E-Paper

জেহাদিদের ‘করিডর’ রাজ্য, দাবি

আবার গোয়েন্দাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে আসা-যাওয়া করা জঙ্গিদের আশ্রয়ের পুরনো একটা পরিকাঠামো বছর ৩০ ধরে রাজ্যে অটুট রয়েছে। সেটিকে কাজে লাগাতে রাজ্যের ‘জেহাদি মনস্ক’দের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলেও দাবি।

— প্রতীকী চিত্র।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:১১
Share
Save

বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিভিন্ন ভাবে অন্তত ৭০০ জঙ্গিকে জেলের বাইরে বার করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনূস সরকারের পাকিস্তান প্রেমের কল্যাণে ঢাকায় সক্রিয় হয়েছে সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন— নতুন এই পরিস্থিতিতে হঠাৎই গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশের নিরাপত্তা। এক দিকে ভারতে ‘স্লিপার সেল’গুলিকে জাগিয়ে তুলেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। দ্রুত বড় নাশকতার লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের নানা স্থানে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সেই জঙ্গি সংগঠনগুলি, দাবি গোয়েন্দাদের। ভারতে সক্রিয় জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগে ঢাকায় নতুন ‘ঘাঁটি’ তৈরি করা হয়েছে বলেও দাবি। গোয়েন্দা সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ এবং ভারতের জঙ্গিদের ঢাকা যাওয়া— এই দু’টি কাজের ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গকে করিডর হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। কারণ, এই রাজ্যের ২,২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ সীমান্ত। প্রাকৃতিক কারণে সীমান্তের বহু জায়গাতেই বজ্রআঁটুনি তো দূরের কথা, চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারিই কঠিন।

আবার গোয়েন্দাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে আসা-যাওয়া করা জঙ্গিদের আশ্রয়ের পুরনো একটা পরিকাঠামো বছর ৩০ ধরে রাজ্যে অটুট রয়েছে। সেটিকে কাজে লাগাতে রাজ্যের ‘জেহাদি মনস্ক’দের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলেও দাবি।

ইউনূস সরকার বাংলাদেশে শপথ নিয়েছে ৮ অগস্ট। পর দিনই সে দেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের জঙ্গিরা ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকররাম থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত মিছিল করে এসে সমাবেশ করে। ঘোষণা করে— হাসিনা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা সামনের সারিতে ছিল। তাই অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। গুলশনে হোলি আর্টিজ়ান রেস্তরাঁয় জঙ্গি হানার পরে এই হিযবুত তাহরীরের নাম প্রকাশ্যে আসে। সেই হামলায় নিহত পুলিশদের স্মরণে রেস্তরাঁটির সামনে যে ভাস্কর্য বসানো হয়েছিল, সেটিও সম্প্রতি চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। ভাঙা ভাস্কর্যের উপরে দু’টি পোস্টার লাগিয়ে হিযবুত তাহরীর আফগানিস্তানের ধাঁচে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছে। আইএস-এর পতাকা নিয়েও ছাত্র-মিছিল হয়েছে। তারা ‘সরকার সমর্থক’ বলে পরিচিত।

একের পর এক ব্লগার খুনে উঠে এসেছিল বাংলাদেশে আল কায়েদার স্বঘোষিত শাখা আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর নাম। সেই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মৌলানা জসিমুদ্দিন রহমানিকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে ইউনূস সরকার। এই রহমানি এখন ভারতে নাশকতার চক্রান্তে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান অস্ত্র বলে দাবি গোয়েন্দাদের। সংগঠন ও শক্তি বাড়াতে সম্প্রতি চট্টগ্রামে আফগান-ফেরত মুজাহিদ মুফতি ইজহার আলির পুত্র মুফতি হারুন ইজহারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হিজ়ব-এ-ইলাহি নামে নতুন জেহাদি সংগঠন পত্তন করেছে রহমানি। ভারতকে ‘ধ্বংস ও জয়’ করার অঙ্গীকারও করেছে তারা। গোয়েন্দারা বলছেন, গত দু’মাসে অসম ও পশ্চিমবঙ্গে পুরনো সহচরদের সঙ্গে ফের যোগাযোগ তৈরি করেছে এবিটি। অন্তত ৭ জন প্রশিক্ষিত ও বিস্ফোরক তৈরিতে সিদ্ধহস্ত জঙ্গিকে তারা ভারতে পাঠিয়েছে। জেএমবি ও হুজি-র পুরনো সংগঠনও অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে পল্লবিত হয়েছে।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, নতুন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঢাকায় সক্রিয় হয়ে আইএসআই-ও। করাচি বা লাহোর থেকে আইএসআই ‘হ্যান্ডলার’রা যে ভারতীয় জেহাদিদের পরিচালনা করত, তাদের বলা হয়েছে, এখন থেকে ঢাকায় ‘বিশেষ লোকেদের’ সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। ইউনূস সরকারের আগ্রহে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে এগিয়ে এসেছে পাকিস্তান। গত এক মাসে বিভিন্ন রাজ্যের যে জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়ছে, তাদের জেরা করে গোয়েন্দারাজেনেছেন, চোরাপথে বাংলাদেশে পৌঁছনোই ছিল এদের লক্ষ্য।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পেয়ে ভারত সরকার এখন অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরারসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তেও নজরদারি ও প্রহরা আঁটোসাটো করছে। পশ্চিমবঙ্গে থেকে মণিপুরে পাঠানো বিএসএফ-এর বাহিনীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সীমান্তে বাড়তি নজরদারির জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্তারা বলছেন, ইউনূস সরকারের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ যে হিযবুত তাহরীর ও জেহাদিদের হাতে— তা আরও এক বার প্রমাণ হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে উপদেষ্টা মাহফুজ় আলমেরফেসবুক পোস্টে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির সঙ্গে অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা দখল করে বাংলাদেশকে সম্প্রসারণের যে জিগির এই ছাত্রনেতা তুলেছেন, তা দীর্ঘদিন ধরে জেহাদি জঙ্গিদের ঘোষিত ইচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, জেহাদি জঙ্গিরা এত দিন যা বলত, তা ইউনূস ক্যাবিনেটের এক প্রতিনিধি বলছেন কেন?

গোয়েন্দাদের কাছে খবর এসেছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা বিপুল পরিমাণ আরডিএক্স একটিছোট জাহাজে জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তার পরেই সাক্ষী লেপাটের জন্য জাহাজের ৭ নাবিককে খুন করা হয়েছে। অস্ত্রঢুকছে মায়ানমার হয়েও। গোয়েন্দারা বলছেন, এই সব ঘটনায় স্পষ্ট— ভারতে নাশকতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের সহযোগী এই জেহাদি শক্তি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Terrorism Terrorists India-Bangladesh Border Bangladesh Unrest

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।