অমিত মিত্র। ফাইল চিত্র।
খয়রাতি রাজনীতি বিতর্কে এ বার মুখ খুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনায় সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা তথা রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। দেশে মানুষের কল্যাণে চালু করা প্রকল্পকে কেন খয়রাতি বলে ধরা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর মতে, সেই যুক্তি মানলে বর্তমানে কেন্দ্রীয় কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পকেও খয়রাতি হিসেবে ধরা উচিত। বিরোধী শিবিরের মতে, যখন কেন্দ্র আমজনতাকে আর্থিক সাহায্য করে থাকে তখন কোনও সমস্যা হয় না। কেবল রাজ্য যদি করতে চায় তখনই তা কেন্দ্রের চশমায় খয়রাতির রাজনীতি হিসেবে ধরা পড়ে। এই নীতির বিরুদ্ধে আজ সরব হন অমিত মিত্র।
সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড ও পরে উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডে একটি সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খয়রাতির বা ‘শর্টকাট’ রাজনীতির প্রবল সমালোচনা করেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন রাজ্য ভোট কুড়োনোর লক্ষ্যে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করে আখেরে রাজ্য তথা দেশের অর্থনীতির উপরে চাপ বাড়াচ্ছে। মোদীর কথায়, ‘‘এ দেশে আজকাল ভোট কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে বিনামূল্যে ‘রেউড়ি’ বা ‘মিষ্টি’ বিলি করে। দেশের উন্নতির জন্য এই সংস্কৃতি ঘাতকস্বরূপ।’’ বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বিভিন্ন খয়রাতি প্রকল্পকে চিহ্নিত করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ওই রাজ্যগুলির কোষাগারের হাল নিয়ে দুশ্চিন্তাও জানিয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠকে সে দেশের আর্থিক সঙ্কটের উদাহরণ তুলে ধরে সতর্ক করেছেন।
আজ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি সাংবাদিক বৈঠকে অমিত মিত্র কেন্দ্রের সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘কিসান সম্মান নিধি’ প্রকল্পে দেশের প্রায় ১০ কোটি কৃষককে তিন কিস্তিতে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়ে থাকে। জাতীয় সহায়তা প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৯৬৫২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে দেশবাসীকে। অমিত মিত্রের কথায়, ‘‘কেন্দ্র যখন এই পরিমাণে খয়রাতি করছে, তখন রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে ‘ফ্রিবিজ়’ দেওয়া বা পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির অভিযোগ তোলা ভিত্তিহীন।’’ আমেরিকা, জার্মানি, ব্রিটেনের মতো দেশের উদাহরণ তুলে আজ অমিত মিত্র দাবি করেন, উন্নত দেশগুলি সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। ওই দেশগুলির অর্থনীতি পুঁজিবাদী হলেও জনকল্যাণের প্রশ্নে বিপুল পরিমাণ অর্থ ‘ফ্রিবিজ়’ বা বিনামূল্যে পণ্য বা পরিষেবা বিতরণের খাতে খরচ করতে পিছপা হয় না তারা। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘‘এতে মানুষের হাতে নগদের জোগান বাড়ে। বিক্রি বাড়ে। চাঙ্গা হয় অর্থনীতি।’’ অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষের মতে, ভারতের মতো দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা, পুষ্টি, আবাস বা শিক্ষার মতো বুনিয়াদি চাহিদা মেটানো সরকারের কর্তব্য হওয়া উচিত। এগুলিকে খয়রাতি হিসেবে না ধরে বরং গরিবদের প্রাপ্য হিসেবে তাঁদের চাহিদা পূরণ করতে এগিয়ে আসুক সরকার।
দেশের যে দশটি রাজ্যের আর্থিক হাল খারাপ বলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পকে খয়রাতি প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এ ধরনের পাইয়ে দেওয়ার নীতির ফলে রাজ্যগুলির ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। যদিও অমিত মিত্রের পাল্টা দাবি, পশ্চিমবঙ্গের জিডিপির তুলনায় ঋণের হার মাত্র ৩৪ শতাংশ। যা অন্য অনেক রাজ্যের থেকে কম। পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষ ঘাটতি বর্তমানে ৩.৪৩ শতাংশ। যা ঋণের উর্ধ্বসীমা থেকে অনেক কম। খয়রাতি রাজনীতির সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদাহরণ দেখিয়ে অমিত বলেন, ‘‘৭৫ লক্ষ বালিকা ২৫ হাজার টাকা করে পেয়েছে। ফলে মেয়েদের অসময়ে স্কুল ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা কমে গিয়েছে। রাজ্যের ওই সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। কন্যাশ্রী ছাড়াও কৃষক বন্ধু প্রকল্প, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ফলে কোভিড অতিমারির সময়েও মানুষের হাতে নগদ টাকার জোগান থাকায় তা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy