Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Cyber Crimes

প্রতারণার ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ জামতাড়ায়, কিন্তু সুরাহা কই

সাইবার গবেষক ঋদ্ধিমান সরকার বললেন, “ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল আর ১৯৩০ টোল ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে। একটি ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এতেও সুরাহা হচ্ছে কই?”

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৪৫
Share: Save:

সাইবার বা ফোন-প্রতারণায় এক কালে চিন্তায় রেখেছিল শুধু জামতাড়া-গ্যাং, সেখানে এখন ধূমকেতুর গতিতে উঠে এসেছে রাজস্থানের ভরতপুর, উত্তরপ্রদেশের মথুরা, হরিয়ানার নুহ-র মতো জায়গা। কারণ প্রতিরোধের পন্থা সরাকরি স্তরে খুব কম। সাইবার গবেষক ঋদ্ধিমান সরকার যেমন বললেন, “ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল আর ১৯৩০ টোল ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে। একটি ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এতেও সুরাহা হচ্ছে কই? টাকা ফেরানোর পদ্ধতি সেই তো দীর্ঘসূত্রতায় আটকে। সেই সুযোগে উঠে আসছে ভরতপুরের মতো জায়গার প্রতারকেরা।”

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং‌’-এর অধিকর্তা তথা সাইবার গবেষক সন্দীপ সেনগুপ্ত আবার বললেন, “জামতাড়ায় এখন আবার প্রায় বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর মতো করে সাইবার প্রতারণা শেখানো হচ্ছে। নাইজেরিয়া, সোমালিয়ার মতো বিভিন্ন দেশ থেকে লোক আসছে সাইবার প্রতারণা শিখতে।”

তা হলে উপায়? প্রতারকদের জালে পড়া? যেমন ওই যুবক। বাইক-ট্যাক্সি চালিয়ে তিন জনের সংসার টানা কঠিন হচ্ছিল দিন কে দিন। পটনা থেকে আসা বন্ধু পরামর্শ দিয়েছিল উপরি আয়ের। হয় বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে কথা বলতে হবে, নয় একাধিক ব্যাঙ্কে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কথা বলায় ঝক্কি অনেক। বেশ কয়েকটি ভাষা শিখতে হবে, কথা বলার ধরন রপ্ত করতে হবে, ফোনের অন্য প্রান্তের মানুষকে প্রভাবিত করার পদ্ধতি শিখতে হবে।

সহজ পথ হিসেবে নিজের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার পথই বেছে নিয়েছিলেন যুবক। তাঁকে বলা হয়েছিল, প্রতিটি অ্যাকাউন্ট পিছু ভাড়া হিসাবে পাওয়া যাবে মাসে ১০ হাজার করে টাকা। কাজ বলতে, তাতে যে টাকা বিভিন্ন সময়ে জমা পড়বে, তা দিতে হবে আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে (যখন যেখানে বলা হবে)! সেই অ্যাকাউন্টগুলি কার, জানা যাবে না। টাকা আসছেই বা কোথা থেকে, জানানো হবে না তা-ও।

কিন্তু উপরি আয়ের এই সুখ স্থায়ী হয়নি। কয়েক মাসের মধ্যেই পটনার সেই বন্ধু ফোন করে বলে, "পুলিশ তোদের ঠিকানা পেয়ে গিয়েছে। যেখানে পারিস পালা।" সন্তান-স্ত্রীকে নিয়ে দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। একাধিক বাস বদলে দিল্লিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েও লাভ হয়নি। সেখান থেকেই পুলিশ ধরে নিয়ে আসে তাঁদের। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পুলিশি হেফাজতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সেই যুবক। এখন রাজাবাজারে ছোট্ট ঘরে ভাড়ায়থেকে সংসার টানছেন তাঁর স্ত্রী। একরত্তি সন্তানকে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন স্বামীর মামলা।

প্রতি দিন সাইবার প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে এই ভাবে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকেই। কারও থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সারা জীবনের সঞ্চয়, কাউকে আবার ঠকানো হচ্ছে তাঁর নামে সিমকার্ড তুলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বা ভুয়ো তথ্য দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বহু ক্ষেত্রে বুঝতেই পারছেন না, এ সব ঘটল কী করে? উত্তর মিলছে না পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও। অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিতকে পুলিশ বলছে, ‘এমন প্রচুর মামলার পাহাড় জমে আছে। টাকা কি পুলিশকে জিজ্ঞাসা করে দিয়েছিলেন?’ বলে দেওয়া হচ্ছে, ‘নিজেই যখন ওটিপি দিয়েছেন নিজেই ধরে আনুন।’

অভিযোগ, সুরাহা মিলছে না কেন্দ্রীয় সরকারের সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের পোর্টালে অভিযোগ জানিয়েও। যতক্ষণে সেই অভিযোগ নিয়ে নাড়াচাড়া হচ্ছে, ততক্ষণে প্রতারণার সিমকার্ডবদলে, একাধিক অ্যাকাউন্টে হাতিয়ে নেওয়া টাকা পাঠিয়ে দিয়ে কার্যত ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যাচ্ছে প্রতারকেরা। গত কয়েক মাসে উৎসবের মরসুমে লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে বয়স্কদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা।

শহরের এমনই এক প্রবীণের মন্তব্য, “মন কি বাতে প্রধানমন্ত্রীও সাধারণ মানুষকেই সতর্ক হতে বলেছেন। কিন্তু আমরাই সতর্ক হব, আমরাই সচেতন হব, প্রশাসন তা হলে কী করবে? সরকারের দিক থেকে সুরক্ষা দেওয়ার বন্দোবস্ত কোথায়?” দেশের সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সরকারি স্তর থেকে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও পথই বার করা যায়নি, যাতে সাইবার প্রতারকদের জব্দ করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে খোয়া যাওয়া টাকা ফেরানো গেলেও তা মাত্র ১২ শতাংশ।

( চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Financial Fraud Cyber Crime Cyber Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE