তবে আকাশে লুকোনো ‘মেঘনাদ’কে নিয়ে যাত্রীদের আশ্বস্ত করছেন উড়ান বিশেষজ্ঞেরা। বলছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রতিটি যাত্রিবাহী বিমান এখন প্রবল ঝঞ্ঝার মোকাবিলা
করতেও সমর্থ।
প্রতীকী ছবি।
বিনা মেঘে ঝঞ্ঝাবাত! তা-ও মাটির কাছাকাছি নয়, সুনীল আকাশে। এবং সেটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আলঙ্কারিক নয় মোটেই। সেই সব আকস্মিক ঝঞ্ঝা ও দুর্যোগ বিভিন্ন বিমান ও বিমানযাত্রীদের মহাবিপদে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা ধরে। বাণ মেরে লক্ষ্মণকে কাবু করতে মেঘের আড়াল প্রয়োজন হয়েছিল ইন্দ্রজিৎ-মেঘনাদের। কিন্তু পাইলটদের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠা এই প্রাকৃতিক ‘মেঘনাদ’ মেঘের অপেক্ষা করছে না!
গত বছরে তো বটেই, তারও বেশ কিছু দিন আগে থেকে সমুদ্রোপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে। তার ধাক্কা লাগে জনবসতিতে, চাষের মাঠে, বনাঞ্চলে। পাইলট শিবিরের অনেকে জানান, একই ভাবে নির্মেঘ আকাশেও আকস্মিক ঝঞ্ঝা-দুর্যোগের মাত্রা বেড়েছে গত কয়েক বছরে। তার ধাক্কা সইতে হচ্ছে গগনবিহারী বিমানকে। সাফসুতরো আকাশ। কালো, বজ্রগর্ভ মেঘের নাম ও নিশান নেই। অথচ সেই পরিষ্কার আকাশেই ঘাপটি মেরে থাকে ওই ঝঞ্ঝার বিপদ! বিমান পরিবহণ এবং আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় পরিষ্কার আকাশে লুকিয়ে থাকা এই দুর্যোগের নাম ‘ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স (ক্যাট)’। যার হানায় মাঝ-আকাশে প্রবল ঝাঁকুনি খেতে পারে বিমান। পাইলটদের অভিজ্ঞতা বলছে, ইদানীং কলকাতায় নামাওঠার সময় বা শহরের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি বিমান এই ধরনের দুর্যোগে পড়ছে।
কলকাতা বিমানবন্দরের এক কর্তা জানান, সাধারণ ভাবে প্রধানত তিন ধরনের ঝঞ্ঝার কথা বলে থাকেন পাইলটেরা। ‘সিভিয়ার’ বা প্রবল, ‘মডারেট’ বা মাঝারি এবং ‘লাইট’ বা হালকা। ইদানীং আপাতশান্ত মেঘের মধ্যে মাঝারি বা হালকা ঝঞ্ঝার হামলার কথা জানাচ্ছেন পাইলটেরা। “পাঁচ-ছ’বছর ধরে আচমকা ঝঞ্ঝার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ক্যাটের সঙ্গে এর তফাত আছে। এ-সব ক্ষেত্রে আপাতশান্ত নিরীহ মেঘের ভিতরে ঢুকলে আমরা আচমকাই ঝঞ্ঝার মুখে পড়ে যাচ্ছি। আরও আশঙ্কার কথা, প্রথম দিকে যেটা হালকা ঝঞ্ঝা ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মাঝারি মাত্রার ঝঞ্ঝায় এসে ঠেকেছে। আর মাঝারিগুলো এখন রূপান্তরিত হয়েছে প্রবল ঝঞ্ঝায়। এবং এটা আকাশে যে-কোনও উচ্চতাতেই ঘটছে,” বলেন পাইলট ক্যাপ্টেন জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
মেঘমুক্ত আকাশে এমন ঝঞ্ঝা-দুর্যোগ বৃদ্ধির কারণ কী? এর জন্যও কি বিশ্ব উষ্ণায়ন দায়ী?
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, ‘‘এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে বিশ্ব উষ্ণায়ন এই ধরনের দুর্যোগের অন্যতম সম্ভাব্য কারণ হতেই পারে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, বায়ুমণ্ডলের দু’টি স্তরের মধ্যে তাপমাত্রার ফারাক যদি বেশি হয়, তা হলে ‘ক্যাট’ তৈরি হতে পারে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে তাপমাত্রার ফারাক বেশি হতে পারে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে। সেই জন্য এই দুর্যোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাপমাত্রার ফারাক বেশি হয় ঋতু পরিবর্তনের সময়। তাই ওই সব সময়ে এই ধরনের আচমকা দুর্যোগও বেশি হয়।
আবহাওয়া দফতরের খবর, অনেক সময় আগেভাগে তাপমাত্রার ফারাক ধরতে পারলে পাইলটদের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পাইলটদের অভিজ্ঞতা, মাটিতে রাখা আবহাওয়া পরিমাপক যন্ত্র কিংবা বিমানের ভিতরের রেডারেও এই চোরাগোপ্তা ঝঞ্ঝা ধরা পড়ছে না। তাই আকাশে সামনে মেঘ দেখলেই কোনও রকম ঝুঁকি না-নিয়ে পাইলটেরা সিট বেল্ট সাইন ‘অন’ করে দিচ্ছেন। কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর কাছে ঘুরপথে যাওয়ার অনুমতি চাইছেন। বিমানবন্দরের এক কর্তা বলেন, “চাইলেই সব সময় সেই অনুমতি দেওয়া যায় না। সেই সময় দু’পাশে, উপর-নীচে কোথায় বিমান আছে, তা দেখেই পাইলটকে ঘুরপথে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।”
তবে আকাশে লুকোনো ‘মেঘনাদ’কে নিয়ে যাত্রীদের আশ্বস্ত করছেন উড়ান বিশেষজ্ঞেরা। বলছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রতিটি যাত্রিবাহী বিমান এখন প্রবল ঝঞ্ঝার মোকাবিলা
করতেও সমর্থ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy