সব পরিকল্পনামতো চললে আগামী সোমবার, ২১ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরে শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর বিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, ওই দিনই শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের বিরুদ্ধে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন শিক্ষকসমাজের প্রতিনিধিরা। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্য মঞ্চের ছাতার তলায় ওই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবারই সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ‘রিভিউ পিটিশন’-এ সাড়া দিয়ে চাকরিহারা শিক্ষকদের একটি অংশকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দিয়েছে। সেই নির্দেশের কোনও প্রভাব শিক্ষকসমাজের প্রস্তাবিত আন্দোলনের উপর পড়ে কি না, তা-ও এখন দেখার।
‘ঝান্ডা’ ছেড়ে ওই কর্মসূচিতে শামিল হবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার সময়ে ছাত্রসমাজের আহ্বানে নবান্ন অভিযান হয়েছিল। সেখানেও যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। ওই অভিয়ানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধেছিল আন্দোলনকারীদের একাংশের। তাঁদের ছোড়া ইটের ঘায়ে আহত হয়েছিলেন একাধিক পুলিশকর্মী। এক সার্জেন্টের চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পক্ষান্তরে, পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল। ছুড়েছিল কাঁদানে গ্যাসও। আন্দোলনকারীদের নবান্নের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া তো দূর, কলকাতার দিকে তাঁদের গঙ্গার এ পারেই আটকে দেওয়া হয়েছিল। ও পারে সাঁতরাগাছিতে। এ বারও সেই ধাঁচেই শিক্ষকসমাজের নবান্ন অভিযান হতে চলেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
আরও পড়ুন:
শিক্ষকসমাজের প্রতিনিধিদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ধর্মতলা থেকে নবান্নের দিকে যাবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তবে মুখ্যমন্ত্রী সে দিন নবান্নে যাবেন না। তিনি যাবেন পশ্চিম মেদিনীপুর। নবান্ন সূত্রে খবর, ওই দিন বেলা দুটোয় মুখ্যমন্ত্রী ও জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধারদের উপস্থিতিতে শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাস। সেই কর্মসূচির পরে মুখ্যমন্ত্রী জেলাতেই থাকবেন। পরদিন শালবনিতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতায় ফেরার কথা তাঁর।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই দিন শালবনি যাওয়াকে শিক্ষকসমাজ এখন থেকেই তাঁদের ‘জয়’ বলে আখ্যা দিতে শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের কর্মসূচির দিনক্ষণ জেনেই মুখ্যমন্ত্রীর ওই কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে। যদিও নবান্নের খবর, অনেক আগেই মুখ্যমন্ত্রীর মতামত নিয়ে তাঁর শালবনি যাওয়ার কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। এর সঙ্গে কারও নবান্ন অভিযানের কোনও সম্পর্ক নেই। এই ধরনের কোনও রাজনৈতিক ‘নবান্ন অভিযান’ হলে তার মোকাবিলা করে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশ। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নাম এ বিষয়ে জড়ানো ‘অমূলক’। যদিও সংগঠনের আহ্বায়ক শুভদীপ ভৌমিকের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে কোনও বড় প্রকল্পের শিলান্যাস বা উদ্বোধন হওয়ার আগে তা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হয়। কিন্তু ২১ এপ্রিলের বিষয়টি কেউই জানতেন না!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মেধাবী যুবক-যুবতীদের পেটে লাথি মেরেছেন। শিক্ষকদের পরিযায়ী শ্রমিক বানিয়ে দিয়েছেন। বাংলার যুবসমাজ তাঁকে ছেড়ে কথা বলবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই নবান্ন অভিযান করব। মুখ্যমন্ত্রী যে ওই দিন কলকাতায় থাকবেন না, তা আমাদের কাছে নীতিগত জয়।’’ প্রসঙ্গত, কলকাতায় না থাকলেও শিক্ষকসমাজের নামে যাঁরা ওই কর্মসূচি করবেন, তাঁদের গতিবিধির ওপর স্বরাষ্ট্র দফতরকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। ওই দিন ওই অভিযান ঘিরে যাতে কলকাতা এবং হাওড়া শহরের আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে, সে বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি থাকবে নবান্নের।