রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।—ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যাওয়ার ঘোষণা করে এ বার অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাঁকে বাদ দিয়ে ‘বেআইনি’ ভাবে সমাবর্তন হলে সেখানে ডিগ্রি নেওয়া পড়ুয়ারাদের ‘পরিণাম’ ভুগতে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি! শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘রাজ্যপাল অর্থহীন কথা বলে ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখাতে চাইছেন।’’
রাজ্যপাল এলে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের হুঁশিয়ারির প্রক্ষিতে যাদবপুরের সমাবর্তন ছাঁটকাট করে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও আজ, সোমবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকে যাবেন বলে জানিয়েছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল। সমাবর্তনের বিশেষ বিশেষ অংশ স্থগিত রাখার যে সিদ্ধান্ত শনিবার কর্মসিমিতির বৈঠকে নেওয়া হয়েছে, তাকেও ‘বেআইনি ও অবৈধ’ বলে জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, এই ‘অবৈধ’ সমাবর্তনে যাঁরা ডিগ্রি নেবেন, তাঁরা সঙ্কটে পড়তে পারেন।
রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট আইনের উপরে যে বিধি জারি করেছে, সেই অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আর সমাবর্তন বা কোনও বৈঠকে আচার্যকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বক্তব্য জানাবে শিক্ষা দফতরকে। কিন্তু আমন্ত্রণ ছাড়া আচার্য যদি বৈঠকে উপস্থিত হন, তা হলে কী করণীয়— এমন ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতির কথা সেই বিধিতে বলা নেই। অনেকের মতে, বিধিতে সেই ধোঁয়াশারই ‘সুযোগ’ নিচ্ছেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: নাড্ডার মিছিলে থাকতে ‘আন্তরিক’ ফোন বিজেপির, কথা দিলেন না শোভন
বিশেষ সমাবর্তন হবে না এবং আজ যে কোর্ট বৈঠক আছে, সেই বিষয়ে যাদবপুরের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু নতুন বিধি অনুযায়ীই উচ্চশিক্ষা দফতরে জানিয়েছিলেন এবং তার প্রতিলিপি রাজভবনেও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, রাজ্যপালের কোর্টের বৈঠকে আসার বিষয়ে লিখিত ভাবে তাঁদের রাজভবন থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে উপাচার্য বলেন, ‘‘উনি কোর্টের চেয়ারম্যান। আসতেই পারেন এবং কোটের বৈঠকে পৌরোহিত্য করতে পারেন।’’
আরও পড়ুন: পথে নেমে প্রতিবাদের সুযোগ চান সুগত
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, রাজ্যপাল সমাবর্তনে বা অন্য যে বৈঠকেই আসুন, তাঁরা বিক্ষোভ দেখাবেন। যার জেরে রাজ্যপাল ধনখড় আজ যাদবপুরের ক্যাম্পাসে গেলে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটবে কি না, সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ এ দিনও বলেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের উপরে রাজ্যপালের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ আমরা মানছি না। রাজ্যপাল ক্ষমতা জাহিরের জন্য জোর করে কিছু করতে চাইলে কড়া বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে।’’ যদিও উপাচার্য সুরঞ্জনবাবুর আশা, অপ্রীতিকর কিছু ঘটবে না। তেমন কিছু ঘটতে চলেছে বুঝলে তিনি কি পুলিশ ডাকবেন? সুরঞ্জনবাবুর জবাব, ‘‘কোনও পরিস্থিতিতেই ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকি না। ডাকবও না!’’
পড়ুয়াদের ক্ষোভের প্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছিল, মঙ্গলবারের সমাবর্তনে বিশেষ অংশটি (স্পেশাল কনভোকেশন) স্থগিত রেখে বাকি অনুষ্ঠান হবে। ওই অনুষ্ঠানে যে সব পড়ুয়া ডিগ্রি পাবেন, সেই বিষয়টকে মান্যতা দিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠক ডাকা হয়েছে। শিক্ষক মহলের আশঙ্কা, কোর্ট বৈঠকে এসেও আচার্য যদি এই সমাবর্তনকে ‘অবৈধ’ বলতে চাইলে অনুষ্ঠানই আদৌ হবে কি না, প্রশ্ন উঠবে। শিক্ষক সমিতি জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের আবেদন, ‘‘যে সমাবর্তন হওয়ার কথা, তা শান্তিতে সম্পন্ন হোক। না হলে আখেরে ক্ষতি হবে ছাত্রদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy