আরজি করে সামনে মেয়েদের রাত দখল। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বিচার চাই, প্রকৃত দোষীর শাস্তি চাই। এই দাবিতে এক দিকে আন্দোলন চলছে। কিন্তু এর অন্তরালে কি শুরু হয়ে গিয়েছে কোনও রাজনৈতিক ‘ঘুঁটি চালাচালি’? সময় যত গড়াচ্ছে, আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সর্বত্র চলা আন্দোলনকে ঘিরে ততই প্রশ্নটা জোরালো হচ্ছে। সঙ্গে ধন্দ, এর ফলে আসল দাবিটা চাপা পড়ে যাবে না তো!
সূত্রের দাবি, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দীর্ঘ দিন ধরেই রাজনীতির টানাপড়েন চলছে। সূত্রটির আরও দাবি, সেটা শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই লড়াই এখন উত্তপ্ত। জানা গিয়েছে, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিচালিত হয় এক বর্ষীয়ান ডাক্তারের গোষ্ঠীর অঙ্গুলিহেলনেই। যদিও ওই চিকিৎসক কখনওই সরকারি কোনও পদে ছিলেন না। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন তো বটেই, শাসক দলের সর্বোচ্চ স্তরের অতি ঘনিষ্ঠ ওই চিকিৎসক। অলিখিত সতর্কবার্তা স্বাস্থ্য বিভাগে: তাঁর কথা না শুনলে খাঁড়ার কোপই ভবিতব্য।
আর, এই জায়গাতেই বিবাদ। যা মানতে নারাজ শাসক দলেরই আর এক শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশেষ ক্ষমতাবান গোষ্ঠী তথা ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র ‘দাসত্ব’-র বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব শাসকবিরোধী সংগঠনগুলিও। তাই, সাম্প্রতিক কালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের নবীন প্রজন্মের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বিভিন্ন লড়াইতে শামিল হয়েছে ওই সংগঠনগুলিও। যদিও কম যায় না ‘দাসত্ব’ স্বীকার করা গোষ্ঠীও। অভিযোগ, তাঁরা এতটাই দাপুটে যে, তরুণী চিকিৎসকের দেহ মেলার পরে ওই সেমিনার রুমে বসেই আলোচনা করে স্থির করেছিলেন, বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে হবে। আর, সেই আলোচনায় তড়িঘড়ি হাজির হয়েছিলেন ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র ‘মেজকর্তা’ বলে পরিচিত এক প্রাক্তন স্বাস্থ্য প্রশাসকও। কিন্তু ঘটনা অন্য পথে চালিত করা যায়নি।
আরও অভিযোগ, আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে বাঁচাতে এর পরে আসরে নামেন ওই বিশেষ ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর প্রধান মাথা। শাসক দলের সর্বোচ্চ স্তরের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগে সেই কাজে তিনি সাফল্যও পান। যা বড়সড় ধাক্কা দেয় শাসক দলের অন্য গোষ্ঠী তো বটেই, বিরোধী সংগঠনগুলিকেও। আর সেই বিরোধী সংগঠনগুলির সূত্র ধরেই আসরে নেমে পড়ে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলিও। তাই, তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন-ধর্ষণের ঘটনায় ‘যথাযথ বিচার ও প্রকৃত দোষীদের শাস্তি’র দাবি তোলার ফাঁকেই, বিরোধীরা এখন রাজনৈতিক লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছেন। শাসক দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী (যাঁরা উত্তরবঙ্গ লবির বিরুদ্ধে)-র প্রতিবাদের ভাষা অবশ্য এটা নয়। বরং তাঁদের একটাই লক্ষ্য, ‘দাসত্ব’ মুক্ত ক্ষমতায়ন। তাতে পরোক্ষ ভাবে হলেও শামিল অন্যরাও।
রাজ্যের চিকিৎসক মহলের একাংশ, যাঁরা ডান-বাম কোনও গোষ্ঠীতেই সরাসরি যুক্ত নন, তাঁদের কথায়, ‘‘এমনটাই হয়তো হওয়ার ছিল। সবটাই ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সেটা যে এত মর্মান্তিক ঘটনা হবে, তা ভাবা যায় না।’’ তাঁরা আরও বলছেন, ‘‘তবে ‘দাসত্ব’ মুক্ত স্বচ্ছ স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রয়োজন রয়েছে, সেটাও ঠিক।’’ তাই, আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে পরোক্ষ ভাবে হলেও আন্দোলনের আঁচে ক্রমশ ‘হাওয়া’ দিচ্ছে সব পক্ষই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দাবার বোর্ডে রাজাকে কিস্তিমাত করাই আসল লক্ষ্য। শাসকঘনিষ্ঠ ডাক্তারদের একাংশ বলছে, ‘‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে অত্যাচার, অনিয়ম চলছে, তার শেষ হওয়া প্রয়োজন।’’
কিন্তু রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে বসা জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, ঘটনার প্রকৃত সত্য সামনে আনা হোক, প্রকৃত দোষীরা কঠিনতম শাস্তি পাক। সেখানে তাঁরা রাজনীতির রং লাগতে দিতে চান না। তা হলে? বর্ষীয়ান ডাক্তারদের পরামর্শ, আন্দোলনকারী ডাক্তারেরা যেন এই রাজনীতির বিষয়টিও খেয়াল রাখেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy