মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা হবে সাগরদিঘিতে। আগামী ২০ নভেম্বর বাহালনগরের পাশেই ধুমারপাহাড় গ্রামের মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওই মাঠে এর আগেও সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বহরমপুরে প্রশাসনিক সভা সেরে ওই জনসভায় আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনিক কর্তারা সভার যাবতীয় ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে শনিবার ওই মাঠে এসেছিলেন।
জেলার মধ্যে ব্লক হিসেবে সাগরদিঘিতে ভাল ফসল উৎপাদন হয়। অথচ সেই সাগরদিঘি থেকেই প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ভিন রাজ্যে যান কাজের সন্ধানে। তার মধ্যে কাশ্মীরে কাজের সন্ধানে প্রতি বছর প্রায় দু’হাজার জন যান ওই ব্লকের বাসিন্দারা। তার মধ্যে বাহালনগর, ব্রাহ্মনীগ্রাম, ফুলবাড়ি এই তিনটি গ্রাম থেকেই কাশ্মীরে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন। কিন্তু জঙ্গি হানায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটল এই প্রথম।
তৃণমূলের মহকুমা সভাপতি বিকাশ নন্দ বলছেন, “কাশ্মীরে নিহত শ্রমিকদের দিকে নানা ভাবে রাজ্য সরকার সাহায্যের হাত বাড়ালেও কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি নীরব। শ্রমিকেরা কোনও সাহায্য পায়নি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে । অথচ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে শ্রমিকদের। বাঙালি শ্রমিকদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভূমিকার কথা সাগরদিঘির মানুষের জানা দরকার। সাগরদিঘিতে মুখ্যমন্ত্রীর সভা করার সিদ্ধান্ত তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশ্মীরে বাহালনগরের ৫ শ্রমিকের হত্যার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতেই সভাটি সাগরদিঘিতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সভা থেকেই কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় নিহত শ্রমিকদের স্মরণ করে তাঁদের পরিবারের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারী সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনই নিয়োগপত্র দেওয়া হবে ওই ঘটনায় আহত জহিরুদ্দিনের স্ত্রীকে। ধুমারপাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই সভাকে ঘিরে কিছুটা হলেও তাই ভরসা পাচ্ছে বহালনগর। ওই গ্রামের বাসিন্দাদের আশা, বাহালনগরের বাসিন্দাদের মধ্যে কিছু একটা বাড়তি কর্মসংস্থানের চেষ্টার কথা হয়ত ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। গত সপ্তাহে কাশ্মীর থেকে বাহালনগরে ফিরে আসা মইনুল হক বলছেন, “১০০ দিনের প্রকল্পের কাজের মজুরি যা, তাতে সমস্যা মিটবে না । এই এলাকার মানুষ তাতে খুব একটা আগ্রহীও নন। তাই বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়া কাশ্মীরে যাওয়া আটকানো যাবে না।”
গ্রামের তৃণমূল সদস্য কসিমুদ্দিন শেখ বলছেন, “গ্রামের আর্থিক অবস্থা ফেরাতে সরকারি প্রকল্পগুলিতে মানুষকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। গ্রামে প্রায় আড়াইশো মহিলা পুরুষ বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা পান না। এ ব্যাপারে বারবার করে আবেদন করা সত্ত্বেও কোনও ফল হয়নি। এমনকি পঞ্চায়েত থেকেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করেনি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে যা মজুরি এবং সে টাকা হাতে পেতে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে ওই প্রকল্পে কাজ করার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ চলে যাচ্ছে। তাই জব কার্ডা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই চলে যাচ্ছেন ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে। ’’
কাজেই গ্রামবাসীদের বাইরে কাজে যাওয়া আটকানোর মত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে কোনও লাভ হবে না বলেও গ্রামবাসীরা মনে করেন। মিনিবা বিবির হয়স ৬০ পেরিয়েছে, তাঁর স্বামীর বয়সও ৬৫ বছর। কিন্তু তাঁরা বার্ধক্য ভাতা পান না। ৬৫ বছরের নেজাম শেখ বলেন, “গ্রামে প্রায় শতাধিক পুরুষ ও মহিলার না আছে বার্ধক্য ভাতা, না পায় বিধবা ভাতা। এটাও একটা অভাবের কারণ।”
ওই গ্রামের হাবিবা বিবি বলছেন, “গ্রামে একটা বড় বিপদ ঘটেছে ঠিকই। কিন্ত এর রেশ কেটে গেলে আবার হয়ত কাশ্মীরেই যাবে এলাকার মানুষ। এখন গ্রামের লোকজনকে বাইরে যাওয়া আটকানো সম্ভব, যদি সে রকম বিকল্প কাজ দেওয়া যায় স্থানীয় শ্রমিকদের। সকলেই অপেক্ষায় আছেন মুখ্যমন্ত্রী বাহালনগরের জন্য কিছু বাড়তি সুবিধের কথা ঘোষণা করেন কিনা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy