রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। অনেক জায়গায় নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে না, রাস্তাঘাটে ময়লা জমে থাকছে, ফলে নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে বার বার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি কঠিন বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার যে আধুনিক ব্যবস্থা, তা কার্যকর করতে বেশির ভাগ পুরসভাই ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য জুড়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ভাবে জঞ্জাল সাফাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে এমনটাই খবর। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশকে অনেকেই রাজনৈতিক বলে ব্যাখ্যা করছেন। কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনে শহুরে ভোটারদের বড় অংশ চলে গিয়েছিল বিজেপির পক্ষে। তাই বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে থাকতেই শহুরে ভোটারদের মন পেতে সব পুরসভা এলাকার আবর্জনা এবং জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য সরাসরি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সেই নির্দেশ পাওয়ার পরই পদক্ষেপ শুরু করেছে পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতর। এ বার থেকে রাজ্যের পুর দফতর সরাসরি এই কাজের দায়িত্ব নেবে। এখন পর্যন্ত প্রতিটি পুরসভা স্বতন্ত্র ভাবে এই কাজ পরিচালনা করত। কিন্তু সেই ব্যবস্থায় অসঙ্গতি এবং শিথিলতার অভিযোগ ওঠায় এ বার কেন্দ্রীয় ভাবে পরিকল্পনা করে জঞ্জাল সাফ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে যেমন শহরের সৌন্দর্যায়ন বাড়বে, তেমনিই কঠিন বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের প্রক্রিয়াও গতি পাবে। নবান্ন সূত্রে খবর, সম্প্রতি রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী বারাসত পুরসভা এলাকায় আবর্জনা জমে থাকার অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। শুধু বারাসত নয়, কলকাতা-সহ একাধিক পুরসভা এলাকাতেও নিয়মিত সাফাই না হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর তিনি নির্দেশ দেন, যাতে আর কোনও পুরসভাকে আলাদা ভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে না হয়, বরং রাজ্য সরকারই কেন্দ্রীয় ভাবে এই কাজের তত্ত্বাবধান করবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে শহরাঞ্চলের একাংশের ভোট বিজেপির দিকে চলে গিয়েছিল। মমতা চাইছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যাতে শহুরে ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়। শহরের নাগরিক পরিষেবাকে ঢেলে সাজিয়ে জনমানসে ইতিবাচক বার্তা দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির ভোটারদের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই অংশের ভোট ফের নিজেদের দিকে টানতে চাইছে শাসকদল।
আরও পড়ুন:
প্রশাসনিক মহলের মতে, কেন্দ্রীয় ভাবে এই কাজ পরিচালিত হলে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও গতি আসতে পারে। তবে স্থানীয় পুরসভাগুলির ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও নির্দেশ আসেনি। সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে নতুন পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ শহরের চেহারা বদলাতে পারে কি না এবং রাজনৈতিক ভাবে কতটা প্রভাব ফেলে, তা অবশ্য সময়ই বলবে।