জল জীবন মিশনে ক্রমশ কমছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। স্নায়ুর চাপ বাড়ছে রাজ্যের উপর, সঙ্গে আর্থিক বোঝাও। এ নিয়ে রাজ্য বিধানসভার গত অধিবেশনেও সরব হয়েছিলেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তবে প্রশাসনের অন্দরের আশা, নতুন আর্থিক বছর (২০২৫-২৬ অর্থবর্ষ শুরু হবে ১ এপ্রিল থেকে) চালু হলে কেন্দ্রের বরাদ্দও ফের আসতে শুরু করবে।
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, এত দিন পর্যন্ত এই প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে বড়সড় কোনও সমস্যা হয়নি। গত বছর পর্যন্ত মোটের উপর মসৃণই ছিল মোট খরচে কেন্দ্রের ৫০% অর্থের আসা। কিন্তু ২০২৪-২৫ আর্থিক বছর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওই বছর কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অতিরিক্ত প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় রাজ্যকেই। কারণ, কেন্দ্রের বরাদ্দের পরিমাণ কমতে থাকে ক্রমশ।
সরকারি তথ্য দাবি করছে, ২০২৪-২৫ বছরে জল জীবন মিশনে এ রাজ্যের জন্য কেন্দ্রের বাজেট ধরা হয়েছিল প্রায় ৫০৫০ কোটি টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাতে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় অর্ধেক, ২৫২৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে, এই প্রকল্পে রাজ্যের ভাগের বাজেট ধরা হয়েছিল প্রায় ৪৯৯০ কোটি টাকা। সে জায়গায় প্রায় ৩৭৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কয়েক দিন আগে আরও প্রায় সাড়ে চারশো কোটি টাকা নবান্ন এই খাতে বরাদ্দ করে বলে খবর। অর্থাৎ, কেন্দ্র-রাজ্যের অর্থ ভাগাভাগি ৫০% করে হলেও, ওই বছর কেন্দ্রের তুলনায় প্রায় দেড় গুণের বেশি অর্থ খরচ করেছে রাজ্য। প্রসঙ্গত, বিধানসভার সদ্যসমাপ্ত অধিবেশনে চন্দ্রিমা জানিয়েছিলেন, জল জীবন মিশনে যে অরিতিক্ত বরাদ্দ করতে হয়েছিল রাজ্যকে, তাতে বাজেটের উপর প্রায় ১৩৯৮ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করেছিল সরকার। সেই অতিরিক্ত খরচ বিধানসভায় পাশও করিয়েছিল সরকার।
আধিকারিকদের একাংশের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার জল জীবন মিশনে নতুন করে বিপুল বরাদ্দ করেছে। কারণ, ২০২৪ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ২৩টি রাজ্য এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ এলাকার বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ শেষ করতে পারেনি। প্রায় ১.৭৫ কোটি এমন পরিবারে জল সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও, এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যের অগ্রগতি ৫৫% পার করেছে। সেই কারণে প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। ফলে নতুন আর্থিক বছর থেকে যে বরাদ্দ ফের করেছে কেন্দ্র, তা থেকে অর্থ আসা ১ এপ্রিলের পর থেকে শুরু হবে বলে আশা করছে রাজ্য সরকার।
রাজ্য সরকারের এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্র যা শর্ত দিয়েছিল, তার সবই পালিত হচ্ছে। ব্র্যান্ডিং বা প্রচার নিয়েও কেন্দ্রীয় বিধিগুলি সবই পালিত হচ্ছে নিখুঁত ভাবে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বরাদ্দ চালু করেছে কেন্দ্র। ফলে আশা করাই যায়, এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকাবে না।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)