Advertisement
E-Paper

এখনই ‘ছাতা’ বদল নয় কয়লা-কারবারে

কয়লা আর বালি— রাজ্যের দুই প্রধান পাচার কারবার এখন কোন দিকে? লোকসভা ভোটের পরে খোঁজ নিল আনন্দবাজার। কয়লা আর বালি— রাজ্যের দুই প্রধান পাচার কারবার এখন কোন দিকে? লোকসভা ভোটের পরে খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৭
Share
Save

ভোটের ফল যা-ই হোক, হিসেব বদলাচ্ছে না অবৈধ কয়লা কারবারের। লোকসভা ভোটে পশ্চিম বর্ধমান বা বীরভূমের খনি-অঞ্চলে দেদার পদ্ম ফুটলেও এখনই রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না কারবারে জড়িতদের অনেকেই।

কেন? একাধিক কয়লা কারবারির দাবি, খাদান থেকে কয়লা কাটার পরে তা নির্দিষ্ট ‘ডিপো’ (বিতরণকেন্দ্র) পর্যন্ত পৌঁছনোর আগে দফায় দফায় ‘প্রণামী’ দিতে হয় তাঁদের। যাঁরা সে ‘প্রণামী’ পান, তাঁদের কেউ ‘দিল্লি’র কথায় (কয়লা কেন্দ্রীয় শিল্প) চলেন। আবার কেউ রাজ্যের প্রভাবশালী দলের নেতা। ফলে ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখা প্রয়োজন। কারবারিদের কথায়, ‘‘কোনও এক পক্ষ যদি মনে করে, অন্য পক্ষ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, তা হলে ব্যবসা চালানো দুষ্কর হবে। তাই কেউ যাতে বেঁকে না বসে, সে খেয়াল রাখতে হয় আমাদের।’’ এখন তাঁদের নজর, আসন্ন পুরসভা ভোটের দিকে।

পশ্চিম বর্ধমানে আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, বারাবনির মতো বিধানসভা এলাকায় ‘ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড’-এর (ইসিএল) বৈধ খনির আশপাশেই চলে বহু বেআইনি কয়লা-খাদান। বীরভূমের খয়রাশোল, লোকপুর এবং কাঁকরতলাতেও ছবিটা আলাদা নয়। অবৈধ খাদানে কয়লা কেটে পৌঁছে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট কিছু ‘ডিপো’য়। সেখান থেকে তা পাচার হয় রাজ্যের নানা প্রান্তে। ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত তাপনিরোধক ইট তৈরির কারখানা, ইটভাটা, গুল কারখানা, স্পঞ্জ আয়রন কারখানা ও ছোট ইস্পাত কারখানার মতো বহু শিল্প সংস্থাতেই কাঁচা কয়লা অত্যন্ত জরুরি উপাদান। কিন্তু সরকারি দর যেখানে প্রায় ৩,৫০০ থেকে ৫,৫০০ টাকা প্রতি টন, সেখানে অবৈধ কয়লা বিক্রি হয় প্রতি টন ১,৪৬০ টাকা দরে। বেআইনি এই কর্মকাণ্ডে শুধু পশ্চিম বর্ধমানেই ছোট-বড় মিলিয়ে শ’চারেক কারবারি ও হাজার কুড়ি দিনমজুর যুক্ত বলে পুলিশের হিসেব। বীরভূমেও এই কারবারে জড়িতের সংখ্যাটা কয়েক হাজারের কম নয়।

লোকসভা ভোটের আগে অবৈধ কয়লা কারবারে জড়িতদের একটা বড় অংশের বক্তব্য ছিল, ‘‘যা চলছে, যাদের দৌলতে চলছে, ভোট দেওয়ার সময় মাথায় থাকবে।’’ কিন্তু ভোটের পরে দেখা গিয়েছে, আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভাতেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। বীরভূম লোকসভার মধ্যে খয়রাশোল ব্লকে সবচেয়ে ভাল ফল করেছে তারা। ব্লকের দশটির মধ্যে ন’টি পঞ্চায়েতেই ‘লিড’ তাদের।

তা হলে কি চোরাই কয়লার কারবারিরা ‘ছাতা’ বদলাচ্ছেন? কারবারিরা মনে করাচ্ছেন, আসানসোল লোকসভার সাতটি বিধানসভা আসনের পাঁচটি তৃণমূলের ও দু’টি বামেদের দখলে রয়েছে। ১০৬ ওয়ার্ডের আসানসোল পুরসভায় তৃণমূলই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ৫৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৪টি তৃণমূলের হাতে। আবার বীরভূম জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৪টি শাসক দলের দখলে। এখন শিবির বদলের তোড়জোড় হলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তবে তাঁদের সংযোজন: ‘‘মোটা টাকার ব্যবসা তো। এলাকায় ক্ষমতা বাড়ায় কোনও নেতা ভাগ চাইলে আশ্চর্য হব না। অবাক হব না আমাদের কেউ সে দিকে ঢললেও।’’

এলাকার নেতারা অবশ্য কয়লা কারবারের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বীর নৈকট্য বোঝাতেই ব্যস্ত। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি এবং বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, সিআইএসএফের দায়িত্ব কয়লা চুরি রোখা। তাঁদের কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী, যারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের কথায় চলে। কয়লা চুরি যা হচ্ছে, বিজেপির মদতে হচ্ছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই এবং বীরভূম জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্য, ‘‘সবাই জানে, তৃণমূলের জমানায় কাদের মদতে অবৈধ কয়লার কারবার চলছে।’’ দুই বিজেপি নেতারই দাবি, ‘‘যতই চেষ্টা করুক, কয়লা পাচারে জড়িতেরা ঠাঁই পাবে না আমাদের দলে।’’ (চলবে)

Coal Smuggling Asansol Coal Mafia Crime

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।