Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Congress

Congress: গোয়ায় ‘নির্বাচনী পর্যটন’ নিয়ে কটাক্ষ, তৃণমূলকে ‘আত্মসমীক্ষা’ করতে বলল কংগ্রেস

তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে ‘আত্মসমীক্ষা’ করার ডাক দিয়ে কংগ্রেসের ইঙ্গিত, তৃণমূল ‘ছোট’ বিরোধী দল বলে সিবিআই-ইডি-র সামনে ভয় পেয়ে থাকতে পারে।

সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে রাহুল। নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সদর দফতরে। ছবি: পিটিআই।

সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে রাহুল। নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সদর দফতরে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩৪
Share: Save:

গোয়া, ত্রিপুরার মতো রাজ্যে লড়তে গিয়ে তৃণমূল আসলে বিজেপিরই হাত শক্ত করে দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন ছুড়ল সনিয়া-রাহুল গাঁধীর কংগ্রেস। এ বিষয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে ‘আত্মসমীক্ষা’ করার ডাক দিয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের ইঙ্গিত, তৃণমূল ‘ছোট’ বিরোধী দল বলে সিবিআই-ইডি-র সামনে ভয় পেয়ে থাকতে পারে। তবে ‘গাঁধীগিরি’র ঢঙে কংগ্রেসের অবস্থান, সিবিআই-ইডি-কে কাজে লাগানোর বিরোধিতায় তৃণমূলের পাশেই থাকবে কংগ্রেস। তা সে তৃণমূল যতই কংগ্রেসকে নিশানা করুক।

তৃণমূল নেত্রীর গোয়া সফরের দু’দিন আগে আজ তৃণমূলের সেখানে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্তকে ‘নির্বাচনী পর্যটন’ বলেও কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে কংগ্রেস সূত্রের খবর, ৩০ অক্টোবর মমতা তাঁর গোয়া সফর সেরে রাজ্য ছাড়ার আগেই এ দফায় প্রথম বারের জন্য ভোট প্রচার করতে সেখানে পৌঁছবেন রাহুল গাঁধী।

যে সব রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই, সেখানেই তৃণমূল গিয়ে তাঁদের দল ভাঙানোর চেষ্টা করছে বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এত দিন সরব হলেও এ নিয়ে চুপ ছিল দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু আজ দিল্লিতে বসেই বিরোধী রাজনীতিতে সনিয়া গাঁধী-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের ঢিলেমি ও গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। তার পরেই এআইসিসি-র মঞ্চ থেকে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা মন্তব্য করেন, ‘‘সিবিআই-ইডির ডাক পড়ায় ছোট বিরোধী দলগুলি আপস করে নিচ্ছে। তাদের দোষ দেওয়া যায় না। সকলের সমান সাহস নেই। কিন্তু বিরোধী নেতানেত্রীদের নিজেদের বিবেক থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’

আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘গত সংসদীয় অধিবেশনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে এসে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী-সহ বেশ কিছু বিরোধী দলনেতার সঙ্গে দেখা করেন। মমতা নিজে সনিয়াকে অনুরোধ করেছিলেন, সমস্ত সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য। কংগ্রেস সভানেত্রীকে মমতা একটি সাধারণ রণনীতি তৈরি করতেও বলেছিলেন, যাতে দেশ জুড়ে বিজেপি-বিরোধী প্রচার শুরু করে দেওয়া

যায়।’’ সুখেন্দুর বক্তব্য, কংগ্রেস নিজেদের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট সামলাতে ব্যস্ত। ছ’মাস কেটে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনে কংগ্রেস সাড়া দেয়নি। কবে কোন দল জোট গড়ার জন্য এগিয়ে আসবে, সে জন্য তৃণমূল চুপ করে বসে থাকতে নারাজ। তাই সময় নষ্ট না করে পশ্চিমবঙ্গের বাইরের রাজ্যগুলিতে দলের সম্প্রসারণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে তৃণমূল আসলে বিজেপিকেই শক্তিশালী করছে কি না, বিজেপিকে ‘কভার ফায়ার’ দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। একই সঙ্গে তৃণমূলকে লক্ষ্য করে তাঁর প্রশ্ন, পাঁচ বছর আগেও তৃণমূল নির্বাচনে লড়েছিল। তার পরে গত পাঁচ বছর কোথায় চলে গিয়েছিলেন? এখন আবার কেন গোয়ায় ফিরে গেলেন? সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘নির্বাচন কোনও পর্যটন নয় যে, চার-পাঁচ মাসের জন্য গোয়া গেলেন। তৃণমূল-সহ সকলের অধিকার রয়েছে নির্বাচনে লড়াইয়ের। কিন্তু তাঁদের পুরনো ইতিহাস নিয়ে আত্মসমীক্ষা করতে হবে। তাঁরা কী কারণে লড়ছেন, কাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন, কীসের জন্য লড়ছেন, ভাবতে হবে। বিবেক থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’

আজ দিল্লিতে তৃণমূল নেতৃত্বকে প্রশ্ন করা হয়, গোয়া-সহ বিভিন্ন রাজ্যে তৃণমূল যে ভাবে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসের সঙ্গেও লড়ছে, তাতে বিরোধী ঐক্যের ধারণাটাই কি ভেস্তে যাচ্ছে না? আখেরে বিজেপিই কি লাভবান হচ্ছে না?

সুখেন্দুশেখরের বক্তব্য, “মমতা-সনিয়ার বৈঠকের পরে আমরা ছ’মাস অপেক্ষা করেছি। কেউ তো অনির্দিষ্ট কালের জন্য বসে থাকতে পারে না। আগামী বছর বেশ কিছু রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। আমরাও চাইছি গোয়া, ত্রিপুরা, অসম, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে নিজেদের সংগঠন বাড়াতে। কংগ্রেসের উপর নির্ভরশীল না থেকে আমরা বিভিন্ন সমমনস্ক দল এবং সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করছি।”

কংগ্রেসের নেতাদের ভাঙিয়ে তৃণমূলে টানার অভিযোগের জবাবে সুখেন্দু বলেন, ‘‘সবাই নিজেদের মতো দল বেছে নিতে পারে বা বদল করতে পারে। কানহাইয়া কুমার সিপিআই থেকে কংগ্রেসে গেলেন। এটা তাঁর সিদ্ধান্ত। একই ভাবে বিজেপি-সহ বিভিন্ন দল থেকে অনেকে আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন।” কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুস্মিতা দেবের কথায়, ‘‘প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে সংগঠন বাড়াতে চায়। এর মধ্যে অন্যায় কী। কংগ্রেস তো পশ্চিমবঙ্গে হীনবল হওয়া সত্ত্বেও লড়াই করেছে। আমরা তো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না।’’

কিন্তু কংগ্রেসের ইঙ্গিত, তৃণমূল আসলে সিবিআই-ইডি-কে ভয় পাচ্ছে। পেগাসাস-কাণ্ডে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাহুল গাঁধীর পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনেও আড়ি পাতার অভিযোগ ওঠার পরে কংগ্রেস অভিষেকের ছবি দিয়ে এর নিন্দা করেছিল। কিন্তু অভিষেক প্রথম বার দিল্লিতে ইডি-র মুখোমুখি হওয়ার পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়েই কংগ্রেসকে নিশানা করেন। তার পর থেকেই অভিষেক বলছেন, তৃণমূল বিজেপিকে হারালেও কংগ্রেস বিজেপির কাছে হেরেই চলেছে। কাজেই কংগ্রেসকে ভোট দিলে তা নষ্ট করা হবে।

অধীর এত দিন অভিযোগ তুলছিলেন, সিবিআই-ইডি থেকে বাঁচতেই কংগ্রেসের ক্ষতি করে বিজেপিকে মদত দিচ্ছে তৃণমূল। আজ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সিবিআই-ইডির ডাক পড়লে ছোট বিরোধী দলগুলি আপস করে নিচ্ছে। তাদের দোষ দিই না। সকলের সমান সাহস নেই। তবে তারা আমাদের বিরোধিতা করলেও আমি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে বলছি, আমরা তাদের সাহায্য করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Congress TMC Goa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE