ব্রাত্য বসুর কড়া বার্তার পরেই নরেন্দ্রপুরকাণ্ডে গ্রেফতার দুই। —ফাইল চিত্র।
এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে শনিবার ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের একটি স্কুলে। স্কুলে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছিল কয়েক জন বহিরাগতের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এর পরেই দু’জনকে গ্রেফতার করল নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ। দাবি, ধৃত মহেশ্বর নাড়ু ও সনু মণ্ডল দু’জনেই তৃণমূল কর্মী। যদিও তাঁদের দাবি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর হামলার ঘটনায় তাঁরা জড়িত নন। ঘটনাস্থলেও ছিলেন না। ফাঁসানো হচ্ছে বলেই অভিযোগ তাঁদের।
বলরামপুর মন্মথনাথ বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে শনিবার রাতে নরেন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অভিযোগ তোলা হয় প্রধানশিক্ষক সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ, বনহুগলি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অলোক নাড়ু, পঞ্চায়েতের সদস্য ও বনহুগলি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি আকবর আলি খান ও স্কুলের পরিচালন কমিটির সদস্য মনিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের রবিবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করিয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শনিবারই বিকেলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন ব্রাত্য। সেখানে তিনি জানান, এই বিষয়ে অবশ্যই খবর নেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘১০০ শতাংশ পদক্ষেপ করা হবে! আমি আগে বিষয়টা জানতাম না। কিন্তু কাউকে (আক্রমণকারী) ছাড়া হবে না। এখনই রিপোর্ট তলব করব। যা পদক্ষেপ করার করব।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুলের প্রধানশিক্ষক সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের সম্পর্ক ভাল নয়। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব সহ-শিক্ষকেরা। তাঁদের দাবি, এর জেরে স্কুলের কিছু শিক্ষককে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থও হন প্রধানশিক্ষক। কাজ না হওয়ায় কিছু শিক্ষকের প্রশাসনিক বদলির আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। সেই মামলায় যুক্ত হয়ে শিক্ষকদের একাংশ প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নথি পেশ করেন। যা ঘিরে স্কুলে দীর্ঘ দিন ধরেই তরজা চলছে। এর মধ্যেই কিছু দিন আগে স্কুলের এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে সেখানকার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের একাংশের দাবি, প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে কথা বলায় যৌন হেনস্থার মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয় ওই শিক্ষককে। তা নিয়েও উত্তেজনা ছড়ায়। আরও এক শিক্ষককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, স্কুল শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বহিরাগত লোকজন স্কুলে ঢুকে কয়েক জন শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করেন। শিক্ষিকাদেরও মারা হয়। ভিডিয়ো করতে গেলে ফোন কেড়ে ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ, ক্লাসে ঢুকেও তাণ্ডব চালানো হয়।
সেই ঘটনার একটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে। আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য সেটির সত্যতা যাচাই করেনি। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল, স্কুলের ‘স্টাফ রুম’-এ শিক্ষিকারা ভীত মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কাগজপত্র। কয়েক জন শিক্ষিকা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘আমাদের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে।’’ ‘হামলা’র পর কান্নায় ভেঙে পড়েন কয়েক জন শিক্ষিকা। অভিযোগ, তাঁদের শারীরিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। প্রধানশিক্ষকের অবশ্য বক্তব্য, স্কুলে যৌন হেনস্থার একটি ঘটনা ঘটেছে। তার জেরে অভিভাবকদের একাংশ হামলা চালান। তাঁর মদতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধানশিক্ষক। অস্বীকার করেছেন দুর্নীতির অভিযোগও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy