বিভিন্ন ধরনের চকলেট বোমা। নিজস্ব চিত্র
শব্দ ছাড়া বাজি হয় নাকি!
সকাল সাড়ে ছ’টায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার শব্দবাজির আঁতুড়ঘর চম্পাহাটি এলাকার বেগমপুর গ্রামের এক বাজি ব্যবসায়ী চকলেট বোমা সম্পর্কে এমনই যুক্তি দিলেন। বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে ফোন করে চকলেট বোমা নেওয়ার কথা বলায় প্রথমে রাজি হননি ওই ব্যবসায়ী। জানিয়েছিলেন, পুলিশের নজরদারি এ বছর খুব কড়া। দিন চারেক আগে অবশ্য নিজেই ফোন করে বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে এসে জিনিসটা নিজের চোখে দেখে যান। পরে বাড়িতে পাঠিয়ে দেব। এ বার চকলেটের তিন রকম ‘ভ্যারাইটি’ করেছি।’’
সেই মতো সকাল সকাল বেগমপুরে পৌঁছে দেখা গেল, বস্তা বস্তা চকলেট নিয়ে বসে রয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। তিন ধরনের চকলেট বোমার প্যাকেট এগিয়ে দিলেন তিনি। সোনালি রঙের রাংতা মোড়া ছোট আকারের চকলেট বোমা। লাল-বেগুনি রঙের রাংতায় মোড়া বড় চকলেট। আর মাঝারি আকারের বাজির রং লাল-বেগুনি-গোলাপি। এ বার তিন ধরনের চকলেট বোমা তৈরির ব্যাখ্যাও পাওয়া গেল। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘মশলা কম-বেশি করা রয়েছে। আওয়াজের একটু রকমফের হবে আর কী। তবে খুব বেশি নয়। এত দরাদরি করেন লোকজন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবই একই রকম দেখতে। মুনাফাটা একটু বেশি হবে।’’
কালীপুজোর বহু আগে থেকেই এ বার পুলিশ শব্দবাজি নিয়ে তৎপর হয়েছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার শব্দবাজির রমরমা রুখতে ড্রোন ওড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন বলা শোনা যাচ্ছে। ওই ব্যবসায়ী অবশ্য বললেন, ‘‘ছাড়ুন তো। ও সব প্রতি বছর হচ্ছে। আমার ৫৫ বছর বয়স। প্রায় ৩০ বছর চকলেট বোমার কারবার করছি। কত আইন-কানুন দেখলাম। আজ পর্যন্ত খদ্দের কমতে দেখলাম না। উল্টে বেড়েই চলেছে।’’ পুলিশি নজরদারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই এলাকায় কী ভাবে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বাজি তৈরি হয়, সে কথাও শোনালেন তিনি। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘চম্পাহাটি-সহ তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় হাজার সাতেক বাড়িতে গিয়ে দেখুন। প্রতি বাড়িতে চকলেট বোমা তৈরি করা হচ্ছে। বাড়ির আনাচ-কানাচে বারুদ উড়ছে। ওই সব জায়গায় বাড়ির বেড়ালের পায়েও বারুদ লেগে থাকে। তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় ঘরে ঘরে কয়েক লক্ষ কেজি চকলেট বোমা তৈরি হয়। চাহিদা আছে বলেই তো তৈরি হচ্ছে।’’
ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘‘চাহিদা আর মুনাফা দুই-ই আছে বলে এলাকার মানুষ শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক এই চার মাস সব কাজ ফেলে চকলেট বোমা তৈরি করে। আশ্বিনের শেষের দিকে প্রশাসন সজাগ হয়। তত দিনে বাজি তৈরির পরে অর্ধেকই বিক্রি হয়ে যায়। কালীপুজোর সময়ে স্থানীয় লোকজনকে বিক্রি করি আমরা।’’
দিনের পর দিন এমন শব্দবাজি বিক্রি করছেন। এক দিকে বিকট শব্দ। অন্য দিকে পরিবেশ দূষণ। অপরাধবোধ হয় না? সপাট উত্তর, ‘‘এক কাপ চা খান। শুনুন, বাজির শব্দ বড়জোর চার দিন। দূষণও ওই চার দিন ধরুন। দিল্লি তো শুনছি সারা বছরই দূষণনগরী। ওখানে কি রোজ শব্দবাজি ফাটানো হয়? চকলেট বোমা ছাড়া কি আর দূষণ হয় না? সব দোষ আমাদের? চার দিন ফাটলেই তো সব শেষ হয়ে যাবে।’’
শব্দবাজি নিয়ে প্রচার যে আদতে কোনও কাজেই আসেনি, তা বোঝা গেল আরও এক বার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy