Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
CPM- Congress

ধাক্কা বিজেপির, সমঝোতার সওয়াল ফের কংগ্রেস-বামে

রাজ্যে ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটে কত দূর প্রকৃত জনসমর্থনের প্রতিফলন এবং কতটা ‘জল’ আছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে বিস্তর।

ফের সমঝোতার চর্চা ফিরে এল বাম ও কংগ্রেস শিবিরে।

ফের সমঝোতার চর্চা ফিরে এল বাম ও কংগ্রেস শিবিরে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৩
Share: Save:

উপনির্বাচন ঘিরে বড় কোনও প্রত্যাশা কোনও পক্ষেই ছিল না। কিন্তু আলাদা লড়ে পরিস্থিতি বুঝে নেওয়ার পরে ফের সমঝোতার চর্চা ফিরে এল বাম ও কংগ্রেস শিবিরে।

রাজ্যে ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটে কত দূর প্রকৃত জনসমর্থনের প্রতিফলন এবং কতটা ‘জল’ আছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে বিস্তর। কিন্তু পরপর উপনির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির ভোট কমছে। এখনও পর্যন্ত এই প্রবণতায় ভোটের অঙ্কে লাভ হচ্ছে তৃণমূলেরই। তবে বিজেপির পতনের জেরে তৃণমূল-বিরোধী পরিসরে জমি শক্ত করার জন্য বাম ও কংগ্রেস-সহ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হয়ে লড়তে হবে, এই সওয়াল উঠে আসছে দুই শিবির থেকেই।

প্রদেশ কংগ্রেসে সভাপতি বদলের পরে দলের জেলা নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, উপনির্বাচনে একা লড়ে শক্তি যাচাই করা হোক। ভোট পাওয়ার নিরিখে সেই পরীক্ষার ফল শোচনীয় হয়েছে তো বটেই, দলের পতাকা নিয়ে এলাকায় কাজ করার মতো স্থানীয় সংগঠনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাঁচ জেলার ছয় কেন্দ্রের অধিকাংশ বুথে লোকও দিতে পারেনি কংগ্রেস। উপনির্বাচনের ফলকে ‘অপ্রত্যাশিত’ না-ধরলেও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী, প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ দলের বড় অংশই মনে করছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বামেদের সঙ্গেই চলা উচিত। তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকাকালীন ২০১৬ সালে বামেদের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস যে প্রধান বিরোধী দল হয়েছিল বা ২০২১ সালে ‘মেরুকরণের ভোটে’ ব্যর্থ হলেও তার পরে একমাত্র উপনির্বাচনে (সাগরদিঘি) তৃণমূলকে হারাতে পেরেছিল বাম-কংগ্রেসের জোট, সেই তথ্য স্মরণ করিয়ে অধীর বলছেন, ‘‘আরএসএস-বিজেপি পিছন থেকে ২০১৬ সালে তৃণমূলকে মদত না-করলে ফল অন্য রকম হত। মনে রাখতে হবে, বিজেপির কাছে তৃণমূল মূল বিপদ নয়। বিজেপির মতাদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস ও বামপন্থীরা। তাই বিজেপির দুর্বল হওয়ার সুযোগ আমাদের নিতে হবে।’’

একই সুরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে পরপর বিজেপি ধাক্কা খাচ্ছে, এটা মাথায় রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একসঙ্গে নিয়ে চলার লক্ষ্যেই আমরা আছি।’’একই ভাবে হাড়োয়া কেন্দ্রে বামফ্রন্ট সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থীর নির্বাচনে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা নাগরিকপঞ্জি-বিরোধী যুক্ত মঞ্চের নেতা প্রসেনজিৎ বসুও বলেছেন, ‘‘বিজেপির জনসমর্থন হ্রাস পাওয়া এই উপনির্বাচনের ইতিবাচক দিক। তৃণমূলের চূড়ান্ত অপশাসন, দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়ন সত্ত্বেও বাংলার জনগণ সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে বিকল্প হিসেবে মেনে নিচ্ছে না। এই প্রেক্ষিতে স্বৈরাচারী তৃণমূল এবং সাম্প্রদায়িক বিজেপি বিরোধী সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করা প্রয়োজন।’’ দুই শক্তির বিরুদ্ধে বৃহত্তর বাম ঐক্যকেও একই সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন নেতৃত্ব।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ইতিমধ্যে একাধিক বার বলেছেন, তৃণমূল ও বাম, উভয়েই ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক। কারও সঙ্গে জোট হবে কি না, এআইসিসি ঠিক করবে। দলের মধ্যেই তার ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কয়েক জন বিধায়ক পাওয়ার লক্ষ্যে কংগ্রেস কি তা হলে ভবিষ্যতে তৃণমূলের নৌকোয় উঠতে পারে? উপনির্বাচনের ফলের পরে বাম-সওয়াল প্রসঙ্গে শুভঙ্কর অবশ্য বলছেন, ‘‘যে কোনও দলেরই লক্ষ্যে নিজেদের শক্তি বাড়ানো। তার জন্য আন্দোলনের রাস্তায় থাকতে হবে। আর যৌথ ভাবে চলতে গেলে বসে পর্যালোচনা করতে হবে, কোথায় ভুল হচ্ছে। নতুন করে ভাবতে হবে, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন নাম নিয়ে যৌথ কর্মসূচি নিতে হবে।’’

শুধু ভোটের সময়ে সমঝোতা করলে যে হয় না, সেই কথা বলছেন প্রদীপও। পাশাপাশিই অধীর মনে করেন, বহু বছর রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় না-থাকায় তাদের নিয়ে মানুষের ক্ষোভ কম। সেই ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’র সঙ্গে বামেদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলাই সমঝোতার রসায়ন। সিপিএম এখনও ব্রিগেড ভরাতে পারে, কংগ্রেসকে একটা মিছিল করতে গেলে লোক খুঁজতে হয় অনেক জায়গায়! এই বাস্তব মাথায় রেখেই দু’পক্ষের নেতৃত্বকে পথ ঠিক করতে হবে বলে তাঁর মত।

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM trinamool BJP CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy