শুভেন্দু অধিকারীকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবার বিধানসভায়। —নিজস্ব চিত্র।
এমনিতে তাঁরা বিজেপি শিবিরে ‘যুযুধান’। কিন্তু ভোটচক্রে দু’জনেই ‘ভূত’। দু’জনেরই রাজনৈতিক ‘ভবিষ্যৎ’ খানিক মেঘাচ্ছন্ন। সেই তাগিদই কি মিলিয়ে দিল দু’জনকে? আবির্ভাব দিবসে মতপার্থক্য ভুলে বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারীর ঘরে ঢুকে পড়লেন দিলীপ ঘোষ। কত দিন পরে? কেউ মনে করতে পারবেন না।
শুধু উপস্থিতিই নয়, একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ালেন। বৃহস্পতিবার, ১ অগস্ট দিলীপের জন্মদিন। সেই দিনে এই মিলন পরিকল্পিত ছিল কি না, দলের সঙ্কটকালে জন্মদিনের আবডালে ‘ঐক্যের ছবি তৈরি করাই উদ্দেশ্য ছিল কি? বিজেপি তেমনকিছু বলছে না। তবে দিলীপ ঢুকতেই যে ভাবে তাঁকে বরণ করতে লাল গোলাপের তোড়া এগিয়ে দিলেন শুভেন্দু, তাতে স্পষ্ট যে, প্রস্তুতি একটা ছিল।
লাল গোলাপ, মিষ্টির পাশাপাশি কি আরও কিছু তৈরি হল এই সাক্ষাতে? আপাতত সেই ‘মোর’-এর দিকে তাকিয়ে রাজ্য বিজেপির নেতারা।
প্রথমে গেরুয়া উত্তরীয় পরিয়ে দিলীপকে শুভেচ্ছা জানান শুভেন্দু! আর নিজের জন্মদিনে দিলীপ মিষ্টিমুখ করালেন শুভেন্দু-সহ বাকি বিধায়কদের। রাজ্য বিজেপির অন্দরে দুই নেতার সমীকরণের কথা মাথায় রাখলে এই সাক্ষাৎ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। বিজেপি শিবিরের পক্ষে অন্য কোনও নেতা এ নিয়ে মন্তব্য না করলেও এই সমীকরণ জন্মদিনেই না-ফুরোলে তা যে তাঁদের পক্ষে সুখের হবে, তা মানছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দিলীপ যখন বিধানসভা ভবনে আসেন, শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়কেরা অধিবেশন কক্ষে ছিলেন। খবর পেয়েই সকলে বিরোধী দলনেতার ঘরে চলে আসেন। শুভেন্দুর চেয়ারের পাশেই অন্য একটি চেয়ারে দিলীপের বসার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে তাঁকে লাল গোলাপের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিজেপির দুই বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এবং মালতী রাভা রায়। গেরুয়া উত্তরীয় পরিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দিলীপকে মিষ্টিমুখ করান শুভেন্দু। দিলীপও মিষ্টি তুলে দেন শুভেন্দুর মুখে।
প্রসঙ্গত, ২০২০-র ডিসেম্বরে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়া ইস্তক অনেক বারই নানা বিষয়ে তাঁর দ্বিমত তৈরি হয়েছে দিলীপের সঙ্গে। দিলীপ-শুভেন্দু ‘মধুর’ সম্পর্ক মেরামত করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও অনেক সময়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। চলতি বছর লোকসভা ভোটের ঠিক আগে দিলীপ নিজেই আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, শুভেন্দুর সঙ্গে কোনও দিনই তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল না।
লোকসভা ভোটে জেতা আসন মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে প্রার্থী করেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেখানে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। তার পরে ফেসবুকে ‘দিলীপদার অনুগামী’ বনাম ‘শুভেন্দুদার অনুগামী’ নামে দু’টি ‘পেজে’ দুই নেতার অনুগামীদের ‘পোস্ট-যুদ্ধ’ দেখা গিয়েছিল। দিলীপ নিজেও তাঁকে হারানোর জন্য ‘কাঠিবাজি’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। এর পরে দিলীপ ও শুভেন্দু মুখোমুখি হয়েছিলেন এক বারই। গত ১৭ জুলাই দলের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে একই মঞ্চে ছিলেন বিরোধী দলনেতা এবং রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি।
লোকসভা নির্বাচনের পরে আরও এক দিন বিধানসভায় এসেছিলেন দিলীপ। খড়্গপুর সদরের প্রাক্তন বিধায়ক তাঁর অবসরকালীন ভাতা সংক্রান্ত কাজের জন্য এসেছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে। সে দিন বিধানসভায় আসেননি শুভেন্দু। তবে অন্য অনেক বিধায়ক উপস্থিত থাকলেও কেউই দিলীপের সঙ্গে দেখা করেননি। এ নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়। দিলীপ অনুগামীরা এমনটাও বলেন যে, বিরোধী দলনেতার নির্দেশেই দিলীপকে এড়িয়ে গিয়েছেন বিধায়কেরা।
সেই দিনটা ১৪ জুন। তার থেকে অনেক ফারাক ১ অগস্টের দৃশ্যে। একেবারে উল্টোও বলা যায়। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর ঘরে দিলীপের জন্মদিন পালন ‘অন্য অসমীকরণের’ ইঙ্গিতবাহী কি না, তা নিয়ে জল্পনা দানা বাঁধছে। কারণ, সম্প্রতি দিলীপের মতোই শুভেন্দু ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে দলের মধ্যে কিছুটা সমালোচিত। আবার দিলীপ রাজনীতিকে বিদায় জানানোর বার্তা দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এমন আবহে শুভেন্দু-দিলীপ সাক্ষাৎ নানা জল্পনার জন্ম দেবেই। কে না জানে, লাল গোলাপ ভালবাসাই বহন করে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy