পরিষেবা, বিদ্যুৎ বিল, সমন্বয়-সহ নানা ইস্যুতে সিইএসসি-র প্রতি রাজ্যের শাসকরা অসন্তুষ্ট বলে খবর। প্রতীকী ছবি।
ক্ষোভ বাড়ছিল লক্ষ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে। অসন্তুষ্ট হচ্ছিলেন রাজ্যের শাসকরাও। ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হয়নি বা ন্যায্য বিলই পাঠানো হয়েছে বলে বার বার দাবি করে এসেও পিছু হঠতে বাধ্য হল সিইএসসি। কলকাতার এপ্রিল-মে’র ‘অনাদায়ী’ বিল জমা দিতে হবে না, আপাতত শুধু জুন মাসের বিদ্যুৎ বিল জমা দিলেই চলবে— জানানো হল কলকাতা ও শহরতলির বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার তরফে। রাজ্যের শাসকরা কতটা অসন্তুষ্ট ছিলেন সিইএসসি-কে নিয়ে, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গেল সংস্থার এই ঘোষণার পরেই। ‘কলকাতার জয়’— টুইট করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার রাত ৮টা ২৪ নাগাদ টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘‘কলকাতার মোট ৩৩ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে ২৫.৫ লক্ষ গ্রাহকের ছাড় দেওয়ার কথা সিইএসসি ঘোষণা করেছে। এখন, শুধুমাত্র জুনের প্রকৃত বিদ্যুৎ খরচের বিল জমা দিতে হবে। এপ্রিল এবং মে মাসের বিল বাবদ যে অঙ্ক জুনের বিলে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে। বিল জমা দেওয়ার সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে।’’ এখানেই শেষ করেননি ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রধান। টুইটে তাঁর শেষ বাক্য, ‘কলকাতার জয়!’
সিইএসসি-র পাঠানো বিল নিয়ে এ মাসে তুমুল হইচই শুরু হয়েছিল গোটা কলকাতা জুড়ে। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করতে শুরু করেছিলেন প্রায় সব শ্রেণির গ্রাহক। নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা শুধু নন, এই বিল নিয়ে ফিল্মস্টার থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন। একে করোনা সংক্রমণ রুখতে লকডাউন চলছে, ফলে বহু মানুষের কাজকর্মে মন্দা। তার উপরে আমপানের ভয়াবহ ধাক্কা সইতে হয়েছে কলকাতাকে। এই রকম সময়ে সিইএসসি-র পাঠানো এই চড়া বিদ্যুৎ বিল মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা— বলতে শুরু করেছিল সব বিরোধী দল।
CESC announces relief to 25.5 L consumers out of total 33 L consumers in #Kolkata. Now, ONLY June’s actual consumption will have to be paid. Amounts billed for the 2 months of April & May in June have been put in abeyance.The payment dates too stand extended. Kolkata wins!
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) July 19, 2020
সিইএসসি-র তরফ থেকে অবশ্য অন্য ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছিল। লকডাউনের কারণে মিটার রিডিং নেওয়া যায়নি বলে এপ্রিল ও মে মাসে যে বিল গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল, তা প্রকৃত বিল নয় বলে সিইএসসি-র দাবি। তার পূর্ববর্তী ছ’মাসের বিদ্যুৎ বিলের গড় হিসেব অনুযায়ী এপ্রিল ও মে মাসের বিল নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু এপ্রিল-মে’র প্রখর গ্রীষ্মে আসলে বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেশি হয়েছিল— ব্যাখ্যা সংস্থার। সেই অতিরিক্ত খরচ হওয়া বিদ্যুতের বিল অনাদায়ীই ছিল এবং সেই অনাদায়ী বিলই জুনের বিলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে— এমনই জানানো হচ্ছিল সিইএসসি-র তরফ থেকে।
এই ব্যাখ্যা কিন্তু গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কলকাতা জুড়ে ক্ষোভ তীব্র হচ্ছিল। ফলে রাজ্য সরকার সিইএসসি-কে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, এই ভাবে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের বাড়িতে চড়া বিল পাঠানোকে মোটেই ভাল চোখে দেখা হচ্ছে না। গ্রাহকদের মধ্যে বাড়তে থাকা ক্ষোভ এবং সরকারের অসন্তোষের মুখেই সম্ভবত সিইএসসি পিছু হঠল। রবিবার সংস্থার তরফে জানানো হয় যে, এপ্রিল ও মে মাসের বিল বাবদ আপাতত কিছু দিতে হচ্ছে না, শুধু জুনের বিল মেটালেই চলবে। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিজিৎ ঘোষের কথায়, ‘‘আপাতত জুন মাসের বিল দিতে হবে গ্রাহকদের। এপ্রিল-মে মাসের যে বকেয়া বিল পাঠানো হয়েছিল, তা পুনরায় বিবেচনা করে পাঠানো হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: কোভিড-যুদ্ধ: দিদির ১৯টি মাস্টারস্ট্রোক
অর্থাৎ জুন মাসের বিদ্যুৎ খরচের ভিত্তিতে নতুন বিল তৈরি করে পাঠানো হবে গ্রাহকদের কাছে। সেই বিল জমা দিলেই আপাতত চলবে। বিল জমা দওয়ার সময়সীমাও অতএব বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যে গ্রাহকরা ইতিমধ্যেই বিল জমা দিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের কী হবে? তাঁদের টাকা কি ফেরত দেওয়া হবে? এ বিষয়টি কিন্তু সিইএসসি স্পষ্ট করেনি।
বিল স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত যে রাজ্যের শাসক গোষ্ঠীকে কতটা স্বস্তি দিয়েছে, তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইটেই এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের বিল নিয়ে বাড়তে থাকা ক্ষোভ যে শুধু সিইএসসি-র বিরুদ্ধে তৈরি হচ্ছিল, এমন কিন্তু নয়। রাজ্য সরকারের অস্বস্তিও বাড়ছিল। অতএব সিইএসসি-র উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করে সরকার। তাতে কাজ যে হয়েছে, সে কথা বলাই বাহুল্য।
তৃণমূল তথা রাজ্যের প্রশাসন কিন্তু সিইএসসি-র কার্যকলাপ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই অসন্তোষ প্রকাশ করছিল। আমপানের পর থেকেই মূলত অসন্তোষ বাড়ছিল। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত কলকাতায় দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করতে না পারা নিয়ে অসন্তোষ ছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানোর প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের সঙ্গে সিইএসসি ঠিক মতো সমন্বয় রাখছে না বলেও অভিযোগ উঠছিল। প্রশাসনের নানা স্তর থেকেই এ সব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, তাঁর ভাইপো তথা শাসক দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে খবর। এ দিন অভিষেকের টুইটে তারই ইঙ্গিত মিলেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত। বিল নিয়ে সিইএসসি-র পিছু হঠাকে অভিষেক যে ভাবে ‘কলকাতার জয়’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন, তাতেই আভাস মিলেছে এত দিন ধরে জমতে থাকা অসন্তোষের, মত ওই বিশ্লেষকদের।
আরও পড়ুন: সংক্রমণের হার বেড়ে ১৬.৯%, রাজ্যে এক দিনে আক্রান্ত ২২৭৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy