Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Contai

সাগরপাড়েই পলিথিন পেতে চলছে পড়াশোনা

এমনিতেই করোনা আবহে স্কুল বন্ধের জেরে পড়াশোনার পাঠ প্রায় চুকেছে। তার উপর দুর্যোগে বিধ্বস্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের বই-খাতাও সব ভেসে গিয়েছে সাগরে।

সাগরপাড়েই স্কুল। কাঁথিতে।

সাগরপাড়েই স্কুল। কাঁথিতে। নিজস্ব চিত্র।

কেশব মান্না
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৫:৪৭
Share: Save:

যে সমুদ্রের আছাড়িপিছাড়ি ঢেউ ঘর কেড়েছে, কেড়েছে বই-খাতা, তার ধারেই নিয়ম করছে বসছে ক্লাস। অদূরে ত্রাণ শিবির। সেখান থেকেই নিয়ম করে চলে আসছে পুতুল, সায়নী, রিঙ্কি, তন্ময়রা। খোলা আকাশের নীচে পলিথিন পেতে চলছে পড়াশোনা।

এই কচিকাঁচাদের বাড়ি ছিল কাঁথি-১ ব্লকের শৌলা এবং তার পাশের রঘুসর্দারবাড় গ্রামে। ইয়াসের জেরে দুর্যোগ আর জলোচ্ছ্বাসে ঘরদোর সব ভেসে গিয়েছে। বাবা-মায়ের হাত ধরে ওরা এসে উঠেছে ত্রাণ শিবিরে। সেখানে খাবার মিলছে। কিন্তু পড়াশোনা?

এমনিতেই করোনা আবহে স্কুল বন্ধের জেরে পড়াশোনার পাঠ প্রায় চুকেছে। তার উপর দুর্যোগে বিধ্বস্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের বই-খাতাও সব ভেসে গিয়েছে সাগরে। তাই তারা যাতে অন্তত পড়াশোনার ছোঁয়ায় থাকে, সে জন্য সাগর পাড়েই বিশেষ স্কুলের আয়োজন করেছে কাঁথি-১ ব্লকের নয়াপুট সুধীর কুমার হাইস্কুল। শুধু ওই স্কুলের শিক্ষক ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরাই নন, এ কাজে এগিয়ে এসেছেন আরও কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। কাঁথি চন্দ্রমণি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্বপ্না মণ্ডল বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েগুলোর সব কিছু জলে ভেসে গিয়েছে। তা বলে ওদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে তো শেষ হতে দেওয়া যায় না। তাই পুরনো পড়াই বারবার ঝালিয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহটা বজায় রাখার চেষ্টা করছি।’’ আর এক শিক্ষক রাজারাম মাঝির কথায়, ‘‘বছর দুয়েক ধরে মাস ফুরোলে শুধু মাইনে নিচ্ছি। তাই বাড়িতে বসে না থেকে এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার মূল স্রোতে যাতে ধরে রাখতে পারি সেই চেষ্টাটুকুই করছি।’’

বুধবার থেকে ত্রাণ শিবিরের পাশেই চলছে এই স্কুল। রামকৃষ্ণ মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং স্থানীয় একটি মন্দিরের পাশে ফাঁকা জায়গায় পলিথিন পেতে ক্লাস হচ্ছে। বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যে ছটা, প্রথম থেকে একেবারে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলে পড়াশোনা। তবে বইখাতা, জামা-কাপড় না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে বুধবারই ত্রাণ শিবিরে গিয়ে পড়ুয়াদের হাতে স্কুলের ব্যাগ, খাতা-পেন তুলে দিয়েছেন বহু শুভানুধ্যায়ী। হাসি ফুটেছে কচি মুখগুলোয়।

নবম শ্রেণির পুতুল বেরা বাবা-মায়ের সঙ্গে ত্রাণ শিবিরে রয়েছে এক সপ্তাহ হল। বাবা-মা যখন ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামতের কথা ভাবছেন, তখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিয়ম করে এই বিশেষ স্কুলে আসছে পুতুল। তার কথায়, ‘‘লকডাউনের সময় স্কুলের শিক্ষকরা গ্রামে গিয়ে আমাদের নিয়মিত পড়াতেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর বই-খাতা জলে ভেসে যাওয়ায় ভেবেছিলাম আর পড়াশোনা করতে পারব না। কিন্তু আবার পড়ার সুযোগ পেয়ে ভাল লাগছে।’’ চতুর্থ শ্রেণির সায়নী মণ্ডল জানায়, ‘‘অনেক দিন পরে স্কুলের মতো একসঙ্গে বসে পড়াশোনা করতে পেরে খুশি হয়েছি।’’

নয়াপুট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ই বলেন ‘‘গত এক সপ্তাহ ধরে পাঁচশোরও বেশি পরিবারকে দু’বেলা করে রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু দুর্গত এলাকার ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশোনোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য আমরা এ ধরনের প্রয়াস
চালিয়ে যাচ্ছি।’’

বৃহস্পতিবার ত্রাণশিবিরের পাশে এই স্কুল পরিদর্শন করেন কাঁথি ১-এর বিডিও তুহিনকান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার সব পড়ুয়াদের বইপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। আমাদের অফিসে কিছু সরকারি বই এখনও রয়েছে। সেই বই যদি পড়ুয়াদের কাজে লাগে তবে
দেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Contai Classes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy