স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) দেওয়া ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকায় কেন তাঁর নাম ছিল না, ব্যাখ্যা দিলেন আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল। বৃহস্পতিবার সল্টলেকে এসএসসি দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, কমিশনের ভুলেই তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে। এই গাফিলতি কাম্য নয়। তবে এই ভুল শুধরে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে কমিশন।
‘অযোগ্য নয়’ এমন শিক্ষকদের নামের তালিকা থেকে নতুন করে ১৮০৩ জনের নাম বাদ দিয়েছে সরকার। সেই নতুন তালিকা মঙ্গলবার রাত থেকে জেলায় জেলায় ডিআই দফতরে পৌঁছে গিয়েছে। বুধবার প্রকাশ্যে আসে, সেই তালিকায় চিন্ময়ের নাম নেই। রাতে তিনি জানিয়েছিলেন, নতুন তালিকায় কোনও অসঙ্গতি রয়েছে বলে তাঁর ধারণা। বৃহস্পতিবার তা নিয়ে এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেন চিন্ময়। অভিযোগ, শুধু তাঁর নয়, ‘যোগ্য’ বলে নিজেদের দাবি করছেন, এমন অনেক শিক্ষকের নামই এসএসসির নতুন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। চেয়ারম্যানের কাছে এর কারণ জানতে চান তাঁরা।
আরও পড়ুন:
এসএসসি দফতরের সামনে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্দোলন চলছে। বুধবার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার পর সেখান থেকে চিন্ময় বলেন, ‘‘এসএসসির তালিকায় আমাদের অনেকের নাম নেই। এটা এসএসসির ভুল। ভুলটা ২০১৮-১৯ সালে হয়েছিল। আমার নামের পাশে ‘নন-জয়েন্ড’ (চাকরিতে যোগ দেওয়া হয়নি) বলে লেখা আছে। সেই কারণেই নাম আসেনি তালিকায়। কিন্তু আমি আগেই চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। বিষয়টি পরিষ্কার করে আবার শিক্ষা দফতরে পাঠানো হচ্ছে। চেয়ারম্যান এর জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন। এর পরেও যাঁদের নাম আসবে না, তাঁরা কমিশনে যোগাযোগ করবেন। এসএসসির কাছে এই গাফিলতি কাম্য নয়। এতে অনেকের সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পরে আমরা আবার খোঁজ নেব।’’
‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’ নন, এমন ১৭ হাজার ২০৬ জন শিক্ষকের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেই তালিকা সুপ্রিম কোর্টেও জমা দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পরে সেখান থেকে আরও ১৮০৩ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র-সহ একাধিক বিষয়ে সমস্যা রয়েছে বলে জানতে পেরেছে পর্ষদ। তাঁদের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১৫,৪০৩। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই শিক্ষকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। তাঁদের নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে হবে, যে নিয়োগপ্রক্রিয়া চলতি বছরের মধ্যে শেষ করতে বলেছে শীর্ষ আদালত।
‘ভুলের’ ব্যাখ্যা দিয়েছে কমিশনও। ২০১৮ সালে চাকরিপ্রার্থীদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর পর তাঁরা স্কুল পরিচালন সমিতির কাছ থেকে নিয়োগপত্র সংগ্রহ করেন এবং স্কুলে যোগ দেন। অনুমোদন পাওয়ার ৪২ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়াই নিয়ম। ৪০ দিন পেরিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কাজের কথা মনে করিয়ে দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তার পরেও উত্তর না-পেলে ওই প্রার্থীদের ‘নন-জয়েন্ড’ বলে ধরে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে এই অবস্থাতেই তথ্যগুলি থেকে গিয়েছে। যাঁরা পরে কাজে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের তথ্য আর সার্ভারে আপডেট করা হয়নি। এ ছাড়া, যাঁরা চাকরি পাওয়ার পর বদলি নিয়েছিলেন, তাঁদের তথ্যও আসেনি কমিশনের কাছে। ফলে জটিলতা তৈরি হয়েছে। চিন্ময়-সহ বাকি শিক্ষকদের কাছ থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। তা যাচাই করে নতুন তালিকা আবার ডিআইদের পাঠানো হবে।
আগামী দিনে এই ‘ভুল’ এড়ানোর জন্য নিয়ম বদলের কথাও ভাবা হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, এর পর থেকে কেউ স্কুলে যোগ না-দিলে তা চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। তাঁরা যত দিন পর্যন্ত চিঠি দিয়ে চাকরিতে যোগ না-দেওয়ার কথা নিশ্চিত করছেন, তত দিন তাঁদের ‘নন-জয়েন্ড’ বলে ধরা হবে না।