গঙ্গারামপুরে মাথা ফাটল এএসআই বিভু ভট্টাচার্যের। ছবি: অমিত মোহান্ত।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যের কোথাও বিজয় মিছিল হবে না। তার দু’দিনের মাথায় রক্ত ঝরল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে সেখানে বিজয় মিছিল শুরু হওয়ার পরেই পথ আটকায় পুলিশ। প্রশাসনের যুক্তি, ১৪৪ ধারা জারি থাকায় মিছিল করা সম্ভব নয়। বিজেপি কর্মীরা সে কথা না শুনে ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে যেতেই দু’পক্ষের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। সংঘর্ষে জখম হন বেশ কয়েক জন পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার ও বিজেপি কর্মী। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ছোড়া এবং শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ করে বিজেপি। দিলীপ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা করছেন, তা পাগলামি।’’ তিনি জানিয়ে দেন, জোর করে আটকালে দল সংঘাতের পথেই যাবে।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু বিজেপিকেই দুষে বলেন, ‘‘দিলীপবাবু পরিস্থিতি অশান্ত করতে চাইছেন। পুলিশ-প্রশাসনকে আক্রমণ করছেন। অসামাজিক লোকেরা এই সব করে।’’ পুলিশও জানিয়েছে, ইট-পাথর ছুড়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে বিজেপিই।
বিজেপি-র ‘অভিনন্দন যাত্রা’য় দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবারই দক্ষিণ দিনাজপুরে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল পুলিশ। বিজেপির মিছিলও আটকে দেওয়া হয়। তখনই জেলা বিজেপি কর্মীরা হুঁশিয়ারি দেন, রাজ্য সভাপতি এলে তাঁরা মিছিল করবেনই। এ দিন দুপুরে বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার ও জেলা সভাপতি শুভেন্দু সরকারকে নিয়ে গঙ্গারামপুরের কালীতলায় দলীয় অফিসে আসেন দিলীপ ঘোষ। সেখান থেকে বেরিয়ে বিজেপি কর্মীরা মিছিল করে পুনর্ভবা সেতু টপকানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। অভিযোগ, সেই সময়ে বিজেপি কর্মীরা দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে মারধর করে এক জনের পা ভেঙে দেন। তার পরই পুলিশ লাঠিচার্জ করে। শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ।
গঙ্গারামপুরে পাথর হাতে এক হামলাকারী। ছবি: অমিত মোহান্ত
স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে বিজেপি কর্মীরা পাথর ছুড়তে থাকে, বাঁশ দিয়েও হামলা চালায়। পুলিশ জানিয়েছে, ইটের আঘাতে মাথা ফেটেছে এএসআই বিভু ভট্টাচার্যের। আরও তিন পুলিশকর্মী গুরুতর আহত হন। তাদের দু’টি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ শূন্যে তিন রাউন্ড গুলিও চালিয়েছে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে এই খণ্ডযুদ্ধ চলে। এর মধ্যে দিলীপ ঘোষ ও বালুরঘাটের সাংসদকে নিরাপত্তারক্ষীরা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান। গোলমালে জড়িত সন্দেহে ১০ জন বিজেপি কর্মীকে আটক করা হয়েছে। গঙ্গারামপুর শহরে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়িতে। নিজস্ব চিত্র।
এর পরেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে। দিল্লিতে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘রাজনীতিতে দস্তুর হল, জেতার পরে বিজয়ী প্রার্থীরা সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে শোভাযাত্রা করেন। আজ দক্ষিণ দিনাজপুরে বিজেপির শোভাযাত্রায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তাতে একাধিক বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন।’’ দিলীপ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কী হয়েছে একটা মিছিল করলে? এটা কি কাশ্মীর হয়ে গিয়েছে নাকি?’’
তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা বক্তব্য, প্রশাসন যদি মিছিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে সেটা যে কোনও দায়িত্বশীল নেতারই মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে শুক্রবারই যখন এখানে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, তখন দিলীপের উচিত ছিল আরও সংযত হওয়া। তার বদলে তিনি প্ররোচনা দিয়েছেন। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘অশান্তি ছড়াতে ওঁরা নিজেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’ তৃণমূল নেত্রী অর্পিতা ঘোষের যুক্তি, ‘‘রাজ্যের প্রধান যখন চাইছেন না, তখন বিজেপি সর্বত্র অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy