Advertisement
১২ ডিসেম্বর ২০২৪
CM Mamata Banerjee at Digha

ইসকনের সাধুকে নিয়ে জগন্নাথ মন্দির দেখতে মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিঘার নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শনে যে ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস আসবেন, তা ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পারেনি। দিঘার জগন্নাথ ধামের ট্রাস্টি বোর্ডেও তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধবার বিকেলে দিঘায়। সঙ্গে রয়েছেন ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাসও।

মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধবার বিকেলে দিঘায়। সঙ্গে রয়েছেন ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাসও। ছবি: শুভেন্দু কামিলা।

কেশব মান্না
দিঘা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:২৬
Share: Save:

তাঁর দিঘা সফর, জগন্নাথ মন্দিরের কাজ ঘুরে দেখা, সবই ছিল পূর্ব নির্দিষ্ট। মন্দির উদ্বোধনের দিন ঘোষণার সম্ভাবনাও ছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিঘার নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শনে যে ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস আসবেন, তা ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পারেনি। দিঘার জগন্নাথ ধামের ট্রাস্টি বোর্ডেও তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জানালেন, ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ায় সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে এই জগন্নাথ ধাম। আগামী বছর থেকেই এখানে রথযাত্রাওঅনুষ্ঠিত হবে।

ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ঘিরে উত্তাল বাংলাদেশ। অভিযোগ উঠেছে সে দেশের সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারেরও। বিষয়টিকে সামনে রেখে এ-পার বাংলায় সরব গেরুয়া শিবির। এই আবহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় ইসকন কর্তাকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্দির পরিদর্শন ‘রাজনৈতিক পদক্ষেপ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ভুল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের যা করা দরকার, তা করছে না। যাঁরা আমাদের লোক, ফিরে আসতে চাইছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা উচিত।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কোথাও সিল করা হয়নি। ট্রেন এবং বিমান পরিষেবা চালু রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব আমরা পালন করছি। আর কেন্দ্রে শাসকদল যা করছে, তাতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি হতে পারে।’’

এই নিয়ে শুভেন্দুর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘২০২৬ সালে হিন্দু ভোট আপনি পাবেন না। আপনি ভেজাল হিন্দু। হিন্দুরা এক হচ্ছে। তাই আতঙ্কে এই সব করে বেড়াচ্ছেন।’’ তাঁর বার্তা, ‘‘এক জন জগন্নাথদেবের ভক্ত হিসাবে পরিষ্কার বলতে চাই, চার ধামের এক ধাম পুরী ধাম। পুরী ধামকে নকল করবেন না।’’ শুভেন্দুর আরও দাবি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ভিএইচপি মানুষের সাহায্য নিয়ে রামমন্দির তৈরি করল। সরকারি পয়সায় নয়। আর এখানে কাজ করেছে হিডকো। ওয়ার্ক অর্ডারে পরিষ্কার লেখা আছে, জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র। তাই আজ উনি ওখানে দাঁড়িয়ে যা বলেছেন, সব মিথ্যাচার!’’ রাধারমণকেও এক হাত নিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘পুরী ধামকে অপমানিত করা হয়েছে। তার সাক্ষী রইলেন রাধারমণ। পশ্চিমবঙ্গে সবই সম্ভব!’’

বুধবার দুপুর দেড়টা নাগাদ রাধারমণ দাসকে নিয়ে জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অখিল গিরিও। জগন্নাথ মন্দির চত্বরে তত ক্ষণে উপস্থিত মুখ্যসচিব মনোজকুমার পন্থ, ডিজি রাজীব কুমার, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। নির্মীয়মাণ মন্দিরে ঘুরে দেখে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বছর জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন এবং রথযাত্রার সূচনায় হাজির থাকবেন জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে রাধারমণও আসবেন।’’ প্রতিশ্রুতি দিলেন, রথযাত্রার জন্য সোনার ঝাঁটা নিজের সাম্মানিক থেকে ইসকনের মাধ্যমে বানিয়ে দেবেন।

হিডকো নির্মাণ করলেও আগামী দিনে মন্দির পরিচালনা করবে ট্রাস্ট কমিটি। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে সেই কমিটিতে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের চার জন, ইসকনের পাঁচ জন, জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ির প্রধান পুরোহিতের চার জন প্রতিনিধি-সহ ১৫-২০ জন থাকবেন। এ দিন বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ছোট অদ্বৈত রাজেশের সঙ্গে কথা বলে দিঘার মন্দিরে ধ্বজা উত্তোলনের জন্য পুরীতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বংশধরদের কয়েক জনকে পাঠানোর অনুরোধ করেন মমতা। কয়েক দিনের মধ্যে পুরীর মন্দিরের প্রতিনিধিরা দিঘায় আসবেন।

মমতা এ দিন বলেছেন, “প্রায় ২০ একর জায়গায়, পুরীর মন্দিরের সমান উচ্চতা বিশিষ্ট জগন্নাথ ধাম তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে আড়াইশো কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। হিডকো বেশ সুন্দর কাজ করেছে। দিঘা তীর্থক্ষেত্র এবং বিশ্ব পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে চলেছে।” এরই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন যে, “পুরীতে যেমন খাজা পাওয়া যায়, এখানে বাংলার ক্ষীরের গজা, ভুজিয়া, কালীঘাটের পেঁড়া— এই সব বিক্রি হবে।”

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দলের বিধায়ক বললেন, মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ হবে। আবার দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হবে অক্ষয় তৃতীয়ায়! এ সবই ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ব্যবহারের চেষ্টা।” প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়েরও বক্তব্য, “প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতায় ইন্ধন দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে কর্মসংস্থান, শিল্প, মানুষের রুটি-রুজির দিকে নজর না-দিয়ে শুধু ধর্মীয় তাস খেলা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

ISKCON Mamata Banerjee digha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy