Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Darjeeling

ভোটের আগে আচমকা গোর্খাল্যান্ড বৈঠকের ডাক কেন্দ্রের, ক্ষুব্ধ নবান্ন

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধিকর্তা (কেন্দ্র-রাজ্য শাখা) রানু সারিন দিল্লি- বৈঠকের চিঠিটি পাঠিয়েছেন। কয়েক মাস আগেও একবার পাহাড় নিয়ে বৈঠক ডেকেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২১
Share: Save:

ভোটের আগে হঠাৎ ‘গোর্খাল্যান্ড’ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডাকল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডির পৌরোহিত্যে বুধবার দিল্লির নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে এই বৈঠক হবে বলে জানানো হয়েছে। আর তাতে উপস্থিত থাকার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সরাসরি ডেকে পাঠিয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক, জিটিএ-র প্রিন্সিপাল সচিব এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতিকে।

রবিবার এ কথা জানার পরই ‘ক্ষুব্ধ’ নবান্ন ভেবে নিয়েছে, রাজ্য ওই বৈঠকে যোগ দেবে না। তাদের মতে, এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে বড় আঘাত। প্রশাসনের শীর্ষ মহলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাজ্যের জেলাশাসক পর্যায়ের কোনও অফিসারকে কেন্দ্র এ ভাবে সরাসরি বৈঠকে ডাকতে পারে না। কোন বৈঠকে রাজ্যের কোন অফিসারকে পাঠানো হবে বা হবে না, তা সম্পূর্ণ রাজ্যের এক্তিয়ার। এবং তা স্থির করার অধিকারী রাজ্য প্রশাসনের উপরমহল। সেই সূত্রেই নবান্নের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘এই ধরনের চিঠি রীতিমতো বিস্ময়কর। কোন যুক্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এমন ‘অধিকার বহির্ভূত’ কাজ করল সেটা ভেবেই অবাক লাগছে।’’

দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা ‘গোর্খাল্যান্ড’ নিয়ে মাঝেমধ্যেই সংসদে সরব হন। লোকসভার গত অধিবেশনেও বিষয়টি তুলেছিলেন তিনি। এদিন এই বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে আমাদের সংকল্পপত্রে যা যা বলা হয়েছিল, দল তা নিয়ে কাজ ককরছে। পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের এলাকা বিষয়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছে। সবার খোলা মনে স্থায়ী সমাধানের জন্য বৈঠকে অংশগ্রহণ করা উচিত।’’ তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ভোটের আগে গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ সামনে এনে বিজেপি কেন্দ্রকে দিয়ে ‘শান্ত’ পাহাড়ে ফের অশান্তি বাধানোর চক্রান্ত শুরু করল। রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তথা উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতা গৌতম দেব বলেন, ‘‘প্রয়োজনে বাংলার মানুষ রক্ত দিয়ে এই ঘৃণ্য চক্রান্ত প্রতিরোধ করবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর সেই কথাই বলে আসছেন।’’

আরও পড়ুন: মুকুলের সংবর্ধনায় ঘটা, দিলীপ ‘জানতেনই না’​

শুধু দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক বা রাজ্যের দুই পদস্থ আমলাকেই নয়, দিল্লির বৈঠকে ডাক পাঠানো হয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতিকে। সেই চিঠি পাঠানো হয়েছে মোর্চার সিংমারির পুরনো অফিসের ঠিকানায়। মোর্চার সভাপতি হিসেবে বিমল গুরুঙ্গ দীর্ঘদিন সেখানে বসতেন। ফলে একাধিক গুরুতর অভিযোগে বহু দিন রাজ্যের বাইরে থাকা গুরুঙ্গকেই মোর্চার সভাপতি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বৈঠকে ডাকা হয়েছে কি না, তা নিয়েও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বৈঠক নিয়ে আসরে বিমলগোষ্ঠীর নেতারাও। বিমলপন্থী মোর্চার কার্যকরী সভাপতি লোপসাং লামা বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই বিফল হয়নি তা বোঝা যাচ্ছে। কেন্দ্রের ডাকা বৈঠক থেকে পাহাড়ের সোনালি দিনের শুরু হতে চলেছে।’’ লকডাউন পরবর্তী পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে গিয়ে প্রথম প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন দার্জিলিংয়ের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: নতুন বছরের গোড়ায় চূড়ান্ত চার্জশিট সারদায়?​

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধিকর্তা (কেন্দ্র-রাজ্য শাখা) রানু সারিন দিল্লি- বৈঠকের চিঠিটি পাঠিয়েছেন। কয়েক মাস আগেও একবার পাহাড় নিয়ে বৈঠক ডেকেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তখন বলা হয়েছিল, জিটিএ সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেই সময়ও আগে আলোচনা না করে বৈঠক কেন ডাকা হয়েছে, এই এক্তিয়ারের প্রশ্ন তুলে বৈঠকে যোগ দিতে অস্বীকার করে রাজ্য। তবে সেই বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। এ বার ডাকা এই বৈঠকের ক্ষেত্রেও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলের প্রশ্ন, দার্জিলিং যেখানে পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তখন সেই এলাকা নিয়ে কোন অধিকারে নবান্নকে না জানিয়ে বৈঠক ডাকা হয়? নবান্নকে অন্ধকারে রেখে জেলাশাসকের কাছে কী ভাবে সরাসরি চিঠি পাঠানো হয়?

আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক দুর্যোগেও স্যাটেলাইট সংযোগ

বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত হিসেবে তুলে ধরে তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘একসময় পঞ্চায়েতের কাজের জন্য পি এম টু ডিম, মাইনাস সি এম বৈঠকের চেষ্টা হত। সরাসরি জেলা শাসকদের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করেছিলেন অতীতের এক প্রধানমন্ত্রী। এখন বিজেপি জমানায় সরাসরি নির্দেশ আসছে রাজ্যের জেলা শাসককে কবে কখন দিল্লিতে গিয়ে বৈঠক করতে হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে। এতেই বোঝা যায় সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক কাঠামো ধ্বংস করতে এই দল কতটা বেপরোয়া। তবে বাংলায় তা করতে দেওয়া হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling Election Gorkhaland
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy