কলকাতার বিচারভবনে মানিক ভট্টাচার্যকে ধমক বিচারকের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
কলকাতার বিচার ভবনে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জগঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সোমবার সেই প্রক্রিয়া চলার সময়ে অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্যকে ধমক দিলেন বিচারক। তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানোর পরে বিচারক এবং মানিকের মধ্যে বাক্য বিনিময় হয়। তার পরেই বিচারক মানিককে চুপ করে আদালতকক্ষে বসতে বলেন, না হলে তিনি রক্ষীকে ডাকবেন বলেও জানান। মানিকের পাশাপাশি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রোমোটার অয়ন শীল, তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ ‘ঘনিষ্ঠ এজেন্ট’ সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র চার্জ গঠন হয়েছে আদালতে।
সোমবার বিচার ভবনে প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় চার্জগঠনের প্রক্রিয়ার শুনানি ছিল। সেখানে হাজির হয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। তিনি গত সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির মামলায় জামিন পেয়েছিলেন। সোমবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি পড়ে শোনান বিচারক। তিনি জানান, মানিক প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির ‘অন্যতম মূল চক্রী’। দুর্নীতির টাকা সরানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিচারক আরও জানান, ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত তাপস মণ্ডলের সঙ্গে মিলে নিজের পদের অপব্যবহার করে অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছিলেন। এই মামলায় আর এক অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র তথা ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তাঁর সঙ্গে। তাপসের মাধ্যমে মানিক টাকা নিয়েছেন। প্রার্থীদের তালিকা আদান প্রদান করেছেন।
এর পরেই বিচারকের সঙ্গে আদালতকক্ষে বাক্য বিনিময় হয় মানিকের। বিচারক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি দোষী না নির্দোষ? প্রসঙ্গত, মানিক এই মামলা থেকে ‘ডিসচার্জ’ চেয়েছিলেন। সোমবার বিচার ভবনে তিনি জানান, মামলা থেকে ডিসচার্জের যে আবেদন করা হয়েছিল, তার অর্ডার এখনও পাননি। সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হলে চার্জগঠন কী করে হবে, প্রশ্ন মানিকের। বিচারক বলেন, ‘‘ইউ প্লিডেড নট গিল্টি (নির্দোষ দাবি করেছেন) লিখলাম।’’ এর পরেই মানিককে চুপ করে বসতে বলা হয়। বিচারকের কথায়, ‘‘চুপ করে বসুন। না হলে বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা ব্যবহার করতে বাধ্য হব। রক্ষীকে ডাকছি।’’ মানিক দাবি করেন, তিনি নির্দোষ।
পার্থের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শুনিয়েছেন বিচারক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘ডামি’ ডিরেক্টরদের দিয়ে ভুয়ো সংস্থা গঠন করিয়েছেন তিনি। তাঁর নাম জড়িত এমন সংস্থা আনন্দ টেক্সাসের ঠিকানায় বিপুল অর্থ উদ্ধার হয়েছে। আরও অভিযোগ, পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে যে খাম পাওয়া গিয়েছিল, তাতে লেখা ছিল ‘মিনিস্টার ইনচার্জ’। বিচারক জানান, ‘অপরাধের মাধ্যমে’ টাকা উপার্জন করেছেন পার্থ। বিভিন্ন সংস্থার নামে সম্পত্তি কেনা এবং জামাইয়ের মাধ্যমে টাকা সরানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অর্পিতার সঙ্গে পার্থ যৌথ ভাবে সম্পত্তি কিনেছেন বলেও অভিযোগ। যদিও পার্থ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি নির্দোষ। সব অভিযোগ ‘কাল্পনিক’। তিনি প্রমাণ করে ছাড়বেন।
অয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগও পড়ে শোনান বিচারক। তিনি জানান, ১০০০ জনের বেশি অযোগ্যদের থেকে ৪৫ কোটি টাকা জোগড় করেছিলেন অয়ন। পার্থ এবং কুন্তলের মাধ্যমে অযোগ্যদের জন্য সেই চাকরির ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। আরও অভিযোগ, অনেক বন্ধু, আত্মীয়দের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয় টাকা লুকিয়ে রাখার জন্য। বেনামি সম্পত্তিও কিনেছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে টাকা তছরুপ প্রতিরোধী আইন (পিএমএলএ)-এর চার নম্বর ধারায় চার্জ গঠন হয়েছে বলে জানান বিচারক। অয়ন দাবি করেন, তিনি নির্দোষ।
সন্তুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বেআইনি ভাবে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য অয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনে জড়িয়েছিলেন। বিচারক বলেন, ‘‘কুন্তল ঘোষের বড় অঙ্কের টাকা আপনার কাছে ছিল। কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকেও আপনাকে টাকা পাঠানো হয়েছে।’’ সন্তু অভিযোগ শুনে বলেন, ‘‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রয়েছে।’’
এই মামলায় ব্যক্তি এবং সংস্থা মিলে অভিযুক্তের সংখ্যা ৫৪। চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিল। গত ৩০ ডিসেম্বরের শুনানিতে এই মামলায় নির্দেশ দেওয়ার কথা ছিল আদালতের। কিন্তু চার্জগঠনের সময়ে অভিযুক্তদের সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়। ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ অসুস্থ হয়ে হাজিরা দিতে না-পারায় আগের দিন চার্জগঠন হয়নি। সোমবার ‘কাকু’-কে দিয়ে শুরু হয়েছে চার্জগঠনের প্রক্রিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy