Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Deaths Of New-Born Babies

টাকা খরচ হয় না, মৃত্যু হয় সদ্যোজাতের

রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে, অসুস্থ সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্য তৈরি ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-গুলির মধ্যে বি সি রায় হাসপাতালেই শিশুমৃত্যু সর্বাধিক।

—প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ ০৮:০৬
Share: Save:

এপ্রিলে রাজ্যের কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে প্রসূতিমৃত্যুর হঠাৎ বৃদ্ধির পরে এ বার নজরে সদ্যোজাতের মৃত্যু।

রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে, অসুস্থ সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্য তৈরি ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-গুলির মধ্যে বি সি রায় হাসপাতালেই শিশুমৃত্যু সর্বাধিক। কলকাতার এই হাসপাতালে মৃত্যুর হার রাজ্যের সদ্যোজাত মৃত্যুর গড় হারের প্রায় আড়াই গুণ বেশি।

স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে বি সি রায় হাসপাতালের এসএনসিইউ-এ ২৩.৬২ শতাংশ সদ্যোজাত মারা গিয়েছে। সেখানে এসএনসিইউ-এ রাজ্যে গড় মৃত্যুর হার মাত্র ৮.৮৯ শতাংশ (সংখ্যার বিচারে গত এক বছরে রাজ্যের এসএনসিইউগুলিতে ১৩ হাজার সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে)। তবে শুধু বি সি রায় হাসপাতালই নয়, স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের মোট ২২টি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের এসএনসিইউ-এ সদ্যোজাত মৃত্যুর হার রাজ্যের গড়ের থেকে বেশি। সেগুলির মধ্যে এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের মতো প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজও আছে। সম্প্রতি ইউনিসেফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি সামনে আসায় যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

সূত্রের খবর, চাপ আরও বেড়েছে এসএনসিইউ-এর উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য প্রদত্ত সরকারি অর্থ ব্যবহারের পরিসংখ্যান সামনে আসায়। দেখা গিয়েছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত অন্তত ২১টি হাসপাতালের এসএনসিইউ-এ বরাদ্দ অর্থের কানাকড়িও খরচ করা হয়নি। সেই তালিকায় বি সি রায় শিশু হাসপাতাল যেমন আছে, তেমনই এসএসকেএম-সহ কলকাতার একাধিক মেডিক্যাল কলেজও আছে। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে এই মৃত্যুহার বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, যে হাসপাতালগুলিতে সদ্যোজাত মৃত্যুর হার বেশি, সেখানে বরাদ্দ টাকা খরচ হয়নি কেন? কেন পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকা খরচ হয়নি? রাজ্যের এসএনসিইউগুলির দায়িত্বে থাকা আধিকারিক পম্পা চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আমার কিছু বলার এক্তিয়ার নেই। যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েকের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি জেনেছি। টাকা খরচের বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ নিতে বলেছি। তবে বি সি রায়-সহ ২২টি হাসপাতালে এসএনসিইউতে শিশুমৃত্যু বেড়েছে মূলত অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় বাচ্চাগুলি ভর্তি হওয়ায়। দূরদূরান্ত থেকে সবাই এই হাসপাতালগুলিতে অতিমাত্রায় অসুস্থ শিশুদের নিয়ে আসেন।’’

অনেকেই অবশ্য বলছেন, দূরদূরান্ত থেকে যাতে কলকাতায় না-আনা হয়, তার জন্য জেলা হাসপাতাল, মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এসএনসিইউ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে এই রকম ৬৯টি এসএনসিইউ চালু আছে। তার পরেও কেন কলকাতায় নিয়ে আসতে হয় অতি-অসুস্থ সদ্যোজাতদের? স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার কাছে এর স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

তবে এসএনসিইউ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসদের একাংশের অভিযোগ, এসএনসিইউ-এ একসময়ে যে নজরদারি ছিল, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। ‘ফেসিলিটি বেসড নিউবর্ন কেয়ার সেল’ উঠে গিয়েছে। এসএনসিইউ-পিছু এক জন মেন্টর-এর ব্যবস্থাও উঠে গিয়েছে। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার এবং নার্স দেওয়া হয় না। এসএনসিইউ-এর বাধ্যতামূলক নিয়ম মানা নিয়েও হুঁশ নেই।

স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আসন্নপ্রসবাদের পরীক্ষা করে সন্তানের শ্বাসকষ্টের আশঙ্কা থাকলে বিশেষ এক ধরনের ইঞ্জেকশন দিতে হয়। সেই নজরদারি ও ইঞ্জেকশন দেওয়ায় ক্ষেত্রে ফাঁক থাকছে। তাই এসএনসিইউ-এ বেশিরভাগ শিশুর মৃত্যুর কারণ শ্বাসকষ্ট। গর্ভস্থ শিশুর অসুস্থতায় নজরদারিও ঠিকঠাক হচ্ছে না। এসএনসিইউ-এ নিত্য দিন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রাউন্ড দিচ্ছেন না। প্রসঙ্গত, এপ্রিলে প্রসূতিমৃত্যুর হঠাৎ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সরকারি হাসপাতালে স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের একাংশের হাজিরা নিয়ে একটি বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্যসচিবই।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Death Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy