Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sukanta Majumdar

SSC Recruitment Scam: সামাজিক, রাজনৈতিক অভিঘাত বেশি, তাই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেই বেশি জোর

বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের ছবি প্রকাশিত হওয়ায় আমজনতার মধ্যে পার্থ তো বটেই, তাঁর ধারক তৃণমূল সম্পর্কেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২২ ২২:৫৬
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা সংক্রান্ত নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেই আপাতত বেশি সময় দেবে ইডি এবং সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কারণ, ওই ঘটনার ‘সামাজিক অভিঘাত’ অনেক বেশি। বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্রে তেমনই দাবি করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তেমন কিছু জানানো হয়নি। বরং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যেমন যেমন কাজ করছিল, তেমনই করবে। কোনও ক্ষেত্রে বেশি বা কোনও ক্ষেত্রে কম অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রশ্ন নেই। তদন্ত তদন্তের স্বাভাবিক গতি ধরেই এগোবে।

প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তই অধুনা পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে জোরকদমে চলছে। ইতিমধ্যেই ওই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাজ্যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গ্রেফতার করা হয়েছে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক মডেল তথা অভিনেত্রীকে। যিনি পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে দাবি করেছে ইডি। দু’জনকেই গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে জেরা করছেন তদন্তকারীরা। বুধবার দু’জনকে আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের আরও তিনদিন করে ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে আগেই ৫০ কোটিরও বেশি নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। পাশাপাশিই উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর স্বর্ণালঙ্কারও। কিন্তু তার পরেও দেখা যায়, দু’জনের নামে প্রচুর যৌথ সম্পত্তি ইত্যাদি রয়েছে। ওই ঘটনায় ‘অস্বস্তি’-তে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। কারণ, ওই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের ছবি প্রকাশিত হওয়ায় আমজনতার মধ্যে পার্থ তো বটেই, তাঁর এত দিনকার ধারক তৃণমূল সম্পর্কেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জোকার ইএসআই হাসপাতালে মঙ্গলবার এক মহিলার পার্থকে জুতো ছুড়ে মারার ঘটনায় সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সামাজিক এবং রাজনৈতিক অভিঘাত যে অনেক বেশি, তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। পার্থকে মন্ত্রিসভা এবং দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে বা সাসপেন্ড করে সেই ক্ষোভের আগুনে জল দেওয়া গিয়েছে কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন শাসক শিবিরের নেতারা। একান্ত আলোচনায় তাঁরা মেনে নিচ্ছেন যে, পরিস্থিতি ‘জটিল’।

এই পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে এসএসসি-র মতো নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে আপাতত বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। প্রসঙ্গত, ‘রাজনৈতিক’ দিক দিয়েও এসএসসি দুর্নীতিকে ‘পাখির চোখ’ করেই এগোতে চাইছে রাজ্য বিজেপিও। মঙ্গলবারেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংসদ ভবনে ওই সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে তিনি বলেছিলেন, পার্থ- অর্পিতা ছাড়াও চাকরি দুর্নীতি-কাণ্ডে তৃণমূলের আরও অনেকে যুক্ত। তিনি শাহের কাছে ১০০ জন তৃণমূল নেতা-নেত্রীর নামের তালিকা দিয়েছেন। সেই তালিকায় তৃণমূল সাংসদ, বিধায়কের পাশাপাশি কয়েক জন মন্ত্রীর নামও রয়েছে।

শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘১০০-র বেশি বিধায়ক এবং তৃণমূলের তোলাবাজের নাম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছি। যাঁরা গোটা বাংলায় টাকা তোলার র‌্যাকেট চালান। পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে গ্রিন করিডর বানিয়ে ভাইপোর বাড়ি ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। উনি (শাহ) আমায় কথা দিয়েছেন, এই দুর্নীতির পূর্ণ তদন্ত হবে।’’ একই সঙ্গে শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, এটা যে স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি, তা শাহও মেনেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘হরিয়ানায় তিন হাজার, ত্রিপুরায় ১১ হাজার চাকরিতে দুর্নীতি হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ৭৫ হাজার চাকরির মধ্যে ৫০-৫৫ হাজার বিক্রি করা হয়েছে! একা পার্থ, অপা-মপারা যুক্ত নন। প্রচুর কালেক্টর আছে। ব্লক অনুযায়ী কালেক্টর আছে। জেলা অনুযায়ী কালেক্টর আছে। ১০০ জনের নাম দিয়েছি। তার মধ্যে বিধায়ক, সাংসদ রয়েছেন। মন্ত্রীও রয়েছেন। চার বিধায়কের লেটারপ্যাড-সব বিভিন্ন তথ্য প্রমাণও জমা দিয়েছি। যাঁরা টাকা তুলেছেন। আমি চেয়েছি, আরও কড়া তদন্ত হোক। তদন্তকে একেবারে মূলে নিয়ে যেতে হবে।’’এর পরেই বুধবার শাহের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সাক্ষাতের পরে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তিনি রাজ্যের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। পরে সুকান্ত বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছি। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমি ওঁকে বলেছি, এই সঙ্কট অত্যন্ত গভীর।’’ রাজ্যের বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও শাহের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy