সাঙ্কেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে টাকার লেনদেন! গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কয়লা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ইস্টার্ন কোল্ড ফিল্ডের (ইসিএল) প্রাক্তন আধিকারিক সুনীলকুমার ঝা এবং শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) আধিকারিক আনন্দকুমার সিংহকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে সিবিআই। শুক্রবার তাঁদের আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীর দাবি, ভাউচারের মাধ্যমে কয়লা পাচারকারীদের থেকে টাকা নিতেন সুনীল এবং আনন্দ। বিভিন্ন সঙ্কেতের মাধ্যমে সেই লেনদেন হত।
এর আগেও কয়লা পাচারকাণ্ডে ইসিএলের ৮ আধিকারিক গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা মূলত জিএম পদমর্যাদার ছিলেন। এই প্রথম ইসিএলের উচ্চ পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক গ্রেফতার হলেন। সুনীলকুমার ইসিএলের প্রাক্তন ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল অপারেশন)। ২০১৮ সালে তিনি অবসর নেন। আনন্দকুমার সিআইএসএফের শীতলপুর ইউনিটে আধিকারিক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফরাক্কায় কর্মরত। কয়লা পাচারকাণ্ডে এই প্রথম সিআইএসএফের কাউকে গ্রেফতার করা হল।
সুনীল এবং আনন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা প্রচুর টাকার বিনিময়ে ইসিএলের লিজ়ে থাকা এলাকা ও রেল সাইডিংয়ে কয়লা পাচারকারীদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা দিতেন। সেই লেনদেনের ভাউচারও তাদের কাছে আছে বলে জানায় সিবিআই। এর ভিত্তিতে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার বিরোধিতা করে দুই ধৃতের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু জানান, আর্থিক লেনদেনের যে ভাউচার সিবিআই পেয়েছে, তার কয়েকটি ২০০৯ সালের। গোয়েন্দা সংস্থা সেগুলিকে ২০১৯ সালের বলে চালাতে চাইছে।
সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার পাল্টা জানান, ভাউচারের মাধ্যমে টাকাপয়সা লেনদেনের সময় বিভিন্ন সাঙ্কেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হত। ভাউচারে ২০১৯ সালটিকে ২০০৯ সাল লেখা হয়েছে। এটাই সাঙ্কেতিক চিহ্ন! তাঁর আরও দাবি, ঘুষ হিসাবে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন সুনীল এবং ১১ লক্ষ টাকা পেয়েছেন আনন্দ। কয়লাপাচার-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার বাড়িতে তল্লাশির পর উদ্ধার হওয়া লাল ডায়েরি এবং আর এক অভিযুক্ত রত্নেশ বর্মার বাড়ি থেকে যে ভাউচার মিলেছে, তা থেকে এ কথা জানা গিয়েছে বলে আদালতে দাবি করেন সিবিআই আইনজীবী।
তদন্তকারীদের দাবি, সুনীল ও আনন্দের বিরুদ্ধে কয়লা পাচারে যোগসাজশের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা তদন্তে অসহযোগিতা করেন। তাঁদের বয়ানেও অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা পাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার বয়ানের ভিত্তিতে দু’জনকে অতীতেও বেশ কয়েক বার তলব করা হয়েছিল। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে দু’জনকে চার দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পরবর্তী শুনানি আগামী সপ্তাহে মঙ্গলবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy