ফাইল চিত্র।
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা-সহ নানা সমস্যার সুরাহার লক্ষ্যেই নবম থেকে দ্বাদশ, চার শ্রেণির ক্লাসের জন্য দিন ভাগাভাগি করে দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু সেই ব্যবস্থার সুফল নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠছে এক দিনের মধ্যেই। সব মিলিয়ে দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে স্কুলের চারটি ক্লাস চালু হলেও সোমবার মালুম হল, কোথায় যেন তাল কেটে গিয়েছে।
অনেকের প্রশ্ন, দশম ও দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষা সামনেই। দিন ভাগের ফলে ওই দুই শ্রেণির পড়ুয়ারা সপ্তাহে মাত্র তিন দিন স্কুল করার সুযোগ পেলে তাদের পাঠ্যক্রম শেষ হবে কি? প্রশ্ন উঠছে, দিন বিভাজন করে ক্লাস হলে পড়ুয়াদের হাজিরা আরও কমে যাবে না তো? শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্কুলের সময় বদল, চার শ্রেণির দিন ভাগ করে পর্ষদ রবিবার সন্ধ্যায় যে-বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তার কথা অনেকে জানতে না-পেরে নবম থেকে দ্বাদশের সব ছাত্রছাত্রী এ দিন স্কুলে পৌঁছে যায়। তাদের কেউ কেউ বাড়ি ফিরে গিয়েছে, অনেকে ক্লাস করেছে।
পর্ষদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সোম, বুধ ও শুক্রবার দশম ও দ্বাদশের পড়ুয়ারা স্কুলে আসবে এবং নবম ও একাদশের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করবে মঙ্গল-বৃহস্পতিবার। খাস কলকাতার হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, বিজ্ঞপ্তির কথা জানতে না-পেরে নবম ও একাদশেরও অনেক পড়ুয়া এ দিন হাজির হয়েছিল, যদিও তাদের ক্লাস ছিল না। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘যারা স্কুলে চলে এসেছিল, তাদের ফেরাইনি। কারণ, অনেক পড়ুয়া আসে অভিভাবকের সঙ্গে। ক্লাস না-করে ফিরে যেতে হলে তারা সেই সময়ে কী ভাবে বাড়ি যাবে? তাই ওরা আজ সারা দিনই ক্লাস করেছে।’’
কী বলছে পড়ুয়ারা? অর্কপ্রভ চক্রবর্তী নামে হেয়ার স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া বলল, ‘‘এ ভাবে দিন ভাগ না-করে স্কুলের সময়সীমা তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা করে রোজ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলে অনেক ভাল হত। পাঠ্যক্রম শেষ করার জন্য এখন রোজ স্কুলে আসা জরুরি।’’
নামখানা হরিপুর গদাধর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রনীল প্রধান জানান, চার দিন ক্লাস করার পরে হঠাৎ যেন তাল কেটে গেল। তিনি বলেন, ‘‘নবম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়াদের হাজিরা যাতে একটু একটু করে বাড়ে, সেই চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। পড়ুয়াদের স্কুলে আসায় উৎসাহ দিতে ক্রীড়া শিক্ষককে বলেছিলাম, খেলার পিরিয়ডে কিছু যোগব্যায়াম শেখানো হোক। করোনা বিধি মেনে কিছু খেলার ব্যবস্থা হোক। আমাদের স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা যা, তাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করতেও অসুবিধা ছিল না। এখন আবার নতুন রুটিন করতে হবে।’’ ইন্দ্রনীলবাবুর বক্তব্য, শনিবার পঠনপাঠন বন্ধ করে অভিভাবকদের কাছ থেকে ‘ফিডব্যাক’ নেওয়ার নামে সময়ের অপচয় হতে পারে। সব শিক্ষক নয়, কিছু শিক্ষক থাকলেই ফিডব্যাক নেওয়ার কাজটা হয়ে যায়। বরং শনিবার অর্ধদিবস পঠনপাঠন চালানো হলেই উপকৃত হত পড়ুয়ারা।
হাওড়ার ডোমজুড়ের কেশবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস জানান, পাঠ্যক্রম শেষ না-হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই। তিনি বলেন, ‘‘অনেক স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়েও ক্লাস করানো হয়। তাঁরা সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন এসে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস করেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁদের আলাদা দিনে ওই দুই শ্রেণির ক্লাস নিতে হবে। ফলে সপ্তাহে পাঁচ দিন তাঁদের আসতে হতে পারে। সেই বাড়তি কাজের জন্য তাঁরা বেশি বেতনের দাবি জানালে স্কুল-কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়বেন।’’
উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ চাতরা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, ‘‘নবম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়ারা যে-ক’দিন আসবে না, সেই সব দিনে তাদের অনলাইন ক্লাস হতে পারে। কিন্তু সব পড়ুয়ার তো অনলাইন ক্লাস করার সুবিধা নেই। তাই তাদের সকলের পাঠ্যক্রম শেষ হবে কি না, আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy