বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বড় ভাবে দানা বাঁধছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সেই দ্বন্দ্বে এক জন প্রচ্ছন্ন শরিক মুকুল রায়ও। অভিযোগ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। সোমবার দিল্লিতে রাজ্য বিজেপির নির্বাচনী বৈঠকে সেই অভিযোগ একেবারে খোলাখুলি বেরিয়ে আসে। রাজ্যের এক সাংসদ অভিযোগ জানান, দলীয় নেতৃত্ব ‘কাজের লোকদের’ বসিয়ে রেখে নিজেদের পছন্দের লোকদের এগিয়ে দিচ্ছেন। পরিস্থিতি এত দূর গড়ায় যে, এক সময় রটে যায়, দিলীপ রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়তে চেয়েছেন। যদিও এর কোনওটি নিয়েই বিজেপির আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি। মঙ্গলবার রাতে দিলীপ বলেন, ‘‘সব বানানো গল্প। আর কত গল্প শুনতে হবে কে জানে?’’
আগামী বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি নিতে গত বুধবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দিল্লিতে রাজ্য বিজেপির বৈঠক হয়। দলীয় সূত্রের খবর, সোমবার কলকাতা, দমদম এবং ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা আসনগুলিতে সাংগঠনিক শক্তি বিচার চলাকালীন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ দিলীপ শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে নিশানা করে তিনি বলেন, কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে তিন জন নেতা দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। দলে ‘কাজের লোকদের’ নিষ্ক্রিয় করে রেখে ‘কাছের লোকেদের’ বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে ওই তিন নেতার আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়ে। এতে আখেরে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। এমন চললে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে হারানোর স্বপ্ন অধরাই থাকবে। নাম না করা হলেও কার্যত দিলীপকেও আক্রমণ করা হয় বৈঠকে। দলীয় সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে আর এক নেতা লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, সংগঠনের যে ছবি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে তুলে ধরা হয়, তা অর্ধসত্য। খাতায়-কলমে দলের বুথ কর্মী থাকলেও ভোটের দিন বুথে পোলিং এজেন্ট হওয়ার লোক নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা প্রতিপক্ষের ভয় বা প্রলোভনের সামনে অনড় থাকার অনুপযুক্ত। দলের একটি সূত্রের আরও দাবি, ব্যক্তিগত মামলা থাকায় কোনও কোনও নেতা রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলছেন, বৈঠকে এমন অভিযোগও ওঠে।
বিজেপি সূত্রের খবর, ওই সব অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরেই দলের একাংশের মধ্যে জমা ছিল। এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের কাছেও তা জানানো হয়েছে। সোমবারের বৈঠকে দিলীপ, সুব্রত, রাজ্য বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ, কেন্দ্রীয় সহ পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননের সামনেই সে সব বেরিয়ে পড়ে। ব্যারাকপুর নিয়ে আলোচনার সময় না থাকলেও তার পরে বৈঠকে যোগ দেন রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও।
আরও পড়ুন: পরিস্থিতি অনুকূল হলে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে অল্টারনেটিভ দিনে ক্লাস: মমতা
তাৎপর্যপূর্ণ হল, যে অর্জুন দলের একাংশের ক্ষোভকে প্রকাশ করেছেন বলে দলীয় সূত্রের দাবি, তিনি বিজেপিতে যোগ দেন মুকুলের হাত ধরে। বৈঠকে ছিলেন মুকুল শিবিরের আর এক নেতা সব্যসাচী দত্তও। ছ’দিনের বৈঠকের প্রথম দিন বুধবার মুকুলও বৈঠকে যোগ দেন। দলীয় সূত্রের খবর, সে দিন তাঁর সঙ্গেও এক নেতার মতান্তর হয় বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিপুল জয়ের সম্ভাব্য হিসেব নিয়ে। পর দিন দিল্লিতে থেকেও বৈঠক এড়ান মুকুল। চোখের জরুরি চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে গত শুক্রবার কলকাতায় ফেরেন। দলীয় সূত্রের দাবি, শাহের সঙ্গে বৈঠকের জন্য আগামী শুক্রবার মুকুলকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আজ পূর্ণ লকডাউন, ২ দিন কমিয়ে অগস্টের ৭ দিনও
এই বিরোধের যাঁরা মূল চরিত্র, তাঁরা কেউ প্রকাশ্যে এ কথা স্বীকার করেননি। সুব্রত বলেন, ‘‘চার জনের বৈঠকের খবর হাত-পা-ডানা গজিয়ে বাইরে চলে গেল! আমাদের দলে তৃণমূলের মতো ঝগড়া হয় না।’’ অর্জুন বলেন, ‘‘আমি দেড় বছর বিজেপিতে এসেছি। আমার ঘাড়ে ক’টা মাথা এ সব বলব?’’ আর দিলীপ এই সব ‘রটনার’ জন্য তৃণমূল শিবিরকে দুষে বলেন, ‘‘আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy