Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
jalpaiguri

Jalpaiguri: খাতায়কলমে কাজ, বাস্তবে ফক্কা

একটি চারা আড়াই হাজার টাকা, কুয়োর ৫টি বেড় ৪২ হাজার

খোঁজ-খবর: বোয়ালমারি নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তদন্তে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। বুধবার।  নিজস্ব চিত্র।

খোঁজ-খবর: বোয়ালমারি নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তদন্তে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১৬
Share: Save:

খাতায় কলমে লেখা রয়েছে, গত ৯ দিন ধরে ননীগোপাল সরকারের বাড়িতে একশো দিনের প্রকল্পে বাগান করার কাজ চলছে। তাতে কাজ করছেন জনা পাঁচেক শ্রমিক। কেন্দ্রীয় দল সরকারি ফাইল থেকে সেই ঠিকানা খুঁজে ননীগোপাল সরকারের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে অবাক। কোথায় কাজ? কাজের কথা শুনে মাথায় হাত ননীগোপালেরও। তিনি কেন্দ্রীয় পরিদর্শনকারী দলের সদস্যকে বললেন, “বলেন কী! এখানে তো কোনও বাগান হচ্ছে না। কেউ কাজও করছে না।” কোন শ্রমিক কাজ করছে, সেই নামও পরিদর্শনকারী দল পড়ে শোনালেন। ননীগোপাল জানালেন, এদের কাউকে তিনি চেনেন না এবং কোনও দিন দেখেনওনি। বিস্মিত কেন্দ্রীয় দল প্রশ্ন করল, বাগান করার কাজ না হয় হচ্ছে না। চারা গাছ পেয়েছেন কি?

ননীগোপালের উত্তর, “পেয়েছি স্যর। সুপারি চারা দেবে বলেছিল। কিন্তু দিয়েছে ৪০টি পেয়ারা গাছের চারা।’’

এ বার কেন্দ্রীয় পরিদর্শনকারী দলের প্রধান শশীকান্ত চমকে উঠে বললেন, “মাত্র ৪০টি চারা গাছ। অথচ ফাইলে লেখা হয়েছে আপনাকে ১ লক্ষ টাকার গাছ দেওয়া হয়েছে!”

পাশে ছিলেন ননীগোপালের এমএ পাঠরতা মেয়ে ঝর্ণা। তিনি চটপট হিসেব করে বললেন, “তার মানে একটি চারা গাছের দাম আড়াই হাজার টাকা?”

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বোয়ালমারি নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বুধবার কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শনে ‘অনিয়মের’ এমনই ছবি দেখা গিয়েছে। যে বুথে কেন্দ্রীয় দল অনিয়ম ধরেছে, সেটি বিজেপি পঞ্চায়েতের। বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য ডলি বৈদ্যকে সরাসরি কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধি প্রশ্ন করেন, “এত কোটি কোটি টাকা একশো দিনের প্রকল্পে আসে, সেগুলি যায় কোথায়?” উত্তরে ডলি জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকায় কাজ হয়। প্রতিনিধিদল একাধিক অনিয়ম খুঁজে বের করার পরে ডলি বলেন, “পঞ্চায়েত সদস্য তো শুধু কারা কাজ পাবেন, তাঁদের নামের সুপারিশ করেন। কাজ করানো, টাকা দেওয়া— এগুলি সব প্রশাসন করে। অনিয়মের কথা প্রশাসন বলতে পারবে।”

বোয়ালমারি গ্রাম পঞ্চায়েত দফতর থেকে নথি নিয়ে কেন্দ্রীয় দল প্রথমে নন্দনপুর হাইস্কুল লাগোয় অর্চনা রায়ের বাড়িতে আসেন। সেখানে একটি কুয়ো বসানো হয়েছে একশো দিনের কাজে। সেই কুয়োর জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসে দেখে, কুয়োয় পাঁচটি রিং বা বেড় বসানো হয়েছে। সদর ব্লকের বাস্তুকারকে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য সিদ্ধার্থ কুমার প্রশ্ন করেন, “এই কটা রিং বসাতে ৪২ হাজার টাকা লাগল? এটা ঠিক করছেন না।”

এ দিন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে বসে নথি পরীক্ষার সময়ে এলাকার কোথায় একশো দিনের কাজ চলছে, তা পঞ্চায়েত কর্মীরা স্পষ্ট জানাতে পারেননি। অফিস থেকে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রীয় দলের পর্যবেক্ষক শশী কান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কোথায় কাজ হচ্ছে, বলতে পারছেন না। তার মানে আদৌও কাজ হচ্ছে না। কাজ না করিয়েই টাকা খরচ করবেন নাকি!” তার পরেই ননীগোপাল সরকারের বাড়ি গিয়ে দেখেন, বাস্তবিকই ফাইলে লেখা থাকলেও কোনও কাজ হচ্ছে না। গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ দিন নির্মাণ সহায়ক উপস্থিত ছিলেন না বলে সব তথ্য ঠিকঠাক জানানো সম্ভব হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

jalpaiguri 100 days work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy