এই ‘অফার লেটার’ নিয়ে বিতর্ক।
আইটিআই পড়ুয়াদের নিয়োগ-বিতর্কে প্রায় দু’সপ্তাহ পরে মুখ খুলল রাজ্য সরকার। সোমবার মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নবান্নে জানান, যে নিয়োগকারী সংস্থার (এগ্রিগেটর) মাধ্যমে নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, সেই সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে বণিকসভা কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)। আগামী দিনে এমন ভুল যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে সিআইআই এবং রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে নজর রাখবে।
স্বরাষ্ট্রসচিব, কারিগরি শিক্ষা সচিব এবং সিআইআই-প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল। ১০৭ জনকে দেওয়া নিয়োগপত্র নিয়ে বিভ্রান্তি হয়েছিল। সিআইআইকে আমরা জানিয়েছিলাম। ১৬ সেপ্টেম্বর সিআইআই এফআইআর করেছে ওদের এক এগ্রিগেটরের বিরুদ্ধে। ওই পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দেব না। তাঁদের একাধিক চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’ মুখ্যসচিবের সংযোজন, ‘‘বড় কাজ করতে গেলে ভুল হয়। তবে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নিবিড় যাচাইয়ের ব্যবস্থা করেছি। রাজ্য সরকার এবং সিআইআই নিয়োগপত্র যাচাই করবে।’’
গত ১২ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে আইটিআই পড়ুয়াদের নিয়োগপত্র দিয়েছিল রাজ্য সরকার। পরে হুগলির ১০৭ জন পড়ুয়ার ‘নিয়োগপত্র’ নিয়ে বিতর্ক হয়। ওই পড়ুয়াদের অনেকেরই অভিযোগ, গত ১৪ সেপ্টেম্বর হুগলি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এইচআইটি) থেকে তাঁরা গুজরাতের একটি সংস্থায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার ভুয়ো ‘অফার-লেটার’ পেয়েছিলেন।
মুখ্যসচিব এ দিন জানিয়েছেন, ১০৭ জনের চাকরি বা ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বার নির্ভর করছে তাঁরা কোথায় যাবেন। এ দিনই ওই সব পড়ুয়ার একাংশ জানান, ভুয়ো ‘অফার-লেটার’ পাওয়ার পরে তিন দিন অন্য রাজ্য থেকে মাসে ১০-১১ হাজার টাকা বৃত্তির কাজের জন্য ফোন এসেছিল। ওই টাকায় ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কাজের উৎসাহ তাঁরা দেখাননি।
ওই পড়ুয়াদের মধ্যে গোঘাটের হাজিপুরের রকি ঘোষাল বলেন, ‘‘ভুয়ো অফার-লেটার পাওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশের দু’টি সংস্থা ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে ইচ্ছুক হলে যোগাযোগ করতে বলেছিল। বাইরের রাজ্যে এত কম বেতনে কাজ করা যায়! যোগাযোগ করিনি।’’ আরামবাগের শ্রীনিকেতন পল্লির টিনা চক্রবর্তীও একই কথা জানান। পুরশুড়ার শুক্লা কোলে জানিয়েছেন, রাজস্থান থেকে ১১ হাজার টাকা বেতনে চাকরির ফোন এসেছিল। তিনি ‘না’ বলে দিয়েছেন।
মুখ্যসচিবের ব্যাখ্যা, এই ধরনের ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ করে বা সরাসরি— দু’ভাবেই চাকরি মেলে। তা নির্ভর করে যে শিল্প সংস্থা নিয়োগ করছে, তাদের উপর। তাঁর কথায়, ‘‘একটা জিনিস স্পষ্ট করে দিচ্ছি। রাজ্য সরকার চাকরি দিচ্ছে না। সরকার একটা মঞ্চ দিচ্ছে, যার মাধ্যমে বেসরকারি শিল্প সংস্থা তাদের প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ করছে। হাজার হাজার ছেলেমেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করেছে সিআইআই।’’
ওই ঘটনার পরে সরব হয়েছিল বিভিন্ন মহল। তবে মুখ্যসচিবের মতে, কিছু ব্যক্তি এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সরকারের বদনাম করার চেষ্টা করেছে। বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার ভুয়ো চাকরি দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন কোনও ঘটনা আর কারও ক্ষেত্রে ঘটলে সরাসরি আমাদের বা সিআইআই-এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’’
তবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘বেসরকারি সংস্থা কোথায় প্রশিক্ষণ দেবে বা শিক্ষানবিশি করাবে, তার মধ্যে সরকারের কিছু থাকার কথা নয়। সরকার যখন তার মধ্যে কৃতিত্ব নিতে ঢুকেছিল, তা হলে জালিয়াতির দায়ও সরকারকে নিতে হবে। এই গোটা প্রক্রিয়ায় থাকা, উপস্থিত হওয়া এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্য সচিবের বিরুদ্ধেও এফআইআর হবে না কেন?’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন বলেন, ‘‘প্রথমত, ওই প্রকল্পের নাম ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা’। জোর করে মুখ্য সচিবেরা ‘উৎকর্ষ বাংলা’ বলছেন। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি সংস্থার প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি-প্রার্থীরা নিয়োগ পেতেই পারেন। এর মধ্যে সরকার ঢুকবে কেন? দুর্নীতি এবং বেকারত্ব সব চেয়ে বড় সমস্যা এখানে। এই অবস্থায় মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য মুখ্য সচিব, কারিগরি শিক্ষা সচিব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিলে ভুয়ো কাজ করিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ভাবমূর্তির বড় ক্ষতি হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy