মেট্রো রেল সম্প্রসারণ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের প্রস্তাব নির্দ্বিধায় মেনে নিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রাপথ আরও পাঁচ কিলোমিটার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। প্রকল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে ওই বাড়তি অংশের জন্য প্রতীকী বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ টাকা। রেলমন্ত্রী জানান, সম্প্রসারণে আনুমানিক খরচ হবে ৬৭৪.৫ কোটি। এ রাজ্যের কিছু মেট্রো প্রকল্পের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষার জন্য অল্প কিছু অর্থও বরাদ্দ করেন তিনি। নরেন্দ্র মোদীর সরকার তড়িঘড়ি রাজ্যের মেট্রো প্রকল্প সম্প্রসারণের প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় স্বভাবতই খুশি রাজ্য প্রশাসন।
কিন্তু সার্বিক ভাবে রেলমন্ত্রীর এ দিনের প্রস্তাবিত বরাদ্দে কলকাতার মেট্রো প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। কয়েক বছর ধরেই রেলের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। তাই বাজেটে রাজ্যওয়াড়ি প্রকল্প ঘোষণার চল গত বছর থেকেই থামিয়ে দিয়েছেন প্রভু। এ বারের রেল বাজেটেও সে ভাবে মেট্রো প্রকল্পগুলিতে বিরাট কিছু বরাদ্দ করেননি রেলমন্ত্রী।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বর্তমান প্রকল্পগুলি শেষ করতেই নাজেহাল অবস্থা, সেখানে নয়া প্রকল্পের সমীক্ষা করে বা বর্তমান প্রকল্প আরও পাঁচ কিলোমিটার বাড়িয়ে আখেরে কী লাভ!
মেট্রো রেল সূত্রের খবর, বাম আমলে শুরু হওয়া ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের কাজ সল্টলেকের দত্তাবাদে জমি-জটে আটকে গিয়েছিল। পাশাপাশি, বড়বাজার এলাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এসপ্ল্যানেড দিয়ে মেট্রোপথ করার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে পালাবদলের পরে এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হওয়ায় পিছিয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত পথেই মেট্রো প্রকল্প করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও এখনও এসপ্ল্যানেড ও বিবাদী বাগ স্টেশন কোথায় হবে, তা নিয়ে জট কাটেনি এখনও। তবে দত্তাবাদের জমি-জট কেটে গিয়ে সেখানে কাজ শুরু হয়েছে। জট কাটেনি জোকা-বিবাদীবাগ মেট্রোরও। সেখানে সেনাবাহিনী বেঁকে বসায় খিদিরপুর এলাকার পরে প্রকল্পের পথ কী হবে, তা-ই এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি!
রেল-কর্তাদের দাবি, জমি-জটই বরাদ্দ কম পাওয়ার পিছনে প্রধান কারণ। এক রেলকর্তার কথায়, ‘‘বকেয়া প্রকল্পই শেষ হয়নি। অনেক জায়গার জট এখনও কাটেনি। এই অবস্থায় বাড়তি বরাদ্দ করেও তো লাভ নেই। খরচ করা যাবে না।’’
রাজ্য সরকার অবশ্য জট কাটিয়ে ওঠার আগেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পকে সেন্ট্রাল পার্ক থেকে ভিআইপি রোডের হলদিরাম পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় প্রস্তাব দেয় রেল মন্ত্রককে। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক এবং হলদিরাম পর্যন্ত স্টেশনের প্রস্তাব দেওয়া হয় বৈশাখী, কেষ্টপুর, বাগুইআটি, রঘুনাথপুরে। স্বভাবতই রেলমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি তৃণমূল সাংসদেরা। এমনকী, রেল বাজেট বক্তৃতার মাঝে অনেক সময়েই খুশিতে লাফিয়ে উঠতেও দেখা গিয়েছে তৃণমূল সাংসদদের লাফিয়ে উঠতেও।
এ দিন লোকসভায় রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘কলকাতায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোপথের কাজ চলছে। তা যখন শেষ হবে, কলকাতায় মেট্রোর পরিবহণ ক্ষমতা চার গুণ বেড়ে যাবে।’’ প্রভু দাবি করেন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নিয়ে যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। ২০১৮-এর জুনের মধ্যে প্রথম দফার কাজও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, সুরেশ প্রভু তথা মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রেল বাজেটে কলকাতার মেট্রো প্রকল্পগুলির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫৮২ কোটি টাকা। এ বারও কমবেশি সেই ধারাই বজায় রেখেছেন রেলমন্ত্রী। কলকাতায় চলতি মেট্রো প্রকল্পগুলির জন্য সব মিলিয়ে এ বারের বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২৪৮ কোটি টাকা।
এ দিন সংসদে রেল বাজেট পেশের পরে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই মেট্রো প্রকল্পগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও বাজেটে বলা হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে শেষ হবে, তবে আমাদের লক্ষ্য ২০১৭ সালের মধ্যেই কাজ শেষ করা।’’ এ বিষয়ে সিপিএম সাংসদ মহম্মদ েসলিমের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির জন্যই এই প্রকল্পের কাজ পাঁচ বছর পিছিয়ে গেল। বাড়ল খরচ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy