ভূমি পুজো উপলক্ষে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসব রাজভবনে
অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজোর দিনে এ দেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা স্মরণ করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ‘ভারতবাসীর গৌরব ও স্বাভিমানের দিন’ বলে উল্লেখ করে উৎসব পালন করলেন রাজভবনে সন্ধ্যায় রীতিমতো লোকজন ডেকে, ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে। রামকে নিয়ে বিজেপির উন্মাদনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের এমন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল রাজনৈতিক শিবিরে।
মুখ্যমন্ত্রী বুধবার তাঁর টুইট-বার্তায় বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশ তার চিরায়ত বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে এবং আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত রাখব।’’ রাজ্যপাল ধনখড়ের সুর অবশ্য অন্য। রাজভবনে প্রদীপ জ্বালিয়ে ভূমিপুজোর উৎসব পালনের খবর জানিয়ে রাজ্যপাল তাঁর টুইটে বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে এই ক্ষণ গৌরব ও স্বভিমানের। আজকের এই দিনটির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে এমন ঐতিহাসিক রায়ের জন্য ধন্যবাদ।’’ সেই সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তোষণের পাকে-চক্করে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী রামমন্দির নিয়ে নীরব হয়ে রয়েছেন। রাজ্যবাসীকে নিজের অবস্থান জানান।’’ দেশের সংবিধানেও ‘রাম-সীতা বিদ্যমান’ বলে মন্তব্য করে ছবি দিয়েছেন তিনি।
সাংবিধানিক পদে বসে রাজ্যপালের রামমন্দির নিয়ে এমন উৎসাহকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল এবং সিপিএম। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মতে, ‘‘সাংবিধানিক প্রধান যে কোনও দল মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ থাকবেন, সেটা বারবার ভুলে যাচ্ছেন এই রাজ্যপাল। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে রাজভবনে বিজেপি অফিস তৈরি করবেন মনে করলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না!’’ তৃণমূল নেতা এবং রাজ্যের পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায়ও বলেন, ‘‘রাজ্যপাল নিজেই বারবার নিজের উদ্দেশ্য ও অবস্থান স্পষ্ট করছেন। সাংবিধানিক পদে থেকে যাঁদের দেশবাসীকে পথ দেখানোর কথা, তাঁরা ভুল পথে গেলে বিপদ সকলের।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘পৌরাণিক চরিত্রকে রাজনৈতিক করে তুলে এমন উন্মাদনা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। আগেই সতর্ক করে দিয়ে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। আর রামমন্দিরের জন্য প্রদীপ জ্বালার জায়গা রাজভবন নয়! সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপালের যা দায়িত্ব আছে, সেগুলো পালনে মন দিলেই ভাল।’’ তাঁদের আরও বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তোষণ করছেন কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর তোষণ নিয়ে মন্তব্য করে রাজ্যপাল যদি রামমন্দিরের উৎসব পালন করেন, তা হলে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য!’’
আরও পড়ুন: রাম-নামে বিধিভঙ্গ, অশান্তি, ধরপাকড়ও
রামমন্দির হোক বা অন্য বিভিন্ন প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দেওয়ার পাশাপাশিই স্বাধীনতা দিবসে রাজভবনে চা-চক্রের ছোট আসরে তাঁকে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তবে সরকারি সূত্রের এখনও পর্যন্ত ইঙ্গিত, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত ১৫ অগস্ট রাজভবনে যাবেন না। আনুষ্ঠানিক ভাবে পতাকা তুললেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বার পূর্ণাঙ্গ কুচকাওয়াজ রাখছেন না মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল অবশ্য ওই দিন রাজভবনে চা-চক্রে করেনা-যোদ্ধাদের আপ্যায়িত করতে চান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy