গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর-কাণ্ডে গত মাসে প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিবিআই। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল চার্জশিটে। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ধৃত আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের নামও রয়েছে। মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ৮৭ দিন পর, সোমবার সেই মামলায় চার্জ গঠন হবে শিয়ালদহ আদালতে। তা সম্পন্ন হলেই শুরু হবে বিচারপ্রক্রিয়া।
গত ৯ অগস্ট আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে সেই রাতেই কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাক থেকে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার। কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পরে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই। আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার ৫৮ দিন পর গত ৭ অক্টোবর সিবিআই চার্জশিট জমা দিয়েছিল। চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই যে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত, তার বহু প্রমাণ হাতে রয়েছে। সংগৃহীত বয়ান, ভিডিয়ো এবং ফরেন্সিক বা সায়েন্টিফিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’ পাওয়া গিয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই গ্রহণ করার পরেই জরুরি বিভাগের চারতলার সিসিটিভি ফুটেজ (আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য সেই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই ফুটেজে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেখা গিয়েছিল। পরনে টিশার্ট এবং জিন্স, হাতে হেলমেট, গলায় হেডফোন ঝুলিয়ে আরজি কর হাসপাতালের করিডরে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ফুটেজে উল্লেখ করা তারিখ এবং সময় বলছে, তখন ৯ অগস্ট ভোর ৪টে ৩ মিনিট। অর্থাৎ, যে দিন ঘটনাটি ঘটে। সিবিআই চার্জশিটে সেই ফুটেজের কথাও উল্লেখ করা ছিল। পাশাপাশি, সন্দীপ এবং অভিজিৎ প্রসঙ্গে সিবিআই চার্জশিটে লেখা হয়েছিল, গোটা ঘটনায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, আর কেউ জড়িত কি না, সেই দিকগুলি খতিয়ে দেখতেই সন্দীপ এবং অভিজিতের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সেই তদন্ত শেষ হলেই অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।
সিভিকের বিরুদ্ধে ১১টি ‘প্রমাণ’
ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে চার্জশিটে যে ১১টি প্রমাণ সিবিআই দিয়েছে, তা হল—
১. সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই জানা গিয়েছে, গত ৯ অগস্ট ভোরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় গিয়েছিলেন ধৃত। সেটাই ছিল মূল ঘটনাস্থল।
২. অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার যে ওই রাতে আরজি কর হাসপাতালেই ছিলেন, তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশন থেকেই তার প্রমাণ মিলেছে।
৩. ময়নাতদন্তের সময় মৃতার দেহ থেকে ধৃতের ডিএনএ মিলেছে।
৪. ধৃতের যে প্যান্ট এবং জুতো পুলিশ উদ্ধার করেছিল, তা থেকে মৃতার রক্তের দাগ মিলেছে।
৫. ঘটনাস্থল থেকে যে ছোট ছোট চুল পাওয়া গিয়েছিল, তা অভিযুক্তের চুলের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
৬. ঘটনাস্থল থেকে যে ব্লুটুথ ইয়ারফোন উদ্ধার হয়েছিল, তা ধৃতের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ফোনের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। এখানে উল্লেখ করা জরুরি, ঘটনার রাতে ধৃতকে যখন ঘটনাস্থলের দিকে যেতে দেখা গিয়েছিল, তখন তাঁর গলায় ব্লুটুথ ইয়ারফোন জড়ানো ছিল। কিন্তু তিনি যখন ফিরছিলেন ঘটনাস্থল থেকে, তখন সেই ব্লুটুথ ইয়ারফোন তাঁর গলায় ছিল না।
৭. ধৃতের শরীর থেকে যে ক্ষতচিহ্ন মিলেছিল, দেখা গিয়েছে, ধৃতের মেডিক্যাল পরীক্ষার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে সেই ক্ষত তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ, হিসাব মতো ৮ অগস্ট থেকে ৯ অগস্টের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল সেই ক্ষত। ঘটনাচক্রে, মহিলা চিকিৎসকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাও ওই সময়েই ঘটেছিল।
৮. অভিযুক্তের শরীরে যে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে, সেগুলি নির্যাতিতার প্রতিরোধের ফলেই তৈরি হয়েছিল।
৯. অভিযুক্তের মেডিক্যাল পরীক্ষা থেকে এ রকম কোনও প্রমাণ মেলেনি যে, তিনি সঙ্গমে অক্ষম।
১০. সিএফএসএল কলকাতার রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতার অন্তর্বাসের সেলাই যে ভাবে ছিঁড়ে গিয়েছে, তা থেকে বোঝা গিয়েছে যে, সেটি জোরজবরদস্তি খোলা হয়েছে।
১১. সিএফএসএল কলকাতার রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃতা যে কুর্তি পরেছিলেন, কোমরের কাছে সেই কুর্তির দু’পাশটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তা টানাহেঁচড়ার কারণেই হয়েছে।
সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে যে বীর্য এবং লালারস মিলেছিল, তা ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারেরই।
ধৃতদের পলিগ্রাফ টেস্ট
সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতারের পর কলকাতা পুলিশ দাবি করেছিল, ধৃত অপরাধের কথা কবুল করেছেন। যদিও পরে সিভিক ভলান্টিয়ারের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছিলেন, তাঁর মক্কেল আরজি করের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। সিবিআইও পরে দাবি করেছিল, ঘটনার পর হাসপাতাল এবং সেমিনার রুমে যাওয়া নিয়ে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন ধৃত। তাঁর বয়ানে নানা অসঙ্গতি রয়েছে। তা নজরে রেখেই ধৃতের পলিগ্রাফ টেস্টের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তার অনুমতিও দেয়। ধৃতের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, পলিগ্রাফ পরীক্ষায় তাঁর মক্কেলকে ১০টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। ধৃতকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি খুন করে সেমিনার হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কী ভাবে ঘর সাজিয়ে এসেছিলেন। এই প্রশ্নের জবাবে প্রথমেই অভিযুক্ত জানিয়ে দেন, তিনি খুন করেননি। তাই ঘর সাজানোর প্রশ্নই ওঠে না। কেন ৮ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত? পলিগ্রাফ পরীক্ষায় তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বন্ধুর দাদা সেখানে ভর্তি ছিলেন। তাঁকে দেখতেই গিয়েছিলেন হাসপাতালে। তবে সেখানে যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি বার বার অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত, দাবি আইনজীবীর। উল্লেখ্য, যাঁর বা যাঁদের পলিগ্রাফ পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়, তাঁর সম্মতি ছাড়া ওই পরীক্ষা করা যায় না। পলিগ্রাফ পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য আদালতে প্রমাণ হিসাবেও গ্রাহ্য হয় না। এই পরীক্ষায় তদন্তে সুবিধা হয় মাত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy