শিশুসুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী। — ফাইল চিত্র।
দু’দিন আগেই যাদবপুরে মৃত ছাত্রের নামে তাঁর এলাকায় একটি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামকরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন পর্যন্ত সে কাজে কোনও আইনি বাধা ছিল না। কিন্তু শুক্রবার ওই মামলায় পকসো ধারা যোগ করা হয়েছে। যার ফলে ওই মৃত পড়ুয়ার নাম করা নিষেধ। ফলে এখন বিষয়টি নিয়ে আইনি প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২ নম্বর ধারা বা পকসো (প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স) ধারা কোনও মামলায় যুক্ত হলে মৃত বা আক্রান্তের নাম প্রকাশ্যে আনা আইনত অপরাধ।
ওই ঘটনা ঘটার পর থেকেই মৃত পড়ুয়ার নাম এবং ছবি ব্যবহার করা হচ্ছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কিছু দিন পরে রাজ্য শিশুসুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী তাঁর ফেসবুক পেজে আবেদন করেন, ওই ঘটনায় পকসো ধারা যুক্ত হবে। ফলে কেউ যেন ওই ছাত্র বা তাঁর পরিবারের নাম, ছবি এবং পরিচয় প্রকাশ্যে না আনেন। অন্যন্যা সকলের কাছেই আর্জি জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘...যাদবপুরের নিহত ছাত্রটি নাবালক ছিল। ও একজন পকসো ভিক্টিম। তার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করবেন না বারবার। এটা আইন বিরুদ্ধ।’ সেই আবেদন মেনে অধিকাংশ গণমাধ্যমই মৃত ছাত্রের ছবি, নাম, পরিচয় প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে। পাশাপাশি, ওই ছাত্রের পরিবারের কারও ছবি এবং নামও প্রকাশ করা বন্ধ করা হয়। যদিও তার পরে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু থেকে শুরু করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিরোধী বিজেপির কয়েকজন বিধায়ক ওই ছাত্রের নাম সর্বসমক্ষে বলেছিলেন। তবে তাতে কোনও আইন ভাঙা হয়নি। কারণ, তখনও ওই মামলায় পকসো ধারা যুক্ত করা হয়নি।
যাদবপুরকাণ্ডে প্রথমে খুন এবং পরে র্যাগিংয়ের ধারায় মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। অনন্যার অভিমতোর পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, পুলিশ ওই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। কিন্তু শুক্রবার বিকালের আগে তাতে পকসো ধারা যুক্ত করা হয়নি। প্রসঙ্গত, পকসো আইনের আওতায় আসা যে কোনও মামলাই আইনের চোখে আরও ‘গুরুতর’। যেখানে আক্রান্তের নাম, ঠিকানা, পরিচয় সবই গোপন থাকার কথা। সেই আইনি সতর্কীকরণই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন অনন্যা।
তবে শুক্রবার ওই মামলায় পকসো ধারা যুক্ত হওয়ার আগে মৃত ছাত্রের নম-পরিচয় উল্লেখে কোনও আইনি বাধা ছিল না, সেই সময়কালেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে দেখা করতে গিয়েছিলেন মৃত পড়ুয়ার বাবা-মা। তখনই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের জানান, তাঁদের এলাকার একটি হাসপাতালের নামকরণ হবে ওই পড়ুয়ার নামে। মৃত পড়ুয়ার মাকে চাকরির আশ্বাসও দেন তিনি। সেই মতোই গত বুধবার নদিয়ার বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালের নাম থেকে ‘বগুলা’ শব্দটি সরিয়ে ওই মৃত ছাত্রের নাম বসানো হয়। তা নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভও হয়। ওই ছাত্রের মা চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সে দিন তিনি কাজে যোগ দিতে পারেননি। পরদিন কাজে যোগ দিতে পারলেও তিনি বলেন, তাঁর সন্তানের নামে হাসপাতালের নামকরণ না-হলে তিনি ওই কাজ করবেন না।
সেই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু শুক্রবার ওই মামলায় পকসো যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি আবার জটিল হয়ে পড়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নামটি কি আর ওই হাসপাতালের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে?
সেই বিষয়ে অনন্যাকে শুক্রবার প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী যা করেছেন, নিশ্চয়ই আইন মেনেই করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে অনন্যা বলেন, ‘‘পকসো ভিক্টিমের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা কোনওমতেই যায় না! তার বাবা-মা অনুমতি দিলেও নাম প্রকাশ করা আইনবিরুদ্ধ। একমাত্র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যদি অনুমতি দিয়ে থাকেন, তখন তার নাম নেওয়া যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই আইনি পথই নিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy