমাদের বলেনি। ধূপগুড়িতে সেই লক্ষ্যেই সভা হবে।’’
লোকসভার বিগত অধিবেশনে অধীরকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছিলেন স্পিকার। স্বাধিকার কমিটির বৈঠকে অধীরের বক্তব্য শোনার পরে সেই সাসপেনশন প্রত্যাহার হয়েছে। তবে বৈঠকে তিনি ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেননি বলে জানিয়েথেন অধীর। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমি কখনওই ভুল স্বীকার করিনি। কারণ, সংসদে আমি ভুল বলিনি। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি দুঃখপ্রকাশ করেছি, তা হলে জনজীবন থেকে অবসর নেব!’’ ইচ্ছা না থাকলেও জীবন বিমা বা ওই ধরনের পরিষেবার প্রতিনিধিকে অনেক সময় মানুষ যেমন সময় দিয়ে থাকেন, রাহুল-অভিষেক বৈঠকেও সেই ধরনের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রদেশ সভাপতি।
বিজেপি অবশ্য ফায়দা তুলতে আসরে নেমে পড়েছে। ধূপগুড়ির প্রচারে গিয়েই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘অধীরবাবুকে দেখে খারাপ লাগে! এত বড় নেতা, একঘরে হয়ে গিয়েছেন। চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের বৈঠক হয়েছে। এক জন ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ মামলায় জামিনে আছেন। আর এক কিছু দিন পরে ঢুকবেন। তখন জামিনের জন্য ছোটাছুটি করতে হবে। তাই পরামর্শ করছেন!’’ ধূপগুড়িতেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, ‘‘বিরোধী জোটে সকলেই রাষ্ট্র-বিরোধী। এদের তিনটে পরিকল্পনা— দুর্নীতি, পরিবারবাদ আর তোষণ। চুপি চুপি দেখা করতে গিয়ে এখন সেটা প্রকাশ্যে চলে এল! এক জনের জেলে যাওয়ার কথা, যে জামিন নিয়ে এখন বাইরে আছে, আর এক জন জেলে যাবে। তার কাছেই জানতে গিয়েছিল জেলের জীবন সম্পর্কে!’’ দিল্লিতে ‘ভাইপো আর যুবরাজের সেটিং’ হয়ে থাকলে ধূপগুড়িতে অধীর-সেলিম সভা করে কী করবেন, সেই খোঁচাও দিয়েছেন শুভেন্দু। আবার প্রদেশ কংগ্রেসের টিভি প্যানেল থেকে সদ্য বাদ পড়া কৌস্তভ বাগচী ফের মন্তব্য করেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো অভ্যাস বিপদে পড়লেই সনিয়া গান্ধীর হাতে-পায়ে ধরে নেওয়া। ভাইপোও তা-ই করছেন। সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ— এই কথাটা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, তত মঙ্গল!’’
রাহুল-অভিষেক বৈঠক নিয়ে প্রশ্নে এ দিন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ব্রাত্য বসুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অভিষেক এক জন সর্বভারতীয় নেতা। আর এক সর্বভারতীয় নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। এটা তো বিরোধী জোটের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত পদক্ষেপ। আগামী দিনে এই ধরনের বৈঠক হবে। এই ধরনের পদক্ষেপে বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় স্তরে কংগ্রেস ও তৃণমূল একসঙ্গে আছে। রাজ্য স্তরে থাকবে কি না, তা দলনেত্রী (মমতা) সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy