দেড় বছরের শিশুকে ঘরে ঘুম পাড়িয়ে রেখে কাজে গিয়েছিলেন বাবা। মা-ও ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তার মধ্যে কখন ঘর থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল শিশুটি, মা খেয়ালই করেননি। পরে বাবা ফিরে দেখেন, ছেলে ঘরে নেই। এর পরেই শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। সেই সময়েই বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে একটি ঝোপঝাড়ে কান্নার আওয়াজ পেয়ে স্থানীয়েরা গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের গঙ্গারাম চা-বাগানের অচানক বস্তির এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পরিবার এবং স্থানীয়দের দাবি, শিশুটিকে চিতাবাঘই মুখে করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। যে জায়গা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি চিতাবাঘের আস্তানা বলেই দাবি স্থানীয়দের। যদিও বন দফতর সে কথা মানেনি। তারা জানিয়েছে, শিশুটিক শরীরে সে ভাবে কোনও ক্ষতচিহ্নও মেলেনি।
পরিবার এবং এলাকাবাসীরা জানান, এলাকায় চিতাবাঘের উপদ্রব রয়েছে। বস্তিতে রাতে প্রায়ই চিতাবাঘের দেখা মেলে। বাড়ির উঠোনেও ঘোরাফেরা করে। সেই কারণে তাঁদের অনুমান, শিশুটিকে চিতাবাঘই মুখে করে তুলে নিয়ে গিয়েছে। শিশুটির বাবা আস্মিন লাকরা বলেন, ‘‘আমি পাশের গ্রামে কাজে গিয়েছিলাম। স্ত্রী ঘরের বাইরে কাজ করছিল। বাচ্চা ঘরে ঘুমোচ্ছিল। ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। পরে আমি ঘরে ঢুকে দেখি, বাচ্চা নেই। এলাকাবাসীরা সকলে মিলে খুঁজে একটি ঝোপের মধ্যে থেকে বাচ্চাকে খুঁজে পায়। এলাকায় প্রচুর চিতাবাঘ রয়েছে। কাজেই চিতাবাঘ উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমরা কেউই দেখিনি।’’ একই কথা বলছেন এলাকাবাসী আনন্দকুমার সোব্বো। তিনি বলেন, ‘‘কান্নার আওয়াজ শুনে আমরা বাচ্চাটাকে খুঁজে পাই। কিন্তু চিতাবাঘকে নিয়ে যেতে দেখিনি। আবার শিশুটির শরীরে কোনও ক্ষতও নেই। তা হলে শিশুটা জঙ্গলে পৌঁছোল কী করে? এলাকায় চিতাবাঘের কমতি নেই।’’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল ঘোষপুকুর বন দফতর। ঘোষপুকুর বন বিভাগের রেঞ্জার প্রমিত লাল বলেন, ‘‘আমরা ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি পৌঁছোই। তবে চিতাবাঘ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে এটাও ঠিক যে, ঘুমন্ত শিশুটি ঘর থেকে এত দূর পৌঁছোল কী করে? শিশুটির শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্ন নেই। তবুও একটি প্রাথমিক চিকিৎসা করাব। তার পায়ে খানিকটা সমস্যা রয়েছে। সেটার অন্য কারণও হতে পারে।’’