ঠিকঠাক প্রচারের ফলে মহিলাদের মধ্যে সারভাইক্যাল ক্যানসার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। কিন্তু মেয়েদের জরায়ু ও স্তন ক্যানসার এবং পুরুষদের কোলন, প্রস্টেট আর রেক্টাম বা পায়ুদ্বারের ক্যানসারের ক্রমবর্ধমান দাপট ভাবিয়ে তুলেছে চিকিৎসকদের।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) গত সপ্তাহে ক্যানসার নিয়ে যে-রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতেই প্রকট হয়েছে এই দুর্ভাবনা। উদ্বেগ এতটাই যে, মেয়েদের মধ্যে সারভাইক্যাল ক্যানসারের নিম্নমুখী হারের খবর সেটা চাপা দিতে পারছে না। সেই সঙ্গে মুখ ও গলার ক্যানসার বৃদ্ধির হার নিয়ে আরও এক বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইসিএমআর-এর চিকিৎসক-গবেষকেরা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে যত ক্যানসার রোগী আছেন, তাঁদের ২৯ শতাংশই ভুগছেন মুখ ও গলার ক্যানসারে। আইসিএমআর-এর পর্যবেক্ষণ, তামাক জাতীয় নেশার উপরে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাচ্ছে না বলেই বাড়ছে ওই দুই ক্যানসার। রিপোর্ট বলছে, ২০১৫-য় দেশে তামাকের নেশা থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকেই সব থেকে বেশি ক্যানসারপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে আইসিএমআর-এর রিপোর্টে। ওই সব অঞ্চলে ক্যানসারের দাপট বেশি কেন?
আইসিএমআর-এর এক গবেষক জানাচ্ছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ায়। ধূমপান তো ক্যানসারকে ডেকে আনেই, মাত্রা ছাড়ালে রোজকার খাদ্যও কারণ হতে পারে ওই মারণ রোগের। এই দুইয়ের দৃষ্টান্ত হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে গবেষকদের রিপোর্টে। বলা হয়েছে, তামাকজনিত নেশা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বেশি। আবার ওই এলাকার অনেক জায়গার বাসিন্দাদের খাদ্যাভ্যাসও অত্যধিক মাত্রায় ক্যানসারের জন্য দায়ী। মুখ ও গলার ক্যানসারের জন্য তামাক জাতীয় নেশাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন গবেষকেরা। একই ভাবে কোলন ও রেক্টাল ক্যানসারের হার বৃদ্ধির দায় খাদ্যাভ্যাসের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
বেপরোয়া খাদ্যাভ্যাস ক্যানসার ডেকে আনছে ঠিক কী ভাবে?
খাদ্যতালিকায় মাংসজাতীয় যে-কোনও খাবারের পরিমাণ মাত্রা ছাড়ালেই কোলন ও রেক্টাল ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে বলে জানাচ্ছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায় ও সোমনাথ সরকার। এ ছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলেও এই দুই ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে। পশ্চিমের দেশগুলিতে খাদ্যাভ্যাসের জন্য এই সমস্যা বরাবরই অনেক বেশি ছিল। এখন এ দেশেও সেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এই দুই ধরনের ক্যানসার সহজেই ধরা পড়ে। তাই এই সব ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির সম্ভাবনাও যথেষ্ট।
আইসিএমআর রিপোর্ট বলছে, মহিলারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ও জরায়ুর ক্যানসারে। স্তন ক্যানসারের জন্য খাদ্যাভ্যাসকেই দায়ী করছেন গৌতমবাবু ও সোমনাথবাবু। তাঁরা বলছেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় চর্বিজাতীয় খাবার বেশি থাকায় এই সমস্যায় ভুগছেন মহিলারা। জরায়ুর ক্যানসারের ক্ষেত্রে অবশ্য হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) বেশ বড় ভূমিকা আছে বলেই চিকিৎসকদের অভিমত। ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ফলে এই ভাইরাস মহিলাদের দেহে প্রবেশ করে এবং জরায়ুকে আক্রমণ করে।
ইসোফেগাস আর পাকস্থলীর ক্যানসারও বাড়ছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে আইসিএমআর-এর রিপোর্টে। খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে এই দুই ক্যানসারেরও সরাসরি যোগ আছে বলে জানাচ্ছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতমবাবু ও সোমনাথবাবু।
খাদ্যাভ্যাসে কী পরিবর্তন আনলে ক্যানসার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?
ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, খাদ্যতালিকায় ফাইবার জাতীয় শাকসব্জি বেশি থাকলে এই ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ছাড়া দেহের ওজন কমালে অন্যান্য রোগের মতো ক্যানসার থেকেও রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
আইসিএমআর-এর ওই রিপোর্ট অনুযায়ী এ দেশে সব থেকে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন মুখ আর গলার ক্যানসারেই। কেন?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগের এক ও অদ্বিতীয় কারণ হল তামাকসেবন। ধূমপান, গুটখা ইত্যাদি সেবন বন্ধ না-করলে এই সমস্যা ঠেকানো মুশকিল। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেওয়া দরকার প্রশাসনের। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, খাতায়-কলমে গুটখা বন্ধ করলেই হবে না। নিয়মটি কার্যকর হচ্ছে কি না, সে-দিকেও প্রশাসনের নজর রাখা দরকার। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রশাসনের এই তৎপরতা বিশেষ চোখে পড়ে না। ‘‘যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের সকলেই যে ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন বা হন, এমন নয়। কিন্তু তামাকসেবন এই মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়,’’ সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসক সৌরভ দত্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy