—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সিজার নম্বর ১৫। ‘ওয়ান (১) ব্লু অ্যান্ড ব্ল্যাক কালার ব্লুটুথ ইয়ারফোন অব লুমা’। অর্থাৎ ‘লুমা’ কোম্পানির নীল এবং কালো রঙের একটি ইয়ারফোন। এই ইয়ারফোন ছিল কোথায়? সিজার তালিকা বলছে, ‘মৃতদেহ যেখানে পড়েছিল সেই ম্যাট্রেসের নীচে’!
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় এ বার সামনে এসেছে কলকাতা পুলিশের তৈরি করা সিজার তালিকা। সেখানে উল্লিখিত এই ইয়ারফোন এই ঘটনায় ধৃত সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে অন্যতম যোগসূত্র বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, ইয়ারফোন মিলেছে ম্যাট্রেসের (যেখানে মৃতদেহ ছিল) নীচে, ধস্তাধস্তির সময়ে হয়তো ইয়ারফোনটি ম্যাট্রেসের তলায় ঢুকে গিয়েছিল! যদিও এই দাবি শুনে আইনজীবীদের অনেকের প্রশ্ন, ধস্তাধস্তিতে ম্যাট্রেসের নীচে ইয়ারফোন ঢুকে গেল, অথচ, ম্যাট্রেসের চাদরে তেমন ধস্তাধস্তির চিহ্ন দেখা গেল না, হয় কী করে?
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদেরও দাবি, মৃতদেহ সেমিনার রুমে পড়ে থাকার যে ছবি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তো ম্যাট্রেসের চাদর গোঁজা অবস্থাতেই দেখা গিয়েছে। ইয়ারফোন নীচে চলে গেলে চাদরও ওলটপালট অবস্থায় থাকার কথা! মৃতার বাবার প্রশ্ন, ‘‘তবে কি সব সাজানো হয়েছে?’’
টালা থানার ৮৬১ নম্বর ‘আনন্যাচারাল ডেথ বা ইউডি (অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা) কেসে’র ভিত্তিতে এই সিজার তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে মোট ৪০টি জিনিস। তালিকায় লেখা হয়েছে, ঘটনা সামনে আসার দিন অর্থাৎ ৯ অগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে আটটা থেকে রাত পৌনে ১১টার মধ্যে। যা যা ‘সিজ়’ করা হয়েছে, তার সমস্তটাই আর জি করের চারতলার সেমিনার রুম-এর ‘ডেইস’ থেকে সংগ্রহ করা বলে সিজার তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় সাক্ষী হিসেবে সই করেছেন দু’জন চিকিৎসক। এক জন পুলিশকর্মীর সই-ও রয়েছে, তালিকা প্রস্তুতকারী হিসেবে।
প্রশ্ন উঠছে, সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় তো মৃতদেহ শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে পৌঁছেছিল। তা হলে ওই সময়ে সিজার তালিকা তৈরি হল কী করে? তবে কি এ ক্ষেত্রেও পরে এফআইআর লেখার মতো সিজার তালিকাও পরে তৈরি করা হয়েছে?
২৩, ২৪ এবং ২৫ নম্বর সিজার হিসেবে ম্যাট্রেসের ছেঁড়া অংশের উল্লেখ করা হয়েছে। ২৫ নম্বর সিজার সামগ্রী হল, ম্যাট্রেস থেকে বেরিয়ে আসা ‘সাদা সিন্থেটিক কটন’। যা ধস্তাধস্তির সময় ছেঁড়া হয়ে থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। সে ক্ষেত্রে কি মৃতার হাত-পা ম্যাট্রেসে চেপে ধরা হয়েছিল? কিন্তু এই ঘটনায় এক জনই গ্রেফতার হয়েছে। ময়না তদন্ত বলছে, মৃত্যুর কারণ— নাকমুখ এবং গলা একসঙ্গে চেপে ধরে শ্বাসরোধ। ফলে যদি ধরে নেওয়া হয়, এক জনই গলা টিপেছে এবং নাকমুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করেছে, তা হলে সে মৃতার হাত-পা ধরবে কী করে? আর হাত-পা মুক্ত থাকলে প্রতিরোধের বদলে কি কেউ ম্যাট্রেস ছিঁড়বেন? সিজার তালিকায় ১ এবং ২৮ নম্বরে দেখা যাচ্ছে দু’টি ব্যাগের উল্লেখ। এই দু’টি ব্যাগই কি মৃতার? ব্যাগে যা যা সামগ্রী পাওয়া গিয়েছে বলে সিজার তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, তা-ও কি মৃতারই? প্রশ্নও রয়েছে।
এত দিন এই ঘটনায় একটি লাল রঙের কম্বল নিয়ে মৃতা ঘুমোচ্ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হচ্ছিল। পরে যা সেমিনার রুমে ‘ডেইস’-এর উপর থেকে পাওয়া যায়। একটি নীল চাদর পরে মৃতার গায়ে হাসপাতাল থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। কিন্তু সিজার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, উদ্ধার করা হয়েছে দু’টি লাল কম্বল। দ্বিতীয়টি কার? সিজার তালিকার ৪০ নম্বর সামগ্রী নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তালিকায় দেখা যাচ্ছে, সেমিনার রুম-এর ‘ডেইস’-এর সামনে রাখা একটি চেয়ার থেকে ‘কেস প্রেজ়েন্টেশন খাতা’ লেখা একটি খাতা উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে ২ থেকে ২২৩ নম্বর পাতার মধ্যে ৫ নম্বর পাতায় ডাক্তারদের নাম এবং সই রয়েছে। এই খাতা কিসের? কে সেটি সেমিনার রুম-এ আনল? উত্তর খুঁজছে সিবিআই-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy