গা থেকে বালি ঝেড়ে ফেলতে নিয়মিত বার্তা দিচ্ছেন শাসক দলের নেতৃত্ব। আবার গায়ে যাতে বালির আঁচড় না লাগে, কর্মীদের সে বার্তা দিচ্ছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে, রাজ্যে অবৈধ বালি কারবারের ফাঁকা জায়গা দখলের জন্য ‘চাপাচাপি’ চলছে বলে অভিযোগ কারবারিদের একাংশের।
কয়লার পরেই যে বস্তুটির চোরা কারবার এ রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণের বহু জেলায় চলে বলে অভিযোগ, সেটি বালি। তাতে দলের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়ে বার বার তৃণমূলের অন্দরে সতর্কবার্তা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাতে কাজ হয়েছে, এমনটা নয়।
লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপির উত্থানের পরে, নতুন করে দলের নেতা-কর্মীদের এই কারবার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ নিয়মিত দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে ‘ফাঁকা জায়গা’র দখল নিতে নেমেছেন গেরুয়া শিবিরের কিছু নেতা-কর্মী, এমনই দাবি কারবারিদের। আবার তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারিরও অভিযোগ, ‘‘বিজেপির লোকজন অবৈধ তো বটেই, বৈধ বালিঘাট থেকেও পকেট ভরার চেষ্টা করছে।’’
পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় অজয় নদের নানা অবৈধ বালিঘাটের দখল নিয়ে বারবার সংঘর্ষ বেধেছে। বালি ব্যবসায়ীদের দাবি, কাঁকসায় বৈধ চালান-সহ এক ট্রাক্টর বালির দাম ১,৭৫০ টাকা। কিন্তু চালান ছাড়া, তার দাম ১,১৫০ টাকা। ট্রাক্টরপিছু
৬০০ টাকা কম দামের জন্য ইমারতি ব্যবসায় এই বালির চাহিদা বেশি। তাই বেশি এই কারবার দখলের তাগিদও।
একাধিক কারবারির দাবি, বিজেপির নাম করে হুমকি-ফোন করা হচ্ছে তাঁদের। কখনও অবৈধ বালি তোলার ঘাটে হাজির হয়ে বিজেপি কর্মী পরিচয় দিয়ে চাঁদা চাইছে যুবকের দল। ওই কারবারিদের কথায়, ‘‘ইশারাই যথেষ্ট। তাই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা চলছে।’’ যদিও অভিযোগ উড়িয়ে কাঁকসার বিজেপি নেতা রমন শর্মা বলেন, ‘‘তেমন হলে ব্যবসায়ীরা থানায় অভিযোগ করুন।’’ তবে কারবারিরা বলছেন, ‘‘ভবিষ্যতে রাজ্যে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে! বিড়ালের গলায় এখন ঘণ্টা বাঁধতে যাবে কে?’’
বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার সন্ধিপুর, কাদড়া-সহ কিছু এলাকায় কিছু দলীয় কর্মী অবৈধ বালি-খাদান চালানোর ছক কষেছেন বলে দলের কাছে খবর রয়েছে। সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া গড়বেতার এক নেতা গোয়ালতোড়ের মৌলাড়ায় একটি খাদান থেকে তোলা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও ওই ব্যক্তি এখন এলাকাছাড়া বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। তবে গড়বেতার তৃণমূল বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই অবৈধ বালি কারবারে বিজেপি কর্মীরা যুক্ত হয়ে পড়েছেন বলে খবর পাচ্ছি।’’
উত্তরবঙ্গের তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক, জয়ন্তী— নানা নদীর পাড় থেকে বেআইনি বালি পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সেখানে কারবারিদের মধ্যে ‘আনুগত্য’ বদলের খবর রয়েছে। সূত্রের দাবি, নাটাবাড়ির পানিশালা এলাকায় তোর্সায় যাঁদের হাতে এই কারবারের রাশ, তাঁদের এক জন আগে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, পরে তৃণমূলে ফেরেন। সম্প্রতি তিনি আবার বিজেপিতে গিয়েছেন। হরিণচরা, গুড়িহাটি এলাকায় বালি তোলায় যুক্ত সব গোষ্ঠীই গেরুয়া শিবিরের দিকে ঘেঁষছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। ডুয়ার্সেও কারবারিদের অনেকেরই দাবি, ‘আনুগত্য’ না দেখালে বিজেপির লোকজন গোলমাল পাকাচ্ছে, রাস্তা আটকাচ্ছে। যদিও বিজেপি নেতারা অভিযোগ মানেননি।
লোকসভা ভোটে বিজেপির ভাল ফলের পরেও খনি এলাকায় অবৈধ কয়লার কারবারিরা এখনই ‘শিবির বদল’ করছেন না বলে দাবি করেছেন। বালির ক্ষেত্রে ছবিটা আলাদা কেন? বালি কারবারিদের ব্যাখ্যা, হাতেগোনা জেলায় কয়লার অবৈধ খাদান রয়েছে। সেখান থেকে কয়লা তোলার পরে, রাজ্যের বিভিন্ন ‘ডিপো’য় (বিতরণ কেন্দ্র) পাঠানোর মাধ্যমে সে কারবার চলে। কিন্তু এলাকার নদ-নদীর ঘাট থেকে বালি তুলে তা কাছাকাছি বিক্রি করে রোজগার হয়। তাই স্থানীয় স্তরে বিরোধী দলের কেউ ক্ষমতাবান হলে, তাকে হাতে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক মদন রুইদাসদের বক্তব্য, ‘‘দলের কেউ যাতে বেআইনি কারবারে যুক্ত না হন, প্রত্যেক মণ্ডলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেউ জড়ালে দল থেকে বার করে দেওয়া হবে।’’
অবৈধ বালির কারবারিরা অবশ্য জানাচ্ছেন, বর্ষার মরসুম পেরোলেই রমরমিয়ে শুরু হবে তাঁদের কারবার। কোন দলের কে, কতটা সংযমী, তখনই বোঝা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy