মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তায় নজিরবিহীন আয়োজন করল রাজ্য প্রশাসন। বিধানসভায় তাঁর ঘরেও বসানো হয়েছে এক জোড়া নজরদারি ক্যামেরা (সিসিটিভি)। ইতিমধ্যে এই কাজ শেষ করেছে পূর্ত দফতর। চূড়ান্ত সুরক্ষিত ওই ঘরে কেন ক্যামেরা বসাতে হল, তা নিয়ে পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি। প্রসঙ্গত, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের বসার ঘরেই ক্যামেরার বসানোর ঘটনা এই প্রথম বলেই সূত্রের দাবি।
তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে বিধানসভার ভিতরেও সরকার পক্ষের মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিদের সুরক্ষা-ব্যবস্থা অনেকটাই বদলেছে। আমূল বদলেছে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার নিরাপত্তাও। বিধানসভায় এখন বাজেট অধিবেশন চলছে। গত সপ্তাহে অর্থ-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বাজেট-পেশের পরে শনি ও রবিবার-সহ যে চার দিন ছুটি ছিল, তখনই পুলিশের পরামর্শে ক্যামেরা বসিয়েছে পূর্ত দফতরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ। পুলিশ সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের দু’পাশের দেওয়ালে দু’টি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ওই ঘরের পাশেই তাঁর সচিবদের ঘরে ‘মনিটর স্ক্রিন’ বসানো হয়েছে।
তৃণমূলের আমলে বিধানসভার সুরক্ষা সম্পর্কিত কাজের দায়িত্ব ক্রমে কলকাতা পুলিশের হাতে চলে যায়। স্পিকারের তত্ত্বাবধানে কলকাতা পুলিশ বিধানসভা ভবনকে কার্যত ঘিরে রাখে। ভিতরেও ভিভিআইপি করিডরে গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন শুরু হয়। ওই করিডরের এক দিকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক পাশের ঘরটি বরাদ্দ ছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরে থেকে ঘরটি বন্ধ। এর পাশে চন্দ্রিমা, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং পুর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘর। ঘরগুলির সামনে যে বারান্দা, তা-ও লোহার জাল দিয়ে ঘেরা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢোকার যে মূল দরজা, সেখানে বহু দিন আগেই নজরদারি ক্যামেরা বসানো রয়েছে।
অধিবেশন চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় এলে ওই করিডর চলে যায় তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে। সেখানে মন্ত্রী, বিধায়কদের যাতায়াতও নিয়ন্ত্রণ করেন পুলিশকর্মীরা। শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার কারণে বিধানসভায় তাঁর যাতায়াতের পথও এখন বদলে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন ওই জোড়া ক্যামেরা, সে প্রশ্নে বিধানসভায় ভিভিআইপি-দের সুরক্ষার ব্যবস্থাপনায় যুক্ত এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “মমতা অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের মতো নন। তিনি বিধানসভায় এলে দলের মন্ত্রী, বিধায়ক ও নেতাদের ডেকে কথা বলেন। কখনও কখনও তাঁরা দলবদ্ধ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে যান। তাই এমন ব্যবস্থা থাকলে ক্ষতি কী?”
প্রসঙ্গত, নিরাপত্তারক্ষীদের আচরণ নিয়ে অভিযোগ ওঠায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিরোধী বিধায়কদের নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের বিধানসভার বাইরে রাস্তার পাশে বসে থাকতে হয়। বিরোধীদের তরফে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হলেও এখনও অন্যথা হয়নি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)