ফাইল চিত্র।
অভিযোগ যখন উঠেছিল, তিনি ছিলেন তৃণমূলের অন্যতম সেনানী। শিবির বদল করে মুকুল রায় এখন বিজেপি নেতা। সারদা মামলায় সিবিআই তাঁকে রাজসাক্ষী করতে চায় বলে ওই তদন্ত সংস্থারই একটি সূত্র জানিয়েছে। কিছু সিবিআই-কর্তার দাবি, এই বিষয়ে মুকুলবাবুর সঙ্গে তাঁদের কথাও হয়েছে, তবে মুকুলবাবু এখনও রাজি হননি। মনস্থির করার জন্য তিনি সময় চেয়েছেন বলেও সিবিআইয়ের ওই কর্তাদের দাবি।
মুকুলবাবুর বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরে এক ব্যক্তি জানান, তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে ফোন করবেন। কিন্তু মুকুলবাবু রাত পর্যন্ত ফোন করেননি। তাঁর মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।
আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, কোনও মামলায় জড়িত হিসেবে নাম উঠে আসা ব্যক্তিকে রাজসাক্ষী করতে গেলে আদালতে আবেদন করতে হয় তদন্তকারী সংস্থাকে। তবে তার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাজি হতে হবে। আইনজীবী দীপনারায়ণ মিত্র জানান, আদালতে চার্জশিট পেশের আগেই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেবেন রাজসাক্ষী। সেই বয়ান খামে সিলবন্দি করে তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হবে। চার্জশিট পেশ করার সময় সেই সিল করা খাম তথ্য হিসেবে জমা দিতে হবে আদালতে। দীপনারায়ণবাবুর কথায়, ‘‘যিনি রাজসাক্ষী হবেন, তাঁর নাম চার্জশিটে থাকবে। শুধু ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তারা কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চাইছে না বলে তদন্তকারী সংস্থা আদালতকে জানাবে। সেই রাজসাক্ষীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা ঠিক করবেন বিচারকই।’’
আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী জানান, বিচারকের সামনে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ নম্বর ধারায় নিজের বয়ান নথিভুক্ত করবেন রাজসাক্ষী। সাক্ষী হিসেবে তিনি তাঁর বয়ান দেবেন মানেই যে সেই মামলায় তাঁকে কখনও গ্রেফতার করা যাবে না— এমনটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। তবে সাধারণ ভাবে রাজসাক্ষীকে গ্রেফতার করার উদাহরণ প্রায় নেই।
মুকুলবাবুকেই রাজসাক্ষী করার উদ্যোগ কেন? সিবিআইয়ের দাবি, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন নিজে বহু বার মুকুলবাবুর নাম করেছেন। কাশ্মীর থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিলে সুদীপ্ত, তাঁর সহযোগী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁদের গাড়িচালক অরবিন্দ সিংহকেও গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশ। সিবিআইয়ের দাবি, তারা তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পরে অরবিন্দ এসে জানিয়েছিলেন, সুদীপ্ত কলকাতা ছাড়ার আগে মুকুলবাবুর সঙ্গেই দেখা করেন। এমনকি সিবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী, কলকাতা থেকে কাশ্মীর— গোটা রুটেই মুকুলবাবুর সঙ্গে সুদীপ্ত যোগাযোগ রেখেছিলেন বলে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন অরবিন্দ।
তদন্তকারীদের আরও দাবি, সারদা মামলায় যখন যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, প্রায় সকলেই মুকুলবাবুর নাম করেছেন এবং এই মামলায় অন্য যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁদেরও বেশির ভাগই মুকুলবাবুর নাম করেন।
রাজীব কুমারের সঙ্গে সিবিআইয়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে লিখিত হলফনামা দিয়ে সিবিআই জানিয়েছে, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল প্রার্থীদের (প্রার্থী উপেন বিশ্বাস ছাড়া) প্রত্যেককে ২৫ লক্ষ টাকা দেন মুকুলবাবু এবং সেই টাকা সুদীপ্তের কাছ থেকে এনে দিয়েছিলেন এক প্রাক্তন পুলিশকর্তা। যিনি পরে এই মামলায় জেলও খেটেছেন।
সিবিআই-কর্তাদের কথায়, সারদা মামলায় তদন্তের প্রায় প্রতিটি ধাপে উঠে এসেছে মুকুলবাবুর নাম। এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, এখন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে বয়ান দিয়েছেন। ফলে, এই মামলায় তাঁর থেকে বেশি তথ্য সম্ভবত আর কারও জানা নেই। তিনি রাজসাক্ষী হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে সুবিধাই হবে সিবিআইয়ের।
সারদা কেলেঙ্কারির গোটা পর্বে মুকুলবাবু কার্যত ছিলেন তৃণমূলের দু’নম্বর। ফলে, সারদা এবং অন্যান্য বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার সঙ্গে দলের কেউ জড়িয়ে থাকলে তা সব চেয়ে মুকুলবাবুই ভাল জানেন বলে তদন্তকারীদের অভিমত। এখন তিনি বিজেপিতে। তাই রাজসাক্ষী হয়ে তথ্য দিতে মুকুলবাবু রাজি হয়ে যাবেন বলেই আশা করছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy