Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Hemtabad

বিধায়ক মৃত্যুতে পাকড়াও এক, আরও এক জনকে খুঁজছে পুলিশ

বিধায়কের মৃত্যু রহস্যর কিনারা করতে নিলয় সিংহ, মামুদ আলি, গোপাল মালাকার-সহ যে নাম উঠে আসছে, সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চাইছেন গোয়েন্দারা।

দেবেন্দ্রনাথ রায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

দেবেন্দ্রনাথ রায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ২০:৫৪
Share: Save:

হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর পিছনে কোনও আর্থিক লেনদেন জড়িয়ে রয়েছে। তদন্তে নেমে এমনটাই মনে করছে সিআইডি। এই মনে হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে দাবি রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে। তবে সব মিলিয়ে এই তদন্তে তিন ব্যক্তি এবং একটি মিনি ব্যাঙ্কের যোগসূত্রকেই আতসকাচের তলায় এনে দেখতে চাইছেন গোয়েন্দারা। ইংরেজবাজার থেকে নিলয় সিংহ নামে এক ব্যক্তিকে পাকড়াও করে সিআইডির হাতে তুলে দেয় পুলিশ। মামুদ আলি নামে আর এক অভিযুক্তের খোঁজে চলছে তল্লাশি।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবেন্দ্রনাথের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর সোমবার তাঁর স্ত্রী চাঁদিমা দেবী পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে দুই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন তিনি— মামুদ আলি এবং নিলয় সিংহ। আবার ঝুলন্ত দেবেন্দ্রনাথের জামার পকেট থেকে যে চিরকুট পাওয়া গিয়েছে, সেখানেও ওই দু’জনের নাম, ছবি এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে লেখা ছিল— তাঁর মৃত্যুর জন্য এরাই দায়ী। এর পর পুলিশ মালদহের বাসিন্দা ওই দুই ব্যক্তির খোঁজ শুরু করে। ইংরেজবাজার থেকে নিলয় সিংহকে ধরে সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে জেরা করে জানা যায়, নিলয় এক সময়ে রায়গঞ্জের সহকারি ব্যাঙ্ক (রায়গঞ্জ সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক)-এর কর্মী ছিলেন। সেখানে থাকার সূত্রেই আলাপ হয়েছিল দেবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে। দেবেন্দ্রনাথের বাড়িতে তিনি প্রায় পাঁচ বছর ভাড়াও ছিলেন।

শুধু চাঁদিমা দেবীর লিখিত অভিযোগপত্র বা দেবেন্দ্রনাথের চিরকুটই নয়, রায়গঞ্জ পুলিশের কাছে অন্য ভাবেও এই নিলয়ের নাম এসেছে। পুলিশের দাবি, বিধায়ক-মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার রাতেই মহিদুল রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। মহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, হেমতাবাদের বিধায়ক বিভিন্ন সময়ে তাঁকে জানিয়েছিলেন, নিলয় সিংহ নামে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে বহু টাকার প্রতারণা করেছেন। সেই প্রসঙ্গে বিধায়ক নাকি বেশ কয়েক বার মোহিনীগঞ্জ মিনি ব্যাঙ্ক (মোহিনীগঞ্জ বারবারি কৃষি সমবায় সমিতি)-এর কথাও উল্লেখ করেছেন বলে পুলিশের কাছে জানান মহিদুল।

আরও পড়ুন: আর্থিক লেনদেনের জালে ফেঁসে গিয়েছিলেন দেবেন্দ্রনাথ! সন্দেহ পুলিশের

টাকা প্রতারণার যে কথা মহিদুল জানিয়েছেন পুলিশকে, ধরা পড়ার পর তা নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি নিলয়। নিলয় প্রাথমিক ভাবে জেরায় জানিয়েছেন, মামুদ ওরফে মাবুদ আলি নামে চাঁচলের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল— সিআইডি সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, হেমতাবাদের বিধায়কের মোবাইলের কল রেকর্ডস থেকে জানা গিয়েছে, মামুদের সঙ্গে বিধায়কের প্রায় প্রতি দিনই কথা হত। এক বার নয় বেশ কয়েক বার। তদন্তে জানা গিয়েছে, গত ২৬ জুন নিজের মোবাইল হারিয়ে ফেলেন দেবেন্দ্রনাথ। তার পর থেকে তিনি স্ত্রী-র মোবাইল ব্যবহার করতেন। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টায় মামুদকে ফোন করেন দেবেন্দ্রনাথ। তবে এই দ্বিতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ চাঁচলের বাসিন্দা মামুদ আলির এখনও কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ।

আর বিধায়কের ওই কল লিস্ট ঘেঁটেই গোয়েন্দারা তৃতীয় এক ব্যক্তির নাম পেয়েছেন। তিনি রায়গঞ্জের কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা গোপাল মালাকার— মোহিনীগঞ্জ মিনি ব্যাঙ্কের একটি শাখার ম্যানেজার। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় নিলয় জানিয়েছেন, মামুদের কাছেই তিনি গোপালের কথা শুনেছেন।

আরও পড়ুন: কয়েক মাসেই চলে যেতে পারে করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা, বলছে নয়া গবেষণা

আরও একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (নাবার্ড) থেকে বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়গঞ্জের ‘হোটেল এমবাসি’র কাছে থাকা জমি বন্ধক রেখে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন।

গোয়েন্দারা আপাতত ওই তিন ব্যক্তি এবং মোহিনীগঞ্জ মিনি ব্যাঙ্কের উপরেই আতসকাচ ঘোরাতে চাইছেন। বিধায়কের মৃত্যু রহস্যর কিনারা করতে নিলয় সিংহ, মামুদ আলি, গোপাল মালাকার-সহ আরও যে নাম উঠে আসছে, সেই বৃত্তটি সম্পূর্ণ করতে চাইছেন। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘যে নামগুলো উঠে আসছে তাঁরা সবাই মিনি ব্যাঙ্কিং এবং সুদের কারবারের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত। নিলয়কে আমরা জেরা করছি। তাঁর কথা মিলিয়ে দেখা হবে মামুদের সঙ্গে। এই দু’জনের বয়ান পেলেই বোঝা যাবে কী ভাবে তারা বিধায়ককে প্রতারণা করেছিলেন। সঙ্গে গোপাল মালাকারের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছি আমরা।” সিআইডি-র তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মামুদকে পাকড়াও করার জন্য তল্লাশি চলছে। এ দিন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, চিরকূটে যাঁদের নাম পাওয়া গিয়েছে তাঁরা মিনি ব্যাঙ্কিং এবং সমান্তরাল ব্যাঙ্কিং সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।

আরও পড়ুন: কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কনটেনমেন্ট জোনগুলি দেখে নিন

সব মিলিয়ে পুলিশের ধারণা জোরালো হচ্ছে, এই মৃত্যুর পিছনে রয়েছে আর্থিক লেনদেন। প্রতারণার ওই চিত্র প্রকাশ্যে এলেই মৃত্যু রহস্যের কিনারা করা সম্ভব বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy