নাজেহাল সাধারণ মানুষ।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা এবং প্রশাসনিক গলদে এ বছর সামগ্রিক ভাবে মার খেয়েছে ধান ও আলুর উৎপাদন। ফলে বছরভর বেড়েছে এই দুই পণ্যের দাম। আমন বোনা শেষ হয়ে গেলেও চালের দাম যে অদূর ভবিষ্যতে কমতে পারে, এমন আশার কথা কেউ শোনাচ্ছেন না। তার উপরে কয়েক মাস খানিক স্বস্তি দেওয়ার পরে ঊর্ধ্বমুখী আনাজের দামও। ফলে পুজোর মুখে পকেট সামলাতে নাজেহাল মানুষ।
আলুভাতে ভাত সাধারণ বাঙালি ঘরের সব থেকে চেনা খাদ্য। এ বছর বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে একের পর এক মার খেয়েছে ধানের উৎপাদন। বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ১৫% কম। কৃষি দফতর সূত্রে এ কথা জানিয়ে বলা হচ্ছে, খারিফ মরসুমে প্রথম কয়েক মাসে বৃষ্টির তেমন দেখা না মেলায়, আমনের উৎপাদন নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়। অন্য কয়েকটি রাজ্যেও বৃষ্টির অভাবে ধানের ফলন মার থেয়েছে। এরই মধ্যে, বিশ্ব বাজারে ভাল পরিমাণ চাল রফতানি হচ্ছিল। সব মিলিয়ে চালের দাম বাড়তে থাকে। গত ছ’মাসে নানা ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫-১৫ টাকা করে বেড়েছে। এর পরে বিদেশে ভাঙা চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্র। ‘ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন’-এর সদস্য কাঞ্চন সোমের দাবি, “এর ফলে খোলা বাজারে চালের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে।’’ কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার অবশ্য রফতানিতে বিধিনিষেধে চাষিদের ক্ষতিই দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যে বাসমতীর মতো গোবিন্দভোগ-সহ একাধিক সুগন্ধি ধান চাষ হয়। বহু চেষ্টায় সে সব চালের রফতানি বাড়ানো গিয়েছে। রফতানি যাতে বন্ধ না-হয়, তার আবেদন করা হবে।’’
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে সাধারণত ১০০-১০৫ লক্ষ টন আলু উৎপাদন হয়। এ বারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দক্ষিণবঙ্গে আলু উৎপাদন মার খেয়েছে। অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গে ব্যাপক ফলন হওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতি সামলানো যায়নি। আলুর দাম বেড়েছে। কেন? উত্তরের আলু চাষিদের দাবি, সেখানে হিমঘরের সংখ্যা এমনিতেই কম ছিল। এ বারে ফলন এতটা বেশি হবে, আন্দাজই করা যায়নি। ফলে হিমঘরে আলু রাখার সুযোগ পাননি বেশিরভাগ চাষি। আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “এ রাজ্যের ১৫-২০ শতাংশ আলু ভিন্ রাজ্যে রফতানি হত। এ বার মান খারাপ ও দাম বেশি থাকায় উত্তরপ্রদেশের আলু অন্য নানা রাজ্য, এমনকি দক্ষিণবঙ্গেও ঢুকে পড়েছে।’’
উৎসবের মুখে বাড়ছে আনাজের দামও। ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় আনাজের জোগান কমেছে। দামে তার প্রভাব পড়ছে। যে পটল বা ঢেঁড়শের দর মাসখানেক আগে কেজি প্রতি ২০ টাকা ছিল, তা এখন ৩৫-৪০ টাকা। কেজি প্রতি বেগুন ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। পুজোয় চাহিদা মাথায় রেখে অনেক চাষি এখন ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষ করেন। বৃষ্টিতে ফলন মার খাওয়ায় জোগান কমছে বলে দাবি তাঁদের। দক্ষিণবঙ্গের নানা বাজারে ছোট আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের অনেকের আশঙ্কা, পুজোর সময়ে তা ৫০ টাকায় দাঁড়াবে। সব মিলিয়ে, পকেটে টান পড়ার চিন্তা নিয়েই শুরু হচ্ছে উৎসবের মরসুম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy