রাজ্যের সব স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে সংবিধানের পাঠ অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলল কংগ্রেস। সংবিধান-প্রণেতা বি আর অম্বেডকরের জন্মদিবসে এই দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে চিঠি দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। এই দিনেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ধর্ম পালনের অধিকারের প্রশ্নে সংবিধান না-মানার অভিযোগও ফের তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সরব হয়েছেন বিধানসভার ভিতরের পরিবেশ নিয়েও। পাল্টা সরব হয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সমাজমাধ্যমে অম্বেডকরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অম্বেডকর-জয়ন্তী উপলক্ষে সোমবার প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবন এবং ময়দানে অম্বেডকর মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। কংগ্রেসের বক্তব্য, দেশের সংবিধানের মূল মন্ত্র বহুত্ববাদ এখন আক্রান্ত। তাই সংবিধান ও তার খসড়া রচনার ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করতে সব স্কুলে (যেখানে যে ভাষায় পঠন-পাঠন হয়, সেখানে তাতেই) সংবিধান পাঠের দাবি জানিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর। তাঁর বক্তব্য, “ধর্মগ্রন্থগুলির নির্যাসকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করার বীজমন্ত্র লেখা আছে সংবিধানে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে সংবিধানের পাঠ বাধ্যতামূলক করা হোক, যাতে পড়ুয়ারা দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠে। প্রগতিশীল পশ্চিমবঙ্গ থেকেই এই কাজ শুরু হোক।” রাজ্য সরকারকে দেওয়া প্রস্তাবের প্রতিলিপি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর কাছেও পাঠিয়েছেন শুভঙ্কর।

বি আর অম্বেডকরের জন্মদিবস পালন। —নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভায় অম্বেডকরের ছবিতে এবং রেড রোডে তাঁর মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তার পরেই রাজ্য প্রশাসনকে নিশানা করে শুভেন্দু বলেছেন, “সংবিধান সবাইকে নিজ ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু এখানে বিভিন্ন পুজো, রামনবমী পালন করতে আদালতে যেতে হয়। সরকার বাধা দেয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, রাজ্যপালকে সব তথ্য না দিয়ে রাজ্য এবং বিধানসভার অভ্যন্তরে স্পিকার সংবিধানকে অপমান করছেন। সংসদে পাশ হওয়া এবং রাষ্ট্রপতির সই করা সংশোধিত ওয়াকফ আইন ‘মানেন না’, এটা মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন না বলেও দাবি করেছেন শুভেন্দু।
বিধানসভায় অম্বেডকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্পিকার-সহ অন্যেরা। বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্পিকার পাল্টা বলেছেন, “অবান্তর কথা! পরিষদীয় রীতিনীতি অগ্রাহ্য করে বিরোধীরা বিধানসভার ভিতরে যা করেন, তাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তা করি না। পরিষদীয় ব্যবস্থা রক্ষার দায়িত্ব শাসক-বিরোধী উভয়েরই।” এর সঙ্গেই সাম্প্রতিক অশান্তির প্রসঙ্গে বিমানের বক্তব্য, “এর বাস্তব পরিণতি সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বলেই শুভেন্দুরা এই নিয়ে খেলা করছেন।”
অম্বেডকরের জন্মদিবসে সিপিএমের ছাত্র ও যুব নেতৃত্বের আহ্বান, নিয়োগ-দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী ১৭ এপ্রিল শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র ডাকা স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) দফতর অভিযানে তরুণ প্রজন্মের সকলে যোগ দিন। দীনেশ মজুমদার ভবনে ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্ত বলেছেন, “সংবিধানের প্রতিটা ইট বহুত্ববাদের কথা বলে। কিন্তু কেন্দ্র এক দেশ এক ভাবনা ছড়াচ্ছে। তাই অম্বেডকরের ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন বামপন্থী ছাত্র-যুবরা। রাজ্যের মানুষের অধিকারও আক্রান্ত।” চাকরি বাতিলের ঘটনার জন্য সরকার ও দুর্নীতিকেই দায়ী করেছেন কলতান। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে-রও বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। শিক্ষকদের এসএসসি অভিযানে আমরাও শামিল হব। সরকারকে জবাব দিতে হবে, কেন ওএমআর শিট প্রকাশ্যে আনা হল না, তা আদালতে পেশ করা হল না?”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)