Advertisement
E-Paper

মন্ত্রী মনোজ ‘ঝুকেগা নহি’! কার্নিভালকাণ্ডের নেপথ্যে কি দু’বছর পুরনো ‘ক্ষোভ’ আর পাড়ারই মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব?

পার্কিং থেকে ‘তোলা’ নেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী ও পুরকর্মীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন মনোজ ও তাঁর অনুগামীরা।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:১৪
Share
Save

সামান্য পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে বিবাদের কারণেই এত কাণ্ড ঘটে গেল হাওড়ায়? শুধুমাত্র বেআইনি ভাবে টাকা তোলার অভিযোগকে কেন্দ্র করেই কি শাসকদল পরিচালিত পুরসভার কমিশনারের সঙ্গে প্রকাশ্য ‘হাতাহাতি’তে জড়িয়ে পড়লেন রাজ্যের মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি? তা-ও আবার ‘মধ্যস্থতা’ করতে যাওয়া আর এক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সামনে!

বুধবার রাতের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার হাওড়ার ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল চালু করার কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই অরূপের সামনে ফের বিবাদে জড়িয়ে পড়ে দুই যুযুধান পক্ষ— হাওড়া পুরসভা এবং মন্ত্রী মনোজের গোষ্ঠী। যা নিয়ে ঘরে-বাইরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জেলার রাজনৈতিক বৃত্তের একাংশের দাবি, পার্কিং নিয়ে অভিযোগ নিছকই অজুহাত! মনোজের এই রাগের বহিঃপ্রকাশের বীজ লুকিয়ে রয়েছে গত দু’বছরের নানা ঘটনায়। আর এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী অরূপ রায়। ঘটনাচক্রে, তিনিও জেলারই। অর্থাৎ, মনোজেরই পাড়ার!

পাল্টা অরূপের ঘনিষ্ঠমহলের বক্তব্য, মনোজ-গোষ্ঠীর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাঁর এক অনুগামীর কথায়, ‘‘দাদা নিজের কেন্দ্রেই থাকেন। উনিও মন্ত্রী। প্রশাসনিক এবং দলের প্রচুর কাজকর্ম থাকে তাঁর। দাদার এ সব ভাবার সময় নেই!’’

কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের ধাঁচে ধুমধাম করে হাওড়ার ডুমুরজলায় শুরু হয়েছিল ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল। প্রধান উদ্যোক্তা হাওড়া পুরসভা। ২২ ডিসেম্বর কার্নিভালের উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ১২ দিন ধরে চলার কথা কার্নিভ্যাল। কিন্তু পাঁচ দিনের মাথায়, অর্থাৎ বুধবার রাতে তাল কাটে। পার্কিং থেকে ‘তোলা’ নেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী ও পুরকর্মীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন মনোজের অনুগামীরা। ওই ঘটনার পর রাতেই কার্নিভ্যাল বন্ধ বলে ঘোষণা করে দেন সুজয়। বৃহস্পতিবার সেই ঘটনাতেই হস্তক্ষেপ করতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। মমতা কার্নিভ্যাল চালু করার নির্দেশ দেওয়ার পরেও এক প্রস্ত গন্ডগোল হয়। পরে অরূপের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মিটমাট হয়েছে। অন্তত প্রকাশ্যে তেমনই দাবি করেছে দু’পক্ষ। দলের অনেকের বক্তব্য, গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে সুজয়ের কিছু কাজকর্ম নিয়ে ‘ক্ষুব্ধ’ ছিলেন মনোজ। কার্নিভ্যালের ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকতে পারে।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মনোজকে শিবপুর থেকে প্রার্থী করে তৃণমূল। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে মন্ত্রীও হন তিনি। তাঁকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী করা হয়। আর ওই বছরই হাওড়ার পুর কমিশনার হন সুজয়। মনোজের অনুগামীদের দাবি, ভোটের পর থেকেই শিবপুরে নিজের মতো করে কাজ করেন পুর কমিশনার। বিধায়ককে কিছু জানানো হয় না। কোনও প্রকল্পের উদ্বোধনে বা কোনও সরকারি অনুষ্ঠানেও ডাকা হয় না মনোজকে। সুজয় এলাকায় এসে একক ভাবে প্রকল্পের ঘোষণা করে চলে যান! গত দু’বছর ধরে এমন চলে আসছে। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল মনোজের মনে। তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের একাংশের এ-ও দাবি যে, এর পিছনে হাওড়ার মধ্যর বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপের ‘মদত’ রয়েছে। কারণ, সুজয় তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত।

জেলার রাজনীতিতে অরূপ-মনোজ দ্বন্দ্বের কথা অবশ্য সর্বজনবিদিত। দলীয় সূত্রের দাবি, দুই মন্ত্রীর বিবাদের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানেও গিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে শিবপুরে একটি জমি নিয়ে বিবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অরূপ-মনোজের ‘তিক্ত’ সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। মনোজ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ ওঠায় ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছিলেন অরূপ। তার পরেই সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলায় দলের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গিয়েছিল মনোজকে। দলে তাঁকে ‘কোণঠাসা’ করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি নিজে থেকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য আসিনি। যে দিন দিদি বলবেন, আমি ছেড়ে চলে যাব।” দলীয় সূত্রের খবর, নাম না করলেও মনোজের আক্রমণের তির ছিল অরূপের দিকেই।

মনোজ-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, শিবপুরে নানা সময়ে মন্ত্রীকে ‘বিড়ম্বনা’য় ফেলার চেষ্টা হয়েছে। কার্নিভ্যালের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। এর আয়োজনে মনোজকে সামিল করা নিয়ে পুরসভার মধ্যে প্রথম থেকেই ‘অনীহা’ ছিল। কিন্তু তাঁর নিজের কেন্দ্রে বেআইনি ভাবে টাকার তোলার অভিযোগ ওঠায় স্থির থাকতে পারেননি মন্ত্রী! স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেলে হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের ষষ্ঠী-নারায়ণ পার্কে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন সেখানে ৪০-৫০ জন অনুগামী নিয়ে হাজির হন মনোজ। সরাসরি কয়েকটি পার্কিং স্লিপ দেখিয়ে অভিযোগ করেন, কার্নিভালে পুরসভার নাম করে ‘বেআইনি’ ভাবে পার্কিং-ফি আদায় করা হচ্ছে। স্টল থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এ সব ‘বেআইনি’ কাজ তিনি সহ্য করবেন না। ওই সময়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেটের সামনে আসেন পুর চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত সহকারী সৌরভ দত্ত। তিনি মন্ত্রীকে জানান, পুর কমিশন‌ারের নির্দেশেই পার্কিং-ফি এবং স্টলের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ‘বেআইনি’ কিছু হচ্ছে না। অভিযোগ, তাতে কর্ণপাত না-করে মন্ত্রীর সামনেই তাঁর অনুগামীরা সৌরভের চুলের মুঠি ধরে তাঁকে চড়, ঘুষি মারতে শুরু করেন। মনোজ অবশ্য সৌরভকে বাঁচানোরই চেষ্টা করেছিলেন।

যদিও পুরসভার পক্ষ থেকে সব অভিযোগই অস্বীকার করা হয়েছে। সুজয়ের ঘনিষ্ঠমহলের বক্তব্য, মনোজকে কার্নিভালের আয়োজনে সামিল না-করা নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা-ও সঠিক নয়। মন্ত্রী তথা বিধায়ক সর্বত্র নিজের ‘দাপট’ দেখান। তিনি চান, সব কিছু তাঁর নির্দেশেই হোক! বুধবার রাতের ঘটনার পর পুর কমিশনারকে সাংবাদিক বৈঠকও করতে দেওয়া হচ্ছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার পরেই রাতে কার্নিভ্যাল বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সুজয়। পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে মনোজও প্রশ্ন তোলেন, ‘‘পুরসভার চেয়ারপার্সন কে, যে তিনি নিজে কার্নিভ্যাল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন? উনি কি পুরমন্ত্রী বা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?’’

সেই বিবাদের জেরেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল ক্রিসমাস কার্নিভাল। শেষমেশ বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী আবার কার্নিভ্যাল চালু করার নির্দেশ দেন। দু’পক্ষকে মিটমাটও করে নিতে বলেন তিনি। দৌত্য করতে পাঠানো হয় অরূপ বিশ্বাসকে। কিন্তু সেখানেও বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন মনোজ-সুজয়। তাঁদের দু’জনের সঙ্গে কথা বলেন অরূপ বিশ্বাস। পরে তিনি বলেন, ‘‘মনোজ-সুজয় হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করুক। প্রত্যেক পরিবারেই সমস্যা থাকে। বসে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। মেলা নবীন-প্রবীণের মিলনক্ষেত্র।’’ তিনি এ-ও জানান, ডুমুরজলায় কার্নিভ্যাল চলবে। আরও একদিন সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ, ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে কার্নিভ্যাল। যে বিষয়কে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত, সেই পার্কিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনও টাকা লাগবে না পার্কিংয়ের জন্য। পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করবে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট।’’

প্রকাশ্যে মিটমাটের কথা বলা হলেও বিবাদ কত দূর মিটেছে, তা নিয়ে সন্দিহান জেলায় দলের অনেকেই। মনোজ-ঘনিষ্ঠদেরই দাবি, অরূপ রায়ের ‘ইন্ধনে’ আবারও বিধায়ককে বিব্রত করার চেষ্টা হবে। তাঁকে দলীয় কর্মসূচি এবং সরকারি অনুষ্ঠান থেকেও বাদ রাখা হবে। বিষয়টি মনোজ শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে আনতে পারেন বলেও তাঁদের দাবি।

Manoj Tiwari arup roy

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।