ফাইল চিত্র।
প্রথম বার কোনও আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসিয়ে বিজেপি গুজরাত, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের আগামী বিধানসভা নির্বাচন ও তার পরে লোকসভা নির্বাচনে আদিবাসী ভোট নিশ্চিত করতে চাইছে। কিন্তু অন্য দিকে ‘বন্ধু শিল্পপতি’-দের সুবিধা করে দিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই আদিবাসীদেরই অরণ্যের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল।
এত দিন পরিকাঠামো তৈরি বা শিল্পের জন্য জঙ্গল কাটার প্রয়োজন হলে তার আগে জঙ্গলের উপরে নির্ভরশীল আদিবাসী বা তফসিলি জনজাতির মানুষের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কারণ জঙ্গলের ধারে বসবাসকারী জনজাতির মানুষের জীবন-জীবিকা অরণ্যের উপরে নির্ভরশীল। মোদী সরকার সম্প্রতি অরণ্যের অধিকার আইনের নিয়মে বদল করেছে। তাতে জঙ্গল কাটায় আদিবাসীদের গ্রামসভার সায় রয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখার দায়িত্বই ঝেড়ে ফেলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
নতুন নিয়মে কেন্দ্রীয় সরকার বনবাসীদের অনুমতি না নিয়েই জঙ্গল কেটে তার জমি শিল্পের কাজে লাগানোর ছাড়পত্র দিতে পারবে বলে অভিযোগ। আগের নিয়ম অনুযায়ী, জঙ্গলের জমি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার আগে বনবাসীদের সায় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। এখন থেকে কেন্দ্রীয় সরকার আগেই জঙ্গলের জমি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার অনুমতি দেবে। ক্ষতিপূরণ বাবদ বৃক্ষ রোপণের অর্থ আদায় করবে। তার পর রাজ্য সরকার বনবাসীদের অরণ্যের অধিকার সংক্রান্ত দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখবে। তাদের পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করবে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘জঙ্গলের জমি ছিনিয়ে নেওয়া সহজ করতে বিজেপি ইউপিএ সরকারের তৈরি অরণ্যের অধিকার আইন লঘু করে নতুন নিয়ম জারি করেছে। মোদী সরকারের মিত্র-শিল্পপতিদের মুনাফাখোরির সুবিধা করে দেওয়ার এটি সেরা উদাহরণ। কংগ্রেস জল জঙ্গল ও জমির অধিকারের লড়াইয়ে আদিবাসী ভাই ও বোনদের পাশে দাঁড়াবে।’’ কংগ্রেস তথা বিরোধীদের বক্তব্য, আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু সংসদের অধিবেশনে এর বিরোধিতা করা হবে।
দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, অতীতের সরকার আদিবাসীদের জন্য বিশেষ কিছুই করেনি। বিরোধীরা বলছেন, চলতি বছরের শেষে গুজরাত, আগামী বছর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে আদিবাসী এলাকায় ভোট বিজেপির পক্ষে চিন্তার কারণ। এই রাজ্যগুলিতে মোট ১২৮টি আসন এসটি বা তফসিলি জনজাতির জন্য সংরক্ষিত। ২০১৭ ও ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এই ১২৮টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৫টি আসন জিততে পেরেছিল। এ বার দ্রৌপদীকে সামনে রেখে আসলে তফসিলি জনজাতির ভোটে ফায়দা তুলতে চায় বিজেপি। কিন্তু তাদের অরণ্যের অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে প্রহসন ধামাচাপা দেওয়া যায় না। ২০১৬-য় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই বলেছিলেন, আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। এখন কেন্দ্রীয় সরকারই আদিবাসীদের অনুমতি ছাড়া জঙ্গল কাটার ছাড়পত্র দিচ্ছে।
এত দিন ২০০৬-এর অরণ্যের অধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৯৮০ সালের অরণ্য সংরক্ষণ আইন যাতে কার্যকর হয়, তার দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের উপর। বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্র সেই দায়িত্ব থেকেই হাত তুলে নিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থাগুলি বনবাসীদের ছাড়পত্র ছাড়াই জঙ্গল কেটে ফেলতে পারবে। গত ২৮ জুন বন ও পরিবেশ মন্ত্রক এই নতুন নিয়মের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সরকারের দাবি, এতে পরিকাঠামো তৈরি বা উন্নয়নের কাজে জঙ্গলের জমি কাজে লাগানো সহজ হবে।
কংগ্রেস নেতা ও ইউপিএ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘২০০৯-এর অগস্টে অরণ্যের অধিকার পুরোপুরি কার্যকর করতে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়, ‘জঙ্গলের জমি অন্য কোনও কাজে লাগানোর ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্ন বিবেচনাই করা হবে না, যতক্ষণ না অরণ্যের অধিকার আইনে প্রদত্ত অধিকার সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।’ চিরাচরিত ভাবে জঙ্গলের সংলগ্ন এলাকাতেই যাঁদের বাস, তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করতেই এই আইন করা হয়েছিল। আগে তাদের সব কিছু জানিয়ে তাদের আগাম মতামত নিতে হবে।’’ রমেশের বক্তব্য, এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও কোনও আলোচনা হয়নি। সংসদের আসন্ন অধিবেশনে এ নিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে।
বিরোধীদের তিরের মুখে আজ কেন্দ্রীয় বন-পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘বন সংরক্ষণের নতুন নিয়ম সংস্কারপন্থী। আইন অনুযায়ী ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় দায়বদ্ধ।’’ রমেশের পাল্টা বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গ্রামসভার অনুমতি অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে।
কেন্দ্রের বক্তব্য, প্রথমে জঙ্গল কাটার ছাড়পত্র দেওয়া হলেও অরণ্যের অধিকার আইন মেনে সব কিছু হয়েছে দেখার পরেই চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হবে। রমেশের বক্তব্য, নতুন নিয়ম বলছে, আগেই কেন্দ্রীয় সরকার বেসরকারি সংস্থাকে জঙ্গল কাটার ছাড়পত্র দিয়ে দেবে। তার পরে বনবাসী মানুষের অরণ্যের অধিকার রক্ষা পেল কি না, তা দেখা হবে। সেই দায়িত্বও কেন্দ্রের নয়। রাজ্য সরকারের। এক বার জঙ্গলের জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়ার পরে বাকি সবটাই আনুষ্ঠানিকতা হয়ে যাবে। আর কোনও দাবি কানে তোলা হবে না।রাজ্যগুলির উপরে কেন্দ্রের থেকে আরও বেশি করে চাপ তৈরি করা হবে। কয়েক জন বাছাই করা শিল্পপতিকে সুবিধা করে দিতেই এমন করা হয়েছে। কিন্তু এতে বহু মানুষের সহজজীবন যাপন শেষ হয়ে যাবে। এতে অরণ্যের অধিকার আইনের মূল উদ্দেশ্যই ধ্বংস হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy