কামদুনি কাণ্ডে ‘বিচার’ চেয়ে মিছিল ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে গান্ধী-মূর্তি পর্যন্ত। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কামদুনির ঘটনায় বিচার চেয়ে আবার নাগরিক মিছিল হল কলকাতায়। তবে কামদুনি-কাণ্ডের পরে পরে প্রতিবাদ মিছিলে যে উদ্যম ও উদ্দীপনা ছিল, শহরে এ বারের মিছিলে তেমন কিছু চোখে পড়ল না। পথে দেখা গেল না পরিচিত বিশিষ্ট মুখেদের। মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়াল-সহ কামদুনিতে যাঁরা লড়াই চালাচ্ছেন, তাঁরা অবশ্য ছিলেন। পতাকা ছাড়া নাগরিক মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রতিনিধিরাও। একই দিনে কামদুনিতে বিজেপির মহিলা মোর্চার ডাকে মিছিলে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে শামিল হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য দুই উদ্যোগকেই কটাক্ষ করেছে।
উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ১০ বছর আগে ধর্যণ ও খুন করা হয়েছিল এক কলেজ-ছাত্রীকে। সেই ঘটনায় নিম্ন আদালত যে তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, সম্প্রতি তাদের দু’জনের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই তিন জনের এক জনকে খালাস করে দেওয়া হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত আরও তিন জনও হাই কোর্টের রায়ের পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। রাজ্য সরকার অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। প্রতিবাদীদের অবশ্য অভিযোগ, রাজ্য সরকার এবং সিআইডি-র গাফিলতির জন্যই ধর্ষিতা ও নিহত ছাত্রী বিচার পেলেন না। ‘বিচার’ চেয়েই মঙ্গলবার নাগরিক মিছিল হয়েছে ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত। মৌসুমী যেখানে বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উপরে আমাদের কোনও আস্থা নেই। আমরা আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব।’’ মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘কামদুনি বলছে, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’।
মিছিলে এ দিন ছিলেন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য, অসিত মিত্র, কৃষ্ণা দেবনাথ, কৌস্তভ বাগচী, সুমন রায়চৌধুরী, সিপিএমের কনীনিকা ঘোষ, আত্রেয়ী গুহ প্রমুখ। শামিল হয়েছিলেন একাধিক মহিলা সংগঠনের প্রতিনিধিরা। কেন এই প্রতিবাদে আগের মতো জৌলুস নেই, সেই প্রশ্নে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রদীপবাবুর মত, ‘‘নানা গাফিলতি এবং সদিচ্ছার অভাবের মধ্যেও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে যে সব তথ্যপ্রমাণ জমা পড়েছিল, তার ভিত্তিতে নিম্ন আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল। একই তথ্যপ্রমাণের নিরিখে হাই কোর্টে কী ভাবে সাজা লাঘব হয়ে গেল, মানুষের মধ্যে সেই প্রশ্ন উঠছে। এই সব কারণে হয়তো একটা বিভ্রান্তি কাজ করছে।’’
রাজারহাট থানার কৃষ্ণমাটি মোড় থেকে কামদুনি মোড় পর্যন্ত এ দিনই বিজেপির মহিলা মোর্চার ডাকা মিছিলে হেঁটেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এবং দলের ২০ জন বিধায়ক। শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘আমরা বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নই। সিআইডি যে ভাবে এই মামলাকে দুর্বল করেছে এবং গত ১০ বছরে ১৫ বার সরকারি কৌঁসুলি বদল করে এই মামলাটাকে যে ভাবে খতম করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আমরা তার প্রতিবাদ করছি।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে লোক দেখানো মামলা করেছে। সকাল বেলা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন হচ্ছে এবং বিকেলে সূর্য ডোবার আগে এই ধর্ষকদের মুক্তি দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে! শুনলে অবাক হবেন, মৌসুমী, টুম্পা বা বাদীদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়নি। যারা ধর্ষক, তাদের বাড়ির পুলিশ মোতায়েন হয়েছে যাতে তারা সুরক্ষিত থাকে। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, মমতার সরকার ও তার পুলিশ ধর্ষকদের রক্ষা করে!’’
শুভেন্দু জানিয়েছেন, কামদুনির নিহত ছাত্রীর পরিবার, তাঁদের আইনজীবী ও প্রতিবাদী মৌসুমী-টুম্পাদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তাঁরা যদি সুপ্রিম কোর্টে যান, তা হলে পছন্দমতো আইনজীবী দিয়ে বিজেপি সহায়তা করবে বলে বিরোধী দলনেতা তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে বিজেপির মিছিলে এ দিন টুম্পারা থাকতে পারবেন না, তাঁরা কলকাতায় নাগরিক মিছিলে যাবেন, তা-ও তাঁরা বিরোধী নেতাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন।
জনমতের চাপেই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার লোক দেখানো পদক্ষেপ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। বহরমপুরে এ দিন তিনি বলেছেন, ‘‘সারা বাংলার গণ-রোষের কারণে মৃতের গায়ে আতর ছড়াতে মানুষকে আর এক বার ধোঁকা দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার গল্প শোনাচ্ছে বাংলার তৃণমূল। গোটা মামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এত দিন উদাসীন থাকল, এখন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার গল্প শোনাচ্ছে! এই নাটক দেখতে আমরা অভ্যস্ত।’’
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার তদন্ত করিয়েছিল। তদন্তে নিম্ন আদালতে অভিযুক্তদের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। পরে উচ্চতর আদালতে রায় বদল হয়েছে। রাজ্য সরকারই তো নতুন আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। ফলে, সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ অর্থহীন।’’ সেই সঙ্গেই বিরোধীদের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যে সিপিএম মিছিল করছে, তাদের আমলে ধানতলা, বানতলার ঘটনা ঘটেছে। সেই সিপিএম সাধু সেজে নাচছে! যে বিজেপি মিছিল করছে, যাদের রাজ্যগুলি মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে শিরোনামে, তারা এখানে সাধু সাজছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy