মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সদ্য প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত চলছে বেশ কয়েকদিন ধরে। এখনও তার সম্পূর্ণ সমাধান না হলেও এ নিয়ে এখন আর কিছু বলতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকেবিভিন্ন বিষয়েমন্তব্য করলেও তিনি জানিয়ে দেন ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না। আলাপন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রীবলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কোনও প্রশ্নের জবাব দেব না। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়চ্যাপ্টার ইজ ওভার।’’ ঘটনাচক্রে, ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আলাপন নিজেও।
কেন মমতা ওই কথা বললেন, তা স্বভাবতই আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, আলাপন-বিতর্ক এখনও টাটকা রাজ্য রাজনীতি তথা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে। সেই সময়ে মমতা কেন এমন বললেন, তা নিয়ে একাধিক অভিমত রয়েছে। অনেকে বলেছেন, মমতা যে আর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না, সেটাই তিনি ‘চ্যাপ্টার ওভার’ বলে বুঝিয়ে দিলেন। আবার অনেকের মতে, মমতা চাইছেন না, আলাপনকে নিয়ে নতুন কোনও সঙ্ঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত হোক। কারণ, আলাপন এখন একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা, তেমনই তাঁকে শো কজও করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁর জবাব চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা নতুন করে ওই বিষয়ে মন্তব্য করে নতুন কোনও সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন না বলেই অনেকে মনে করছেন। এখন দেখার, আলাপন শো কজের কী জবাব দেন এবং সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ করে।
গত শুক্রবার ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকা কলাইকুন্ডার বৈঠক ঘিরে শুরু হয় কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত। আলাপনকে দিল্লিতে সোমবার সকালে রিপোর্ট করতে বলা হয়। কিন্তু সেই তলবে সাড়া দেননি আলাপন। রাজ্য সরকারের দেওয়া মুখ্যসচিব পদে ৩ মাসের মেয়াদ বৃদ্ধি, যা কেন্দ্র প্রাথমিক ভাবে অনুমোদন করেছিল, তা-ও নেননি তিনি। নির্দিষ্ট দিনে অবসর নিয়ে নেন। তার পরেই পরেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করেন মমতা।
তবে তার আগেই সোমবার সকালে আলাপনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। ৫ পাতার চিঠিতেই মমতা প্রধানমন্ত্রীকে ‘স্মরণ করিয়ে দিয়ে’ জানান, তিনি কলাইকুন্ডার বৈঠক থেকে মুখ্যসচিবকে নিয়ে দিঘার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে ‘নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট ভাবে’ প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ‘স্পষ্ট ভাবে’ এই অনুমতি দিয়েছিলেন। মমতার যুক্তি ছিল, গোটা বিতর্কের সেখানেই ইতি টানা উচিত ছিল। এর পরে কেন্দ্রের তরফে কোনও চিঠি রাজ্যে না এলেও মোদী সরকারের শীর্ষ সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী এমন কোনও অনুমতি দেননি।
কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ সূত্রের এমনও দাবি যে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে আলাপনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে ফৌজদারি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকা পর্যালোচনা বৈঠকে যোগ না দিয়ে তিনি বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ভেঙেছেন। এই আইন ভাঙলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানারও বিধান রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা আইন আলাপনকে শো-কজ নোটিস পাঠানো হয়। এই বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ তথা দলের যুব শাখার সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলেছেন, ‘‘উনি বাংলার মানুষের জন্য কাজ করছিলেন। যিনি কাজ করছিলেন তাঁকে কেন শো-কজ! প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রয়োগ করা উচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওই আইন প্রয়োগ হোক। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও। কমিশনের ব্যর্থতা। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ওই আইন প্রয়োগ হোক। দেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, প্রতি দিন লাখ চারেক বলে মারা যাচ্ছেন, সকলকে বাড়িতে থাকার কথা বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তখন এ রাজ্যে এসে সভা করছেন। আর বলছেন, এত বড় সভা কখনও দেখিনি। ওর বিরুদ্ধে আগে ওই আইন প্রয়োগ হওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy